কোকোর মৃত্যুর রহস্য ও এহসানুল হক মিলনের মনোনয়ন

চাঁদপুর-১ আসনে বিএনপির সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এহসানুল হক মিলনকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি মোশাররফ হোসেনকে। এবার বিএনপির মেনোনয়ন নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে, মনোনয়ন বাণিজ্যেরও অনেক অভিযোগ, তবে সবচেয়ে বড় বিতর্ক হলো মিলনকে বাদ দিয়ে মোশাররফকে মনোনয়ন দেওয়া। এহসানুল হক মিলন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ব্যাপক আলোচিত ছিলেন, এলাকায়ও তুমুল জনপ্রিয় তিনি। অনেক মামলাও তাঁর বিরুদ্ধে এবং অনেক হয়রানির শিকারও হতে হয়েছে তাঁকে। তাই, এহসানুল হক মিলনেরও চরম শত্রুও তাঁর মনোনয়ন না পাওয়ায় অবাক হয়েছেন। বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন মিলনের বদলে অপরিচিত মোশাররফ হোসেনের মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে কে এই মোশাররফ হোসেন? আর কীভাবে তিনি বিএনপির ওপর এত প্রভাবশালী হলেন মিলনকে সরিয়ে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হলো?
চাঁদপুর-১ আসনে এহসানুল হক মিলনের বদলে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া মোশাররফ হোসেন হলেন মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি। আর বর্তমান বিএনপির ওপর তাঁর প্রভাবের বিষয়টি বুঝতে হলে একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে।
২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় মারা যান জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদার জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। তাঁর মৃত্যু নিয়ে অনেক রহস্য দেখা যায়। মৃত্যুর কিছুদিন আগে বড় ভাই লন্ডনে পলাতক বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সঙ্গে কোকোর বড় ধরনের বিরোধ হয়েছিল।
কোকোর মৃত্যুর পর মালয়েশিয়ায় মামলা হয়, যেখানে কোকোর মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। আর এর সঙ্গে তারেক জিয়াসহ অনেকের জড়িত থাকার কথা বলা হয়েছে।
ওই মামলার কারণেই লন্ডনে আশ্রয় নেওয়া তারেক জিয়া বিশ্বের অনেক জায়গায় যেতে পারলেও মালয়েশিয়া যেতে পারেন না।
কোকোর মৃত্যুর পর মামলা ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি মোশাররফ হোসেনকে নিযুক্ত করেন তারেক জিয়া।
মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন স্ত্রী কন্যাদের নিয়ে মালয়েশিয়ায় বসবাস করেছেন কোকো। মালয়েশিয়ায় তাঁর বিপুল সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল, যা তাঁর মা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছ থেকে পাওয়া বলেই মনে করা হয়। কোকোর মৃত্যুর ১৫ দিনের মধ্যেই মালয়েশিয়া থেকে তাঁর সব ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে ফেলা হয়। বিক্রি করে দেওয়া হয় কোকোর সব সম্পত্তিও। আর ব্যবসা ও সম্পদ বিক্রির সব অর্থই চলে যায় লন্ডনে। তারেকের লন্ডনের অ্যাকাউন্টেই সব অর্থ জমা হয়।
মালয়েশিয়ায় থাকা কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি তাঁর কন্যাদের নিয়েও কিছুদিনের মধ্যে লন্ডনে পাড়ি জমান। অথচ ওই সময় তাঁর দুই মেয়েরই মালয়েশিয়ার স্কুলে মাঝামাঝি সময় চলছিল। এরপর থেকে লন্ডনে তারেকের দয়ার ওপরই চলছেন কোকোর স্ত্রী, সন্তানরা।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় কোকোর সব সম্পত্তি দখলে তারেক জিয়াকে সহায়তা করেছেন সেই মোশাররফ হোসেন। মালয়েশিয়ার মোশাররফ তারেক জিয়ার সব কিছুরই খবর জানেন। কোকোর হত্যাকাণ্ড, সম্পদ কুক্ষিগত করা সবকিছুরই সাক্ষী মোশাররফ।
প্রায় ১৯ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় আছেন মোশাররফ হোসেন। চাঁদপুরের সঙ্গে তেমন কোনো সম্পর্কই নেই তাঁর। কিন্তু শুধুমাত্র মালয়েশিয়া-কাণ্ডের কারণেই এহসানুল হক মিলনের মতো বিএনপির হেভিওয়েট ও তুমুল জনপ্রিয় নেতাকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মোশাররফ হোসেনকে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, মোশাররফকে খুশি রাখা তারেক জিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর তারেক জিয়া ব্লাকমেইলেরও সুযোগ আছে মোশাররফের। কারণ, মোশাররফই জানে কোকোর মৃত্যুর রহস্য এবং সেখানে তারেক জিয়ার সংশ্লিষ্টতা। সে ভালোভাবেই জানে কোকোর সম্পদ বিক্রির বিপুল অংকের টানা কীভাবে লন্ডনে গেল, তারেকের মাধ্যমে আত্মসাৎ হলো। মোশাররফকে ম্যানেজ করা তারেক জিয়ার জন্য জরুরি ছিল বলেই মিলনকে বাদ দিয়ে চাঁদপুর-১ দেওয়া হয়েছে মোশাররফকে।