জোটে কে কত আসন পাচ্ছে

ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীকে ২০টি আসন দিয়েছে বিএনপি। তবে ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির আসন বণ্টন সুরাহা এখনো হয়নি।
গতকাল সোমবার (২৬ নভেম্বর) রাত ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জামায়াত ছাড়াও ঐক্যফ্রন্টকে ১৯ ও এলডিপিকে ৪টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির নীতি নির্ধারকরা গতকাল দিনভর জোটের শরিক ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেন। ঐক্যফ্রন্ট নেতারাও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন।
জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে গণফোরামকে সর্বোচ্চ ১০ আসন ছাড়তে পারে বিএনপি। এ ছাড়া নাগরিক ঐক্যকে ২-৩টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জেএসডি) একটি এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকেও একটি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। জামায়াত ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিএনপি তাদের ২০টির বেশি আসন ছাড়তে রাজি হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, শরিকদের সঙ্গে আলোচনা প্রায় শেষ। কিছু আলোচনা বাকি আছে। তাও শেষ হয়ে যাবে।
বিএনপি ২৪০টি আসনে প্রার্থী দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শরিকদের সর্বোচ্চ ৬০ আসন দেবে।
এর মধ্যে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো পাচ্ছে ৪০ থেকে ৪২টি আসন। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দলগুলো পাচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টি আসন।
২০ দলকে বিএনপি ৪০ থেকে ৪২টি আসন দেবে এটি মোটামুটি নিশ্চিত। জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে অনেকটা সমঝোতা হয়ে গেছে। তবে শরিকদের দাবি আরও চার-পাঁচটি আসন তাদের ছেড়ে দেয়া হোক।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন পাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি ২৪টি আসন পাচ্ছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাচ্ছে এলডিপি। দলটি চারটি আসন পাচ্ছে।
এছাড়া বিজেপিকে একটি, এনপিপিকে একটি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিকে একটি, খেলাফত মজলিসকে একটি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামকে একটি আসন দেয়া হবে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, বিএনপি এখন পর্যন্ত ২৫টি আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে। জামায়াত আরও কয়েকটি আসনে ছাড় পেতে চেষ্টা করছে। তার দাবি, শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০টি আসন পেতে পারে।
জোটের মনোনয়নের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গণমাধ্যমে বলেন, বিএনপির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। জোট ও ফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা করে বাকিগুলো চূড়ান্ত করা হবে। অপেক্ষাকৃত যোগ্য, দক্ষ ও জনপ্রিয় নেতারাই দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন।
জামায়াতকে যেসব আসনে বিএনপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলো হল- ঠাকুরগাঁও-২ মাওলানা আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ মাওলানা আবু হানিফ, দিনাজপুর-৬ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, লালমনিরহাট-১ আবু হেনা মো. এরশাদ হোসেন সাজু, রংপুর-৫ অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, কুড়িগ্রাম-৪ নূর আলম মুকুল, গাইবান্ধা-১ অধ্যাপক মাজেদুর রহমান, গাইবান্ধা-৪ ডা. আবদুর রহীম সরকার, বগুড়া-৪ মাওলানা তায়েব আলী, সিরাজগঞ্জ-৪ রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-১ আবদুল বাসেত, পাবনা-৫ ইকবাল হোসাইন, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ আবদুল আলীম; খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পরওয়ার; খুলনা-৬ আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-২ শামীম সাঈদী, সিলেট-৫ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট-৬ মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম-১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আজাদ।
এলডিপিকে ৪ টি: লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (চট্টগ্রাম-১৪), মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১), আবদুল করিম আব্বাসীকে (নেত্রকোনা-২) আসনে মনোনয়ন দেয়া হবে।
তবে দলটির পক্ষ থেকে আরও কিছু আসনের জন্য জোর প্রচেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। এর মধ্যে রয়েছে-এম ইয়াকুব আলী (চট্টগ্রাম-১২) ও অ্যাডভোকেট মঞ্জুর মোর্শেদ (ময়মনসিংহ-১০) অন্যতম।
জাতীয় পার্টি জাফর ২টি: জাপা (জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. টিআই ফজলে রাব্বী (গাইবান্ধা-৩), দলের মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার (পিরোজপুর-১) আসনে জোটের মনোনয়ন পাচ্ছেন।
জমিয়তকে ২ টি: জমিয়তে ওলামায়ের মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস (যশোর-৫) আসনে জোটের হয়ে নির্বাচন করবেন। একই দলের শাহীনুর পাশা চৌধুরী (সুনামগঞ্জ-৩) আসনে প্রার্থী হবেন।
বিজেপিকে ১ টি: বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপিকে একটি আসন দেয়া হচ্ছে। দলটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ (ভোলা-১) আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন এটি মোটামুটি নিশ্টিত। এই আসন থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন পার্থ।
কল্যাণ পার্টিকে ১ টি: কল্যাণ পার্টিকে একটি আসনে ছাড় দেবে বিএনপি।দলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম (চট্টগ্রাম-৫) আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন। তবে ওই আসনে বিএনপির হেভিওয়েট একাধিক প্রার্থী রয়েছেন।
জাগপা ১ টি: জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপাকে এবারের নির্বাচনে মূল্যায়ন করতে চায় বিএনপি। জাগপার প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধান ২০ দলীয় জোট গড়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছেন। শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানকে (পঞ্চগড়-২) আসন দেয়া হচ্ছে এটি মোটামুটি নিশ্চিত।
পিপলস পার্টিকে ১ টি: মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের রিটা রহমান (নীলফামারী-১) আসনে জোটের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে।
মাইনরিটি জনতা পার্টি ১টি: বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডল (যশোর-৪) থেকে জোটের হয়ে নির্বাচন করবেন। সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেন, তাকে মৌখিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। আজ মনোনয়নের চিঠি পেলে নিশ্চিত করতে পারব।
খেলাফত মজলিস ১টি: খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের (হবিগঞ্জ-৪) আসন থেকে জোটের হয়ে নির্বাচন করবেন।
এনপিপিকে ১টি: এনপিপির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল-২) আসন থেকে জোটের মনোনয়ন পাবেন।আরও যারা আসন চাইছেন। সাম্যবাদী দল সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইদ আহমেদ (নারায়ণগঞ্জ-৫), বাংলাদেশ লেবার পার্টি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান (পিরোজপুর-১) আসনে মনোনয়ন চাইছেন। তবে তাদের নিশ্চিত করেনি বিএনপি।