English Version
আপডেট : ২৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০৮:৫৫
সূত্র:

মূল দাবি থেকে ‘সরে আসছে’ ঐক্যফ্রন্ট!

মূল দাবি থেকে ‘সরে আসছে’ ঐক্যফ্রন্ট!

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও আসন্ন নির্বাচনী ইশতেহারে এ অঙ্গীকার থেকে ‘সরে আসছে’ বিএনপি ও তাদের নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।  খবর বার্তা সংস্থা ইউএনবি’র।

জোটের নির্বাচনী ইশতেহারের খসড়া প্রস্তুত করছেন এমন কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলেন, তারা নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে এবং একটি শক্তিশালী নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন, যাতে জনগণ যেকোনো নির্বাচনে অবাধে তাদের ভোট দিতে পারে এবং জনগণের ভোটের অধিকার ‘পুনরুদ্ধার’ করা যায়।   তারা জানান, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ‘ভিশন-২০৩০’ এবং ঐক্যফ্রন্টের ১১ দফা লক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে এবং জোটের অংশীদারদের পরিকল্পনা ও প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে তারা ইশতেহার প্রস্তুত করছেন, যেখানে নির্বাচনে জয়ী হলে সরকারের প্রতিশ্রুতিসমূহের বর্ণনা থাকবে।

ডিসেম্বরে প্রথম সপ্তাহে ইশতেহারের চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ করা হবে।

ইতিমধ্যে গত বৃহস্পতিবার ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার খসড়া কমিটির সদস্যরা প্রথম বৈঠক করেছেন এবং তারা জোটের অংশীদারদের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ইউএনবিকে বলেন, এখন বাংলাদেশে কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই। সে জন্য, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের ইশতেহারে কোনো অঙ্গীকার করার বিষয়ে আলোচনা করিনি।

ইশতেহার সম্পর্কে তিনি বলেন, সুশাসন, সরকারের দায়বদ্ধতা এবং কার্যকর সংসদ নিশ্চিত করার ওপর তারা প্রথমে গুরুত্ব দেবেন। ‘আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দেশে সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা নিশ্চিত করার বিষয়ে অঙ্গীকার করব। এছাড়া বিরোধী দলগুলো যাতে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ব্যবহার করতে পারে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করব।’

বিএনপি নেতা বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে যুব সমাজের উন্নয়ন এবং তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে। যেহেতু সব যুবককে চাকরি দেয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না, সে জন্য তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, উৎসাহ-অনুপ্রেরণা এবং সহায়তা দেয়ার অঙ্গীকার করা হবে, যাতে তারা উদ্যোক্তা হতে পারেন।

মওদুদ বলেন, তারা আইসিটি খাতকে আরও সম্প্রসারণ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করবেন এবং এক্ষেত্রে যুবকদের আরও বেশি অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

তিনি বলেন, তারা কৃষি খাতের উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেবেন। ‘এই খাতের সম্প্রসারণ এবং কৃষকদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে যথাযথ নজর দেয়া হয়নি। সে জন্য কৃষিখাতের সম্প্রসারণের জন্য আমরা আমাদের বিস্তারিত পরিকল্পনা বর্ণনা করব।’

মওদুদ বলেন, তারা শিক্ষা খাতের উন্নয়ন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের বিষয়েও গুরুত্ব দেবেন।

এছাড়া তিনি বলেন, আর্থিক খাতের দ্রুত অগ্রগতি এবং ব্যাংক ও শেয়ার বাজারের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য তাদের অনেক পরিকল্পনা ও প্রস্তাব রয়েছে।

বিএনপির এ নেতা বলেন, ২০১৭ সালের মে মাসে তাদের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ২০ দলের ‘ভিশন ২০৩০’ উপস্থাপন করেছিলেন, যাতে তারা বাংলাদেশকে কী অবস্থায় দেখতে চান সে বিষয়ে বর্ণনা ছিল। ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ভিশন ২০৩০’এর প্রতিফলন থাকবে।

গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম শফিক উল্লাহ বলেন, তারা এখন জোটের বিভিন্ন দলের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছেন এবং এ মাসের মধ্যে খসড়া ইশতেহার তৈরির কাজ সম্পন্ন করবেন।

‘পরে আমরা এটি নিয়ে জোটের অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করব। এরপর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশ করার আগে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি এটি চূড়ান্ত করবে,’ বলেন তিনি।

মওদুদের মতো শফিকও বলেন, নির্বাচনের সময় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইশতেহারে অঙ্গীকার করার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।

তিনি বলেন, তারা আইনের শাসন ও সুশাসন নিশ্চিত করা এবং শ্রমিক ও কৃষকসহ সব মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার ওপর গুরুত্ব দেবেন।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ২০ দলের ‘ভিশন ২০৩০’তে অনেক ভালো ধারণা ও প্রস্তাব রয়েছে। তারা ‘ভিশন ২০৩০’ এবং ঐক্যফ্রন্টের ১১ দফা লক্ষ্যের ভিত্তিতে ইশতেহার তৈরি করবেন।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও এলপিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বলেন, একটি পৃথক নির্বাচনী ইশতেহার উপস্থাপন করার কোনো পরিকল্পনা এখনও তাদের নেই, কারণ ‘ভিশন ২০৩০’ তাদের মূল ইশতেহার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা বলেন, তারা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করার বিষয়ে তাদের ঘোষণায় কিছু প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসবেন।

এছাড়া তিনি বলেন, তারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ বছর করা এবং সব স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনার পর কোটা পদ্ধতি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন।   ঐক্যফ্রন্টের নেতা বলেন, ‘আমরা কোনো মেগা প্রকল্প বন্ধ না করা এবং ইউটিলিটি সেবাগুলোতে শুল্ক না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেব।’