'কাউকে চিনতে পারছেন না সৈয়দ আশরাফ'

কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছেন। বর্তমানে তাঁর অবস্থা খুবই গুরুতর— এমটাই জানিয়েছেন তাঁর ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, তাঁর (সৈয়দ আশরাফ) শারীরিক অবস্থা এতটাই নাজুক যে তিনি কাউকে চিনতে পারছেন না। অবস্থা এমন যে এ সময়ে তাঁর রাজনীতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। আমরা তাই এখন তাঁর রাজনীতিতে ফিরে আসার চেয়ে চিকিৎসা নিয়েই বেশি ভাবছি।
গতকাল রবিবার কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জেলহত্যা দিবসের আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলাম তাঁর ভাইয়ের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার কথা জানান।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, তাঁর এই অসুস্থ ভাইটাকে নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে মিথ্যা প্রচারণা ও গুজব ছড়ানো হচ্ছে। প্রকৃত সত্যটা প্রকাশ করা হচ্ছে না। আমি মনে করি, এসব আমার ভাইকে নিয়ে ষড়যন্ত্র ও স্বার্থসিদ্ধির অংশ হিসেবে করা হচ্ছে।
তাঁর অসুস্থতার খবর গোপন করে বলা হচ্ছে, তিনি কয়েক দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে রাজনীতিতে ফিরে আসবেন। আসলে এগুলো মিথ্যা কথা। তিনি এ অবস্থায় নেই। আমি তিন দিন আগে ব্যাংকক থেকে এসেছি, তিনি আমাকে চেনেন না, তাঁর মেয়েকে চেনেন না, তাঁর ভাই-বোনদের চেনেন না।
তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন, এ ধরনের মিথ্যা বা গুজব যারা রটাচ্ছে এগুলোর প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলাম বলেন, এসব না করে আমাদের উচিত তাঁর জন্য দোয়া করা, যেন তিনি আমাদের দোয়ায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। রাজনীতি করার চেয়ে তাঁর সুস্থতা আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এসব গুজব যারা ছড়াচ্ছে তারা আমার ভাইয়ের ভালো চায় না।
সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলাম জেলহত্যার দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করে বলেন, ১৯৭৫ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে আমি বাবাকে দেখতে জেলখানায় গিয়েছিলাম। তিনি এ সময় আমাকে বলেছিলেন, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমার বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু শেষে বাবার কথা সত্য প্রমাণিত হলো।
সৈয়দ আশরাফ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভাই হলেও তিনি আমাদের পরিবারে বাবার ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর কাছ থেকে আমি নৈতিকতা, আদর্শ, সততা সবই শিখেছি। সৈয়দ আশরাফ একজনই। তিনি দেশকে অনেক কিছু দিয়েছেন। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। বৈষয়িকতা তাঁকে টলাতে পারেনি।
অর্থের কোনো মোহ ছিল না তাঁর। তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি নিজেই। একদিন বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা হবে, তখন তিনি তাঁর কর্মে বাবা সৈয়দ নজরুল ইলামকেও ছাড়িয়ে যাবেন। তিনি হবেন ইতিহাসের মহানায়ক।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মনে করছে, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যদি কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে প্রার্থী না হন, তাহলে তাঁর ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শাফায়াতুল ইসলাম নির্বাচন করতে পারেন। এ লক্ষ্যে তিনি সম্প্রতি এলাকায় আসা-যাওয়া শুরু করেছেন।
তবে এই প্রথম তিনি তাঁর নিজ এলাকায় কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন। তবে সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলাম নিজের মুখে এখন পর্যন্ত এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দেননি।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. রুহুল আমিন খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান, কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সুলতানা রাজিয়া, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ সাদী, জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক এনায়েত করিম অমি, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বিলকিস বেগম, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান, জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাসুম খান, ডা. সুজিত কুমার দাস, হোসেনপুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা সারওয়ার, সাকা উদ্দিন আহমেদ রাজন প্রমুখ।