English Version
আপডেট : ৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০১:৫৯
সূত্র:

অসন্তুষ্ট বিএনপি এখন কী করবে?

অসন্তুষ্ট বিএনপি এখন কী করবে?

গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের ২৩ নেতা সংলাপে অংশ নেন। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২১ নেতা সংলাপে অংশ নেন। বাংলাদেশে সরকারের সাথে সংলাপের ফলাফল নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুল শরিক বিএনপি এখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছে। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।

প্রতিবেদন বলা হয়েছে, দলটির নেতারা বলেছেন, তফসিল পিছিয়ে এই সময়ের মধ্যে তারা সরকারের সাথে ছোট পরিসরে আলোচনার মাধ্যমে তাদের নেত্রীর মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে একটা সমাধান চান। বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট তাদের দাবিতে কর্মসূচিও অব্যাহত রাখার কথা বলছে।

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, বিরোধী জোটের দাবি নিয়ে তাদের আর কিছু করার নেই।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতাদের সাথে সাড়ে তিন ঘন্টা ধরে সংলাপ করেছেন।

বিএনপির আশার মুকুল

সংলাপ নিয়ে আশা জাগলেও এখন সেই আশার মুকুল ঝরে যেতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এই বক্তব্য তুলে ধরেন।

তিনি সংলাপে তাদের নতুন জোট ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধিদলে ছিলেন না।

তবে বিএনপি নেতাদের যারা সংলাপে গিয়েছিলেন, গণভবনে সংলাপ শেষে তাদের চোখে মুখে অসুন্তুষ্টির ছাপ লক্ষ্য করা গেছে।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, তারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি।

যদিও ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, ভাল আলোচনা হয়েছে।

এদিকে আরও কয়েকটি দলের সাথে সংলাপ শেষে ৮ই নভেম্বরের পর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

এখন এই তফসিল ঘোষণা পিছিয়ে দেয়ার দাবিকে সামনে আনতে চায় বিএনপি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকেই তফসিল পিছিয়ে তাদের মুল দাবিগুলোতে সমাধান চান।

‘আমাদের মুল বিষয়টা ছিল যে, আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের জন্য একটা নিরপেক্ষ সরকার, এ ব্যাপারে কোন প্রতিশ্রুতিতো আসেনি। বরং যেটা এসেছে, সেটা হচ্ছে সংবিধান অনুযায়ীই সবকিছু হবে। এটা আমার কাছে মনে হয় যে আবার আলোচনা করবেন হয়তো, করতে পারেন। কিন্তু সমস্যার সমাধানটা এটার মধ্যে আসছে না।’

‘সরকারের দায়িত্ব হবে, এই বিষয়গুলো প্রাথমিকভাবে দেখা। আর এর জন্য সময় নিতে নির্বাচন কমিশনের সাথে আলাপ করে তফসিলটা পিছিয়ে দেয়া। তাহলে সেই সময়টুকুও পাবে না। আর মানুষের মাঝে যতটুকু প্রত্যাশা আছে যে, একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হবে, সেটার কোন সমাধান হবে না।’

বিএনপি তাদের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ৬ই নভেম্বর ঢাকায় জনসভা করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কথাও বলেছে।

বিএনপি এই সংলাপকে ব্যর্থ বলছে না কেন?

যদিও দলটি মনে করছে, সংলাপে তাদের দাবিগুলো কার্যত নাকচ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সংলাপ ব্যর্থ হয়েছে, সেটা তারা বলতে রাজী নয়। তারা সরকারের সাথে আলোচনার পথ খোলা রাখতে চাইছে বলে মনে হয়।

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির আন্দোলন যে সহিংস রুপ নিয়েছিল। সেই দায় এখনও বিএনপিকে বইতে হয়। দলটি এবার সে ধরনের পরিস্থিতিতে যেতে চায় না। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও একটা ইতিবাছক ভাবমূর্তি তৈরি করতে চেয়েছে। তাতে তারা অনেকটা সফল হয়েছে বলে দলটি মনে করে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংলাপে সমাধান না হলেও এখনও তারা সরকারের কোর্টে বল দিয়েছেন, সরকারকেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

‘সরকার সংবিধানের বাইরে যাবেন না বললেও এটাও বলেছেন যে, এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আমার মনে হয়, এখনই এটাকে ক্লোজ করা ঠিক হবে না। আমরাতো আশাবাদী। এই আলোচনার ব্যাপারটা আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বলছি। শেষ সময়ে এসে তারা জবাব দিলেন বা এগিয়ে এলেন, তখন সময় খুবই কম। তো এখন তাদের দায়িত্ব হবে যে, তারা একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে চান কিনা?’

সংলাপ নিয়ে কি দুই পক্ষই চাপে ছিল?

বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, সরকার এবং বিরোধী জোট, দুই পক্ষেরই রাজনৈতিক কারণে এই সংলাপ প্রয়োজন ছিল। নির্বাচনের আগে দু'পক্ষই দেখাতে চেয়েছেন যে, তারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চেয়েছিলেন।

ক্ষমতাসীন আওয়মী লীগ এবং বিরোধীদল বিএনপি দুই দলেই সংলাপ বিরোধী অংশও রয়েছে।

তবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে লোকদেখানো এই সংলাপ হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী।

‘ফলাফলের কোন পরিবর্তন হয় নাই। কিন্তু নির্বাচনের দিকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ফলাফল পরিবর্তন না হলে, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে ছাড়া বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়া মুশকিল হবে।’

আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে বলেছেন, বিএনপি সংলাপে যোগ দিয়ে সংবিধানের ভিতরে থেকে কোনো প্রস্তাব দিতে পারেনি।ফলে তাদের আর কিছু করার নেই।

দলটির সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, এখন নির্বাচনের দিকেই তারা এগুবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অবশ্য আজ বলেছেন যে, বিএনপিসহ ঐক্যজোট চাইলে আরও আলোচনা হতে পারে। কিন্তু দুই পক্ষের ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে বিশ্লেষকদের সন্দেহ রয়েছে।