English Version
আপডেট : ৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০১:৪৩
সূত্র:

সংলাপ শেষে যা বললেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী

সংলাপ শেষে যা বললেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী

আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের সংলাপ শেষ হয়েছে। শুক্রবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সংলাপ শুরু হয়।

সংলাপ শেষে প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে গণভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা খুশি হয়েছি এই জন্য যে আমাদের কথাগুলো পরিষ্কারভাবে বলতে পেরেছি। সেই ভিত্তিতে কয়েকটা কথায় মতৈক্য হয়েছে।’

সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিকল্প ধারার সভাপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের কথাগুলো তারা গ্রহণ করেছে বলে আমাদের প্রতিয়মান হয়েছে।’

বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সংলাপ খুব ভালো হয়েছে। এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব।’

যুক্তফ্রন্টের সাত দফা দাবির মধ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ভোটের কথা ছিল, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মান্নান বলেন, ‘সেই দাবি তো আমাদের আছেই। কিন্তু আমরা নির্বাচনে যাব।’

এর আগে গণভবনে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে যুক্তফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন জোটের নেতাদের সংলাপ হয়।

যুক্তফ্রন্টের দাবিগুলো হল:

নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া না গেলেও নিষ্ক্রিয় করা: নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অর্থাৎ সবার জন্য সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সম্ভব না হলে নিষ্ক্রিয় করতে হবে। এজন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

মন্ত্রী ও এমপিদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার: নির্বাচনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কর্মচারীদের নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন শতভাগ রাষ্ট্রপতির অধীনস্থ করতে হবে। তফসিল ঘোষণার পর এমপিরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনও প্রকল্প উদ্বোধন বা প্রতিশ্রুতি যাতে না দিতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় আইন করে মন্ত্রী ও এমপিদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করতে হবে। সরকারি দলের প্রার্থীদের বিল বোর্ড, ব্যানার, পোস্টার অপসারণ করতে হবে।

জাতীয় সরকার গঠন: নির্বাচনকালীন সরকার চাই। জাতীয় সরকার গঠন: প্রয়োজনে এক দিনের জন্য সংসদ ডেকে জাতীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। অথবা মন্ত্রিপরিষদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা জোট থেকে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েও একটি সন্তোষজনক নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। নির্বাচনে সকল প্রকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার অথবা বর্তমান সরকারের নির্বাচন বিষয়ে সম্পূর্ণ ক্ষমতা সীমিত করতে হবে।

সীমিত ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন করা: আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী আমাদের জন্য গর্বের। তারা বিভিন্ন দেশে নির্বাচনকালীন সহিংসতা রোধ ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ সুনামের সঙ্গে করে আসছে। সুতরাং নির্বাচনের আগে ও পরে যাতে শান্তি-শৃঙ্খলার বিঘ্ন না ঘটে-সেহেতু আমাদের প্রস্তাব:

ক. সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে এবং নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর পর্যন্ত মোতায়েন করতে হবে।

খ. নির্বাচনের দিন সেনাবাহিনীকে সীমিত ক্ষমতা দিতে হবে যেমন, আটক রাখার ক্ষমতা ও তাদের ভোট কেন্দ্রে থাকতে দিতে হবে। যাতে করে ভোটের দিন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয় এবং ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন।

ইভিএম বাতিল: আধুনিক এবং বিজ্ঞানমনস্ক নির্বাচনে আমাদের অনেক আগ্রহ আছে, কিন্তু ইভিএম সম্পর্কিত যেসব প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা অর্জন প্রয়োজন তা আমাদের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথেষ্ট নেই। সেজন্য এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সঠিক হবে না বলে আমরা মনে করি।

রাজবন্দীদের মুক্তি: নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কারণে আটক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।

নির্বাচন সম্পর্কিত মামলা প্রত্যাহার: নির্বাচন সম্পর্কিত মামলা নির্বাচনের পর এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন অতি সত্বর প্রণয়ন করতে হবে।

বৈঠক শেষে বের হয়ে যাবার সময় যুক্তফ্রন্ট নেতা বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি জেবেল রহমান গাণি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে আলোচনা করেছেন। তিনি আমাদের কথা ধৈর্যসহকারে শুনেছেন। আমরা আশা করছি নির্বাচনে যাব।

বিকল্পধারার সহ-সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম গোলাম রেজা বলেন, দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। আমরা তার কথায় সন্তুষ্ঠু। আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধাণমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন কালীন সময়ে তফসিল ঘোষণার পর কেউ মন্ত্রী হিসেবে পতাকা ব্যবহার করবেন না। তারা শুধুমাত্র নিয়মতান্ত্রিক দাফতরির দায়িত্ব পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন।

সংলাপে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের ২৩ নেতা উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন, দলনেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, কাজী জাফর উল্যাহ, রমেশ চন্দ্র সেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, আবদুর রহমান, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জাসদের একাংশের সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল।

সংলাপে যোগ দিতে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টের নেতারা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গণভবনে হাজির হন। পরে পৌনে ৮টার দিকে তাদের সঙ্গে সংলাপে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের নেতারাই যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টের ২১ নেতা সংলাপে যোগ দেন। সংলাপে অংশগ্রহণ করা যুক্তফ্রন্টের প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন— বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী, গোলাম সারোয়ার মিলন, আবদুর রউফ মান্নান, ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ ইউসুফ, দলের সহ সভাপতি মাহমুদা চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, সম্প্রতি বিকল্পধারায় যোগদান করা সাবেক সংসদ সদস্য এইচ. এম গোলাম রেজা, মাযহারুল হক শাহ চৌধুরী, মাহবুবুর রহমান, জয় চৌধুরী, যুক্তফ্রন্টের শরীক বিএলডিপি সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, বিএলডিপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তুজা, মহাসচিব মহউর হোসাইন ঈশা, জাতীয় জনতা পার্টি চেয়ারম্যান শেখ আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ মাইনরিটি পরিষদের সভাপতি দিলীপ কুমার দাস, বাংলাদেশ লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান হামদুল্লাহ আল মেহেদী।

এর আগে বৃহস্পতিবার গণভবনে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা।

প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার সংলাপ শেষে গণভবন থেকে বেরিয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ড. কামাল হোসেন আলোচনা ভালো হয়েছেদ বলে মন্তব্য করলেও পরে বেইলি রোডে নিজের বাসায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, সংলাপে বিশেষ কোনো সমাধান তারা পাননি।