বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড ছিলো একটি আদর্শের হত্যাকান্ড : নানক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকে একটি আদর্শের হত্যাকান্ড বলে অভিহিত করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবি নানক। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্টের হত্যাকান্ডের লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশকে একটি ‘মিনি পাকিস্তান’-এ পরিণত করা। আমাদের জাতির পিতা, আদর্শের পিতা, দার্শনিক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা ছিলো একটি আদর্শের হত্যাকান্ড।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোয়িামে জাতীয় শোক দিবস স্মরণে আলোচনা সভা এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্টের পরে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করেছি। মিছিলে উর্ধ্বে গেলে ২০-২৫ থাকতো। ‘এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে’, ‘মুজিব হত্যার পরিনাম বাংলাদেশ হবে ভিয়েতনাম’, ‘খুনিদের বিচার হবে বাংলাদেশের মাটিতে’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে আমাদের সরে যেতে হতো। বিভিন্ন লিফলেট গোপনে বিভিন্ন অনুষদের সিড়িতে সাবধানে রেখে আসতাম আমরা। এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু করেছিলো ছাত্রলীগ। তবে ছাত্রলীগ কোনোদিন পিছপা হয়নি।
তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে বঙ্গবন্ধু কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর তিনিই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। তখন কোথায় ছিলেন জিয়াউর রহমান? তিনি কি দায়িত্ব পালন করেছেন? বাংলাদেশের স্বাধীনতা আলাদীনের চেরাগের দৈত্যের মতো কিংবা স্বপ্নে পাওয়া মহৌষধের মতো আসেনি বরং স্বাধীনতা পেতে এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ আত্মবলিদান দিয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে হত্যাকারীরা আস্ফালন করে, নেপথ্যের নায়কেরা আস্ফালন করে। এখন আবার আলোচনার কথা বলা হয়। কিসের আলোচনা? কার সাথে আলোচনা? ৭৫-এর খুনিদের যারা পুরষ্কৃত করেছে, যারা খুনিদের সংসদে বসিয়ে সংসদকে অপবিত্র করেছে, শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড মেরে হত্যার চেষ্টা করেছে, যারা জাতির পিতাকে স্বীকার করেনা, মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করেনা তাদের সাথে আলোচনা হতে পারেনা।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন সঠিক সময়ে সাংবিধানিক নিয়মে অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে কে অংশগ্রহণ করবে, কে করবেনা, সেটা আওয়ামী লীগের দেখার বিষয় না।
বামপন্থিরা স্বাধীনতা যুদ্ধকে ‘দুই কুকুরের লড়াই’ বলে আখ্যায়িত করেছিল বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইস্ট পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কস এবং লেনিনবাদী), পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি এগুলো সৃষ্টি করে সেদিন বামপন্থিরা পবিত্র মুক্তিযুদ্ধকে ‘দুই কুকুরের লড়াই’ বলে আখ্যায়িত করেছিলো।
ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বামপন্থিরা বিশ্বরাজনীতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বামপন্থিদের বিভ্রাট নতুন কিছু নয়। রাজনীতির বাস্তবতাকে মেনে রাজনীতি করতে পারেনি এবং শত্রু-মিত্র চিহ্নিত করতে পারেনি বলেই তারা অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে।
ছাত্রলীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটা ‘পলিটিক্যাল ইনস্টিটিউশন’। ছাত্রলীগের পুরোনো স্লোগানগুলো মানুষকে উজ্জীবিত করেছিলো স্বাধীনতা আনতে। বর্তমান সময়ে ছাত্রলীগের কাছ থেকে আমি নতুন নতুন স্লোগান দেখতে চাই। আপনাদের নতুন স্লোগান সৃষ্টি করতে হবে। সেই স্লোগানই হবে আমাদের প্রত্যয়। সেই স্লোগানের পেছনেই ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ হবে।
জাতীয় নির্বাচনে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগরের নতুন নেতৃত্ব এসেছে। তাদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ১১তম জাতীয় নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আলোচনায় মুহাম্মদ সামাদ বলেন, মানুষের মন ভুল পথে চালিত হতে পারে, আবেগ ভুল পথে চালিত হতে পারে। তবে রক্তের ধারা, উন্মাদনা কখনও ভুল পথে যায়না। এ কথা আমি এ কারণে বললাম যে, দেশরতœ শেখ হাসিনা যে কমিটি গঠন করেছেন, সেই কমিটির নেতৃবৃন্দের এই কথা মনে রেখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ ই আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগদানের কথা থাকলেও আমাদের দুর্ভাগ্য যে তিনি আসতে পারেন নি। তাকে ভোর রাতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমরা এমন দুর্ভাগা যে, একজন চ্যান্সেলরকে আমরা যোগ্য সম্মান দেয়ার সুযোগ পাইনি। একথা ছাত্রলীগকে মনে রাখতে হবে।
আলোচনা সভা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন তার সম্পর্কিত সকল দলিলপত্র সযত্নে সংরক্ষণের দাবি জানানো হয়। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বিশ্বের বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের বিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়।
আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।