আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন বিএনপির সেই আলোচিত লবি
হাওয়া ভবনের লোক হিসাবে পরিচিত, বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা, খুলনা সদর আসনের সাবেক এমপি আলী আসগার লবি আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন। দলে যোগদান নিয়ে দেশের বাইরে আলী আসগার লবির সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের ৩ নেতার দুই দফা বৈঠকও হয়েছে। ব্যংককে বৈঠক হয়েছে এবং ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, খুলনা আওয়ামী লীগের এমন একজন প্রভাবশালী নেতা বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, আলোচনা হয়েছে, আলোচনা চলছে, উনার মতো ক্লিন ইমেজের নেতার খুলনা আওয়ামী লীগে প্রয়োজন। তবে কবে, কখন, কোথায় দলে যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে তিনি এর বাইরে নিজ থেকে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি। জানা গেছে, স্পেনে অবস্থানরত আলী আসগার লবি লন্ডন হয়ে আগামী সপ্তাহে দেশে ফিরবেন। দেশে ফিরলেই লবির যোগদান প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। আলী আসগার লবির দেশ-বিদেশে একাধিক নাম্বারে দফায় দফায় ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। সাংবাদিক পরিচয়ে সেলফোনে মেসেজ পাঠালেও তিনি তার কোনও উত্তর দেননি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন জিয়া পরিবারের সদস্য, শীর্ষ আদম ব্যবসায়ী খুলনা সদর আসনের এমপি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান আলী আসগার লবি রাজনৈতিকভাবে খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। প্রাপ্ত সূত্র বলেছে, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি, আওয়ামী ঘরানার ব্যবসায়ী নেতা সালমান এফ রহমান এই যোগদানের বিষয়ে নেপথ্যে সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছেন। শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ী নেতা অতিসম্প্রতি অনুষ্ঠিত খুলনা মেয়র নির্বাচনের আগে থেকে লবির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন। তার হাত ধরেই খুলনায় সালাম মুর্শিদী গত ৩ মার্চ আওয়ামী লীগে সক্রিয় হয়েছেন। তবে বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার না করে সেলফোনে শনিবার এই প্রতিবেদককে সালমান এফ রহমান জানান, তার মাধ্যমে লবির যোগ দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। এর বাইরে তিনি আর কিছু বলতে চাননি। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বিনয়ের সঙ্গে বলেন, আমি দলের একজন সাধারণ কর্মী মাত্র। এটা দলের উচ্চপর্যায়ের ব্যাপার। বিষয়টা আমার জানার বাইরে। খুলনা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এই যোগদানের বিষয়ে আদৌ অবগত নন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
তবে ভিন্ন একটি সূত্র বলেছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে খুলনা সদর আসনে প্রার্থী হতে চান, এমন একজন শিল্পপতি ব্যবসায়ী মাঠ গোছানোর প্রক্রিয়া হিসেবে লবিকে তার পাশে চান। এই সম্ভাব্য প্রার্থীর ধারণা, নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থিতা পেলেও কাঙ্ক্ষিত দলীয় সহযোগিতা নাও পেতে পারেন। তাই তিনি লবির ক্লিন ইমেজের পাশাপাশি তার লোকজনের হেল্প নিতেই তিনি দলকে ভারি করতে চান। নিজস্ব বলয় তৈরি করতেই তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছেন, এমন ধারণা খুলনা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের। সূত্রমতে, সদ্যসমাপ্ত খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি নেতা লবির সঙ্গে দেশের বাইরে আওয়ামী লীগের একাধিক বৈঠকে নতুন করে সখ্য তৈরি হয়, এসব বৈঠকের পর লবি তার বলয়ের সব লোকজনকে নিষ্ক্রিয় করে দেন এবং মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দেন। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনী খরচ লবির হাতে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়া হলেও লবি তা বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দেন। নিজ থেকেই তার সমর্থকদের নির্বাচনী খরচ চালাতে এখনও সক্ষম, রসিকতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাদের জানিয়ে দেন তিনি। লবির যোগদানের বিষয়ে খুলনা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ওই নেতা গত বুধবার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে নিজ অফিসে আলাপকালে বলেন, লবির বিষয়টা সেন্সেটিভ, আলোচনা চলছে। কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ব্যাংককে মিটিংয়ে লবিসহ আমরা মাত্র ৩-৪ জন ছিলাম, গণমাধ্যম তো বিষয়টা জানার কথা নয়। তিনি বলেন, সাবেক এমপি লবি খুলনার স্থানীয় বাসিন্দা, তার চরম শত্রুও তার নামে কোনও বদনাম দিতে পারবে না। তার পজেটিভ ইমেজের কারণেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ তাকে দলে নিতে আগ্রহী। তিনি আমাদের সঙ্গে এলে স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ আরও রিচ হবে। সাবেক এমপি, বিসিবির সাবেক পরিচালক আলী আসগর লবির এক সময়ের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মী কাজী মাহমুদ জানান, এই সংবাদের সত্যতা নিয়েও সন্দিহান। দলকে লবি যা দিয়েছেন তার চেয়ে পেয়েছেন অনেক বেশি। এমন সিদ্ধান্ত হবে লবির জন্য আত্মঘাতী, সরকারের শেষ সময়ে এসে আওয়ামী লীগও তাকে নিয়ে খুব বেশি লাভবান হবে বলে মনে হয় না। কাজী মাহমুদ জানান, আওয়ামী লীগের মতো পুরাতন রাজনৈতিক দল কতটা জনবিচ্ছিন্ন ও দেউলিয়াপনা অবস্থায় আছে যে, তারা এখন আমাদের দলের লোকজনকে ধরে ধরে তাদের দলে নিতে চাচ্ছে। কাজী মাহমুদ জানান, এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু জানান, সাবেক এমপি লবি বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেবেন বা দিতে পারেন, এমন কোনও তথ্য তার কাছে নেই।