তাদের হিসাব-নিকাশ পরে হবে

সেনা সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হর্তা-কর্তাদের হিসাব নিকাশ নেয়ার কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যারা গ্রেফতার করিয়েছিলেন, তাদের হিসাব নিকাশ পরে নেবো। এই কাজ কারা করিয়েছেন, সেটা আমি জানি।
সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারি করে ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে দুই বছর দায়িত্ব পালন করা ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেনা সমর্থিত বলে পরিচিত হলেও ওই সরকারের আমলে বাংলাদেশের কয়েকজন সম্পাদক এবং নাগরিক সমাজের সদস্যরা প্রভাবশালী হয়ে উঠেন। কেউ কেউ এটা ‘আমাদের সরকার’ বলেও পরিচয় দিতেন।
ওই সরকারের মেয়াদ শেষে ফখরুদ্দীন আহমদ এবং চাকরির মেয়াদ শেষে মঈন উ আহমেদ বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান। তবে তাদের বিরুদ্ধে এবং ‘আমাদের সরকার’ দাবি করা লোকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাব-নিকাশের কথা বললেন।
মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় নোবেল জয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতু বন্ধের ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন বলেও অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, একজন ভদ্রলোক যিনি বিশ্বের এত বড় বড় সব পুরস্কার পেয়েছেন তিনি একটি এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতু বন্ধের চক্রান্ত শুরু করে দিলেন। এর আগে তারা আমার এবং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণের জন্য আন্তর্জাতিক লবিষ্ট নিয়োগ করেছিলো। যখন দেখলো আমার পরিবারের কারো বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি খুঁজে পাচ্ছে না তখন পদ্মা সেতু নিয়ে চক্রান্ত্র শুরু করে দিলো।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আর আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমিও বলছি যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেনো বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।
বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিগত দিনের অগ্নিসন্ত্রাসের সময়ই গ্রেফতার হতেন। এখন তিনি গ্রেফতার আছেন এতিমদের অর্থ আত্মসাতের জন্য। এটি আদালতের সিদ্ধান্ত, এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই ১৯৯১ সালে এতিমদের জন্য টাকা এসেছে কিন্তু একটি টাকাও এতিমদের দেয়া হয়নি। এসময় খালেদা জিয়ার সন্তানদের মানি লন্ডারিংয়ের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানুষ বুঝতে পারে যে, সরকার জনগনের সেবক। এর আগে যারা ক্ষমতায় ছিলো তারা জনগণের উন্নয়ন করতে পারেনি তবে তাদের নিজেদের উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই। তারা সবসময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছে। তারা সবসময় স্বাধীনতার চেতনা নষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলো।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই নিয়ে রেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যুদ্ধ শুরুর পূর্বে এ বিষয়ে লন্ডনে ভারতীয় দুই প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এছাড়া ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণে মুক্তিযুদ্ধের সকল দিকনির্দেশনা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জানতেন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতলে পাকিস্তানি শাসকরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না এবং এর পরবর্তী আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের দিকে ধাবিত হয়ে স্বাধীনতার অর্জন করতে হবে। সেভাবেই তিনি পরিকল্পনা সাজিয়ে রেখেছিলেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী ৭১ পূর্ব সময়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীসহ সকল ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বৈষম্যের কারণেই বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে স্বাধীনতার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে একসময় স্বাধীন হবে এবং এর নাম বাংলাদেশ হবে সেটা তিনি জানতেন এবং তিনি যে ৬ দফা দিয়েছিলেন সেটার অর্থ ছিলো এক দফা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন ৬ দফার কথা উল্লেখ্য করতেন তখন এক আঙুল দেখাতেন। তার মানে তিনি বুঝাতে চাইতেন ৬ দফা মানে এক দফা। কিন্তু সেটা মুখে বলা তখন নিষেদ ছিলো।