কোন পথে আগামী দিনের রাজনীতি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত মাঠের রাজনীতিতে বিএনপিকে সুযোগ দিতে চাইছে না আওয়ামী লীগ। দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ প্রশাসনও থাকবে এ্যকশানমুডে। শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশ করার ঘোষণা দিলেও বিএনপি তা কখনোই করতে পারেনি। তাই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জেলবন্দি থাকা অবস্থায় বিএনপিকে ঢাকাসহ দেশের কোথাও বড় কোনো সভা সমাবেশ করতে দেবে না প্রশাসন।
রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নামে বিএনপি যাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি করতে না পারে এবং জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শক্ত অবস্থান নিয়ে মাঠেই থাকবে। প্রশাসন ও সরকারি দলের একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। নেতারা মনে করেন দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমুল পর্যন্ত প্রস্তুত রাখতে সারাদেশে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মিদের প্রস্তুত করছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। ক্ষমতাসীন দলের তৃণমুলে অভ্যন্তরীন বিরোধ থাকলেও দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে তৃণমুলের রাজনীতিও এখন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে। নেতারা মনে করেন, সময় এখন উন্নয়নের। তাই দেশের যে কোনো সঙ্কট মোকাবিলায় এখন প্রস্তুত আওয়ামী লীগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় আয়োজিত আওয়ামী লীগের বড় বড় সমাবেশ থেকে দলের তৃণমুলের নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে দুই হাত তুলে শপথ করে তাদের ঐক্যের কথা জানিয়েছেন দলের হাইকমান্ডকে। বুঝিয়ে দিযেছেন তারা প্রস্তুত। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ তারা অক্ষরে-অক্ষরে পালন করবেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারনীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মনে করেন দেশের বর্তমান শান্তিপূর্ণ অবস্থার অবনতি ঘটাতে সরকার বিরোধীরা সুযোগ পাবে না। সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই দেশের পরিবেশ কোনোরকম ঘোলাটে করার চেষ্টা করা হলে প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চুপ করে বসে থাকবে না। আর নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করা হলে লাভবান হবেন কারা সেটাও ভাবতে হবে। জাতীয়-আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জল। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন তাদের দলের নেতাকর্মীরা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে অনেক আধুনিক ও সুসংগঠিত। কাজেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের ক্ষমতা বিএনপির নেই। শেখ হাসিনার অধিনেই তাদেরকে নির্বাচনে আসতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিদেশিদের কাছে নালিশ দিচ্ছে। কিন্তু তারা জনগণের কাছে যাচ্ছে না। তারা আন্দোলন করতে চাইলে করুক। তবে জনগণের কাছে যেতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন করবে কি করবে না সেটা তাদের ব্যাপার। যথাসময়ে নির্বাচনের প্রক্রিয়া অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কারও জন্য নির্বাচন থেমে থাকবে না। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনকে সরকার সকল প্রকার সহায়তা করবে। নির্বাচন কমিশনার কারও কথা শুনে নির্বাচন দিবে না। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ক্ষমতাসীন দলের উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক অভিজ্ঞ নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নেতারা মনে করেন বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন গড়ে তোলার মত দল বিএনপি নয়। আন্দোলন করার মত তাদের সাংগঠনিক দক্ষতাও নেই। আইন-আদালতের বিষয় নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করার কাজটিও যে বেআইনি সেটা তারা ভালো করেই বুঝেন। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত হয়ে আসতে হবে। খালেদা মুক্তির নামে দেশে বিশৃংলার সৃষ্টি করা হলে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। আর রাজনীতির নামে মাঠ গরম করার চেষ্টা করা হলে তা রাজনৈতিক ভাবেই মোকাবেলা করবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও দমনে সরকার ও সরকারী দল প্রস্তুত। আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ডের মনোভাব নিয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রবীণ রাজনীতিক মনে করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশের উন্নয়নে নিরলশভাবে কাজ করছেন। উন্নয়নে মহাসড়কে পৌছে যাচ্ছে দেশ ও দেশের মানুষ। মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশে^র কাছে আজ সমাদৃত। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া, পদ্মাসেতু নির্মাণ করাসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অবদান চিরস্বরনীয়। আর এসব অর্জন বিএনপি নষ্ট করবে, তা হতে পারে না।
নেতারা বলেন বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি ধ্বংসাত্মাক। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ করে দেশ গড়ার রাজনীতি, উন্নয়নের রাজনীতি। উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকালে দেশের শাসন নিয়ে কে কি বলল তা নিয়ে কিছু যায়-আসেনা। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন জার্মান প্রতিষ্ঠান বেরটেলসম্যান স্টিফটুং-এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে পাঁচ স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায় রাখার বিষয়টি ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি বলেন, এটা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। জার্মান প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে অসত্য তথ্য পরিবেশন করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তরুণ সাংগঠনিক সম্পাদকরা মনে করেন, বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনের হুমকি আমলে না নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে কাজ করতে হবে। তৃণমূলের শক্তিই আওয়ামী লীগের শক্তি। সেখানে কোনোরকম বিরোধ জিইয়ে রাখা যাবে না। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে সব জেলাতেই। নেতারা মনে করেন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বিরোধপুর্ণ জেলাগুলোতে সাংগঠনিক কর্মকান্ডের দিকেই জোরদার করা উচিত। বিএনপির আন্দোলনের হুমকিতে বিচলিত নয় আওয়ামী লীগ। সরকার হটানোর মত আন্দোলন করার শক্তি-সামর্থ কোনোটাই নেই বিএনপির।
নেতারা মনে করেন গত ২০১৩-১৪ ও ১৫ সালের সময়ে আন্দোলনের নামে যে পরিমাণ জ্বালাও-পোড়াও করে মানুষ হত্যা করেছে আগামী সেদিকে এগুতে চাইলে সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে। নেতারা মনে করেন লন্ডনে আশ্রয় নেওয়া তারেক রহমানের দিকনির্দেশনা মেনে চললে ভুল করবে বিএনপির নেতারা। রাজনীতিতেও দেউলিয়া হবে বিএনপি। তাদেরকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।
খালেদা জিয়ার দীর্ঘস্থায়ী কারাবাস, হতাশায় ডুবছে বিএনপি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দীর্ঘ মেয়াদে কারাবাসের কারণে সারাদেশে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা নেমে এসেছে। একদিকে ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন, অল্প সময়ে হয়ে যাচ্ছে পাঁচ সিটি নির্বাচন, অন্য দিকে কাণ্ডারি বিহীন দলে স্তরে স্তরে বিশৃংখলা। শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃলমূল পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের গলায় ঝুলছে হাজারো মামলা। সব মিলিয়ে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জে পড়েছে জাতীয়তাবাদী দলটি। উচ্চ খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত হওয়ায় নতুন করে নতুন করে টানাপড়েনে পড়ে বিএনপি ।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বেশ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপিকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রধানত খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না; গেলে দলের নেতৃত্বে কে থাকবেন। এসব প্রশ্নের সন্তোষজনক সমাধান না এলে দীর্ঘমেয়াদে দলের ঐক্য ধরে রাখা দুরূহ হয়ে পড়বে। দলের এ সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলা করতেও নেতারা হিমশিম খাচ্ছেন।
যদিও শনিবার রাতে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী,বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া জোট শরীকরা কেউ কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।
সোয়া ১ ঘণ্টার ওই বৈঠক শেষে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা বলেন, জোটের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে ঐক্যমতে পৌঁছেছি যে, জোট প্রধান খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই কেবল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। খালেদা জিয়া ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না ২০ দলীয় জোট। তবে বৈঠকে আরো একটি সিদ্ধান্ত অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তা হলো- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে জোটের সমন্বয়ক থেকে সরিয়ে দেয়া। এর নিগুঢ় কারণ তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।
জোট নেতারা এখন সবকিছুর আগে খালেদা জিয়ার মুক্তিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে সূত্র জানায়। এদিকে ভেতরে ভেতরে নির্বাচন নিয়েও তাদের জল্পনা কল্পনার অন্ত নেই।
তবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ রেখে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে সে ব্যাপারেও প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে রয়েছে। রয়েছে মনোনয়ন এবং শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিষয়। ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়েও পরিকল্পনা আঁটছেন অনেকে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, আর বিরোধী দলে গেলে বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন এবং মন্ত্রিসভা বা সরকার পরিচালনার জন্য যোগ্য নেতা কারা। এসব ব্যাপারে বিএনপির ভেতরেও নানা আলোচনা আছে। সেসব বিষয়ে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর তরফ থেকে প্রশ্ন তোলা হতে পারে। আর এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের কাছে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজাও কৌশলগতভাবে কঠিন হবে দলটির নেতাদের জন্য। কারণ বিএনপির কোনো নেতার এ ধরনের উত্তর খুঁজতে যাওয়ার অর্থই হলো খালেদা বা তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করার ষড়যন্ত্র; যেটি সরকার চাইছে বলে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে বহুবার উঠে এসেছে। সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তারেক রহমানের পরামর্শে যৌথ নেতৃত্বে বিএনপি চলছে। তবে খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত হলে সেই ঐক্য সামনের দিনগুলোতে কতটা অটুট থাকবে তা নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে। এদিকে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এখনকার স্থায়ী কমিটির বৈঠকগুলোতে সভাপতিত্ব করছেন সবচেয়ে সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আর বাইরে দলীয় কর্মকাণ্ড তথা মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি সংশ্লিষ্টদের মতে, খালেদা জিয়ার জামিন কত দিনে হবে সেটি বলা সম্ভব নয়। ২১ আগস্টের মামলায় কী হয় সেটিও বলা মুশকিল। দলের নেতৃত্বের বিষয়টি এ মুহূর্তে বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপির বিকল্প নেতা তারেক রহমান লন্ডন থেকে দল চালাচ্ছেন। তিনি নেতৃত্ব ছাড়বেন বলে মনে হয় না। এখন তার বিচারক্ষমতা, দূরদর্শিতার ওপর নির্ভর করছে বিএনপির ভবিষ্যৎ।
কারাগারে থাকায় খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি বিএনপির জন্য বর্তমার স্থবিতাকে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন বিএনপি নেতাকর্মীসহ অনেকে। শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ এব্যাপারে বলেন, নির্বাচনে যাওয়া এবং সঠিক নেতৃত্বে দল পরিচালনাসহ বিভিন্ন ইস্যু বিএনপিকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। আর মোকাবেলা করতে না পারলে সঙ্কট আরো কঠিন হবে। এ পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে বিএনপিকে নতুন করে ভাবতে হবে। গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতে, নির্বাচনে অংশ নিয়েই বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। সরকার তাদের অনেক বড় বিপদে ফেলেছে। কোনো পথ নেই।
এই বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পরে আমরা আরো শক্তিশালীভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। সুতরাং আমরা হতাশ নই। বরং আমরা আরো বেশী ঐক্যদ্ধ হয়ে কাজ করছি এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। যার ফলে সরকারের যে নীল-নকশা ছিল, সেটা আজকে বুমেরাং হয়ে সরকারের বিরুদ্ধেই কাজ করছে।
একই বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কিমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন,বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দির কারণে সরকার আশা করেছিল বিএনপি ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু তাদের সেই আশা ভঙ্গ হয়ে গেছে। উনি(খালেদা জিয়া) জেলের বাইয়ে আসুক আর কারাবন্দি থাকুক, বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে এবং থাকবে। আর এই নেতৃত্বের ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের মধ্যে দিয়ে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা হবে।
জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছর সাজা হওয়ায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জেলে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। হাইকোর্ট জামিন দিলেও সুপ্রিম কোর্ট আগামী ৮ মে পর্যন্ত জামিন স্থগিত করে দেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া জামিন না পাওয়ার ধারণা বিএনপির পাশাপাশি জনমনেও তৈরি হয়েছে। এদিকে একই মামলায় ১০ বছর ছাড়াও অন্য একটি অর্থপাচার মামলায় তারেক রহমানের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাও উঠছে আদালতে। এ অবস্থায় আরো দীর্ঘদিন বিএনপিকে চলতে হবে খালেদা জিয়া ও তারেককে ছাড়াই। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল জানান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলেও যৌথ নেতৃত্বে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলবে। দল পরিচালনার কৌশলগত পরিবর্তন হবে না।
হতাশায় ডুবছে বিএনপি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দীর্ঘ মেয়াদে কারাবাসের কারণে সারাদেশে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা নেমে এসেছে। একদিকে ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন, অল্প সময়ে হয়ে যাচ্ছে পাঁচ সিটি নির্বাচন, অন্য দিকে কাণ্ডারি বিহীন দলে স্তরে স্তরে বিশৃংখলা। শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃলমূল পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের গলায় ঝুলছে হাজারো মামলা। সব মিলিয়ে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জে পড়েছে জাতীয়তাবাদী দলটি। উচ্চ খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত হওয়ায় নতুন করে নতুন করে টানাপড়েনে পড়ে বিএনপি ।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বেশ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপিকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রধানত খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না; গেলে দলের নেতৃত্বে কে থাকবেন। এসব প্রশ্নের সন্তোষজনক সমাধান না এলে দীর্ঘমেয়াদে দলের ঐক্য ধরে রাখা দুরূহ হয়ে পড়বে। দলের এ সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলা করতেও নেতারা হিমশিম খাচ্ছেন।
যদিও শনিবার রাতে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী,বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া জোট শরীকরা কেউ কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।
সোয়া ১ ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠক শেষে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা বলেন, জোটের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে ঐক্যমতে পৌঁছেছি যে, জোট প্রধান খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই কেবল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। খালেদা জিয়া ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না ২০ দলীয় জোট। তবে বৈঠকে আরো একটি সিদ্ধান্ত অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তা হলো- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে জোটের সমন্বয়ক থেকে সরিয়ে দেয়া। এর নিগুঢ় কারণ তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।
জোট নেতারা এখন সবকিছুর আগে খালেদা জিয়ার মুক্তিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে সূত্র জানায়। এদিকে ভেতরে ভেতরে নির্বাচন নিয়েও তাদের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।
তবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ রেখে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে সে ব্যাপারেও প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে রয়েছে। রয়েছে মনোনয়ন এবং শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিষয়। ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়েও পরিকল্পনা আঁটছেন অনেকে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, আর বিরোধী দলে গেলে বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন এবং মন্ত্রিসভা বা সরকার পরিচালনার জন্য যোগ্য নেতা কারা। এসব ব্যাপারে বিএনপির ভেতরেও নানা আলোচনা আছে। সেসব বিষয়ে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর তরফ থেকে প্রশ্ন তোলা হতে পারে। আর এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের কাছে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজাও কৌশলগতভাবে কঠিন হবে দলটির নেতাদের জন্য। কারণ বিএনপির কোনো নেতার এ ধরনের উত্তর খুঁজতে যাওয়ার অর্থই হলো খালেদা বা তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করার ষড়যন্ত্র; যেটি সরকার চাইছে বলে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে বহুবার উঠে এসেছে। সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তারেক রহমানের পরামর্শে যৌথ নেতৃত্বে বিএনপি চলছে। তবে খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত হলে সেই ঐক্য সামনের দিনগুলোতে কতটা অটুট থাকবে তা নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে। এদিকে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এখনকার স্থায়ী কমিটির বৈঠকগুলোতে সভাপতিত্ব করছেন সবচেয়ে সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আর বাইরে দলীয় কর্মকাণ্ড তথা মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি সংশ্লিষ্টদের মতে, খালেদা জিয়ার জামিন কত দিনে হবে সেটি বলা সম্ভব নয়। ২১ আগস্টের মামলায় কী হয় সেটিও বলা মুশকিল। দলের নেতৃত্বের বিষয়টি এ মুহূর্তে বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপির বিকল্প নেতা তারেক রহমান লন্ডন থেকে দল চালাচ্ছেন। তিনি নেতৃত্ব ছাড়বেন বলে মনে হয় না। এখন তার বিচারক্ষমতা, দূরদর্শিতার ওপর নির্ভর করছে বিএনপির ভবিষ্যৎ।
কারাগারে থাকায় খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি বিএনপির জন্য বর্তমার স্থবিতাকে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন বিএনপি নেতাকর্মীসহ অনেকে। শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ এব্যাপারে বলেন, নির্বাচনে যাওয়া এবং সঠিক নেতৃত্বে দল পরিচালনাসহ বিভিন্ন ইস্যু বিএনপিকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। আর মোকাবেলা করতে না পারলে সংকট আরো কঠিন হবে। এ পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে বিএনপিকে নতুন করে ভাবতে হবে। গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতে, নির্বাচনে অংশ নিয়েই বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। সরকার তাদের অনেক বড় বিপদে ফেলেছে। কোনো পথ নেই।
এই বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পরে আমরা আরো শক্তিশালীভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। সুতরাং আমরা হতাশ নই। বরং আমরা আরো বেশী ঐক্যদ্ধ হয়ে কাজ করছি এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। যার ফলে সরকারের যে নীল-নকশা ছিল, সেটা আজকে বুমেরাং হয়ে সরকারের বিরুদ্ধেই কাজ করছে।
একই বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কিমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন,বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দির কারণে সরকার আশা করেছিল বিএনপি ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু তাদের সেই আশা ভেঙে গেছে। উনি (খালেদা জিয়া) জেলের বাইয়ে আসুক আর কারাবন্দি থাকুক, বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে এবং থাকবে। আর এই নেতৃত্বের ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের মধ্যে দিয়ে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা হবে।
জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছর সাজা হওয়ায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জেলে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। হাইকোর্ট জামিন দিলেও সুপ্রিম কোর্ট আগামী ৮ মে পর্যন্ত জামিন স্থগিত করে দেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া জামিন না পাওয়ার ধারণা বিএনপির পাশাপাশি জনমনেও তৈরি হয়েছে। এদিকে একই মামলায় ১০ বছর ছাড়াও অন্য একটি অর্থপাচার মামলায় তারেক রহমানের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাও উঠছে আদালতে। এ অবস্থায় আরো দীর্ঘদিন বিএনপিকে চলতে হবে খালেদা জিয়া ও তারেককে ছাড়াই। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল জানান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলেও যৌথ নেতৃত্বে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলবে। দল পরিচালনার কৌশলগত পরিবর্তন হবে না।