বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রায়: বিএনপির প্রতিক্রিয়া

যারা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিতে চেয়েছিল, পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে তারাই লাভবান হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গোয়েন্দা তদন্ত ব্যর্থতার কারণে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। রায়ের পর্যবেক্ষণ সঠিক হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন সেমিনার হলে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার বিশেষ জাতীয় কাউন্সিল ২০১৭ উপলক্ষ্যে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, স্বাধীনতা খর্ব করে সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র চলছে। এছাড়া, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে এমন একটি সহায়ক সরকার দিন যে সরকার নির্বাচনকালীন সময়ে ইসিকে সহায়তা করবে।
উল্লেখ্য, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ১৫২ জনের মধ্যে ডিএডি তৌহিদসহ ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। ১৪৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ এবং ২৫৬ জনের মধ্যে ১৮২ জনের ১০ বছর করে কারাদণ্ড সহ ১৯৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা বহাল রয়েছে। ১৬০ জনের আর্থিক দণ্ড বাতিল। ২৯ জনকে খালাস দিয়েছে আদালত।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে দেশের সবচেয়ে আলোচিত এ মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চ। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।
এদিকে রায়ের সময় বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের হত্যাকান্ড প্রথম ঘটেছে। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশে ঘটেনি। এটি একটি দু:খজনক ঘটনা। বাংলাদেশর মানুষের জন্য এ ধরনের ঘটনা প্রথম বলেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম। তিনি আরো বলেন, এ ধরনের ঘটনা পরিকল্পিত । হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভেতরে বাইরে যড়যন্ত্র হয়েছে।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের জন্য একমাত্র সর্বোচ্চ সাজা হওয়াই উচিত। ইট ইজ আনইথিক্যঅলি ডেথ। আসামীদের মনমানসিকতা ছিলো অপরাধ করার মতো। স্বাক্ষ্য প্রমান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অপরাধীরা ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। বিচারপতি নজরুল ইসলাম রায়ের মতামতে আরো বলেন, এটি ছিলো কমন ইন্টেশন। সকল অপরাধীরা একই ধরনের যড়যন্ত্র করেছিলো। ক্রিমিনাল কনস্প্রেসি ছিলো। এ ঘটনায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট তৈরী হয়েছিলো।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এ ঘটনায় প্রথমে রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে এসব মামলা নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। মামলায় সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরও ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় আসামি দাড়ায় ৮৫০ জনে।
এছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বিচার চলার সময়ে বিডিআরের ডিএডি রহিমসহ চার আসামির মৃত্যু হয়। মামলায় আসামিদের মধ্যে বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীরও দণ্ড হয়েছে। সাজা ভোগকালীন বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। রক্তাক্ত ওই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী এ বাহিনীর নাম পুনর্গঠন করা হয়। নাম বদলের পর এ বাহিনী এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হিসেবে পরিচিত।