আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব, বিএনপিতে স্বস্তি

আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলা) আসনে আলোচনা চলছে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস-আদালতসহ সর্বত্র। এখানে এখন পর্যন্ত বিএনপির একক প্রার্থী। আর দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগের হাফডজন নেতা। তাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে হচ্ছেন এ নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। এ আসনে বিএনপিতে এখনো রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বিকল্প প্রার্থী নেই। ভোটের লড়াইয়ে নামতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার প্রার্থী হওয়ার চেষ্টায় দলের তৃণমূল পর্যন্ত বিভক্তি দেখা দিয়েছে। আর একক সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে স্বস্তিতে আছে বিএনপি।
স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এ আসনে সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯১ সাল থেকে সেই দৃশ্যপটের পরিবর্তন হয়। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলেও আওয়ামী লীগের শংকর গোবিন্দ চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও বিএনপির রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ২০০১ সাল থেকে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরাই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০১ সালে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নির্বাচিত হলে উপমন্ত্রী হন। ১/১১-এর সরকার ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়ি পোড়ানোর মামলায় দুলু আদালতে জামিন নিতে গিয়ে কারাগারে যান। ওই মামলায় কারাদ- হওয়ায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুলু অংশ নিতে পারেননি। ওই নির্বাচনে তার স্ত্রীর সাবিনা ইয়াসমিন ছবি বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। তবে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আহাদ আলী সরকার নির্বাচিত হন। দুলুর আসনে আহাদ আলী সরকার নির্বাচিত হয়ে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তবে প্রতিমন্ত্রী হয়েও এ আসনে দলকে শক্তিশালী করতে পারেননি তিনি। যার ফল পান তিনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরিবর্তন করে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামকে প্রার্থী করে। ওই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন শফিকুল ইসলাম শিমুল। আইনি জটিলতা কেটে যাওয়ায় আগামী সংসদ নির্বাচনে এই আসনের বিএনপির প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুই একক প্রার্থী। আর আওয়ামী লীগে বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল দলের পক্ষে প্রার্থী হচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেন তিনি। তবে আরও ৫ নেতা আওয়ামী লীগের মনোনায়ন লাভের জন্য চেষ্টা করছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে শফিকুল ইসলাম শিমুল সংসদ সদস্য হওয়ার পর সদর উপজেলা চোয়ারম্যান হন শরিফুল ইসলাম রমজান। শিমুল ও রমজান একসঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামের সাথি হলেও ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের পর উভয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। কাউন্সিলে রমজান ও শিমুল সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। তখন থেকেই নাটোর আওয়ামী লীগ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। কাউন্সিলে শিমুল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এতে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েন রমজান। আর সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে ঘুরে দাঁড়ান তিনি। এরপর ৩ জন মনোনায়নপ্রত্যাশী সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি ও যুবলীগের সভাপতি এহিয়া চৌধুরী রমজানের সঙ্গে হাত মেলান। এ ছাড়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান খানও রমজানের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এতে করে শিমুলের পক্ষের একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও রমজানের পক্ষের ৪ জন মনোনায়নপ্রত্যাশী। আর এতে করে শিমুল ও রমজানের সমর্থকরা দুই ভাগে বিভক্ত। নির্বাচন এগিয়ে আসায় এই বিভক্তি আরও স্পষ্ট হচ্ছে। এই পাঁচজনের বাইরেও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত হানিফ আলী শেখের ছোট ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মালেক শেখ নতুন করে মাঠে নেমেছেন। গত রমজানে হানিফ আলী শেখের পরিবারের সদস্য হিসেবে ঢাকার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ইফতারে দাওয়াত পান মালেক শেখ। ইফতারের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় হানিফ আলী শেখের পরিবার থেকে তিনি মনোনায়ন চান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাকে মাঠে কাজ করতে বলেন। তখন থেকেই তিনি মাঠে আছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সেন্টু। এ ছাড়াও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আমির অ্যাডভোকেট আমেল খান চৌধুরী এবং ওয়ার্কার্স পার্টির মাহবুবুর রহমান মাহবুব প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারে রয়েছেন।