আ’লীগে একাধিক, একক ‘প্রার্থী’র সুবিধায় বিএনপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের রয়েছে একাধিক মনোনায়ন প্রত্যাশী। একাধিক নেতার জোরালো অবস্থান চিন্তায় ফেলেছে দলটির নেতাকর্মীদের। কারণ মনোনায়ন বঞ্চিতরা একক প্রার্থীর পক্ষে যদি সক্রিয় না হন, কিংবা দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে সক্রিয় থাকলে নির্বাচনে ভরাডুবির আশঙ্কা করছেন তারা। যে ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৮ সালের নির্বাচনে। এ কারণে দলের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে একক প্রার্থীর পক্ষে সব নেতাকে মাঠে নামাতে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
এদিকে এখন পর্যন্ত একক প্রার্থী থাকার কারণে সুবিধায় আছে বিএনপি। জানা গেছে, নোয়াখালী-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ মামুনুর রশিদ কিরণ তৃণমূল পর্যায়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দান, অনুদান করে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এমনকি গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস, গ্লোব সফট ড্রিঙ্ক, গ্লোব বিস্কুট অ্যান্ড ডেইরি মিল্ক, গ্লোব ফিশারিজসহ কয়েকটি শিল্পকারখানায় হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখায় বাড়তি সুবিধায় রয়েছেন। এ ছাড়া বেগমগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়নের ফলে সব মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন।
অপরদিকে একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ইন্ট্রাম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এটিএম এনায়েত উল্যাহ মনোনয়ন চাইছেন। তবে তার সহোদর ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ায় তার দিকে হাই কমান্ডের তেমন লক্ষ নেই বলে জানা গেছে। একই পরিবারে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যন আর এমপি অন্যান্য প্রার্থী মেনে নিতে চাইবেন না।
অন্যদিকে এ আসনে আরেক প্রার্থী সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের সহোদর নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিনহাজ আহমেদ জাবেদ। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, বাড়িঘর নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। তবে দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও তৃণমূলের কাছ থেকে একটু দূরে রয়েছেন। তিনি ২০০৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে ৪৬ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। দলীয় প্রার্থী কামরুন নাহার মুন্নি পেয়েছিলেন ৪১০০ ভোট এবং বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ মামুনুর রশিদ কিরণ ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৭৫ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের এ তিন প্রার্থীর ভোট ভাগাভাগির কারণে তখন বিএনপির প্রার্থী বরকতউল্লা বুলু ৯৬ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও যদি একই ঘটনা ঘটে তাহলে বিএনপির প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন ভোটাররা। তবে এবার মিনহাজ আহমেদ জাবেদ সমঝোতার মাধ্যমে চূড়ান্ত দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে ভোট না করলে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এদিকে এই আসন থেকে এমপি প্রার্থী হিসেবে নতুন করে চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র ও চৌমুহনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন ফয়সলের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম নুরুল হক মিয়ার দৌহিত্র হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ ছাড়া আক্তার হোসেন ফয়সল বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন সাবেক ডিজি, ডিজিএফআই ও নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি জেনারেল আকবর হোসেনের ছোট ভাই হিসেবে তিনি হাইকমান্ডে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। তবে তিনি দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলে এখানে আওয়ামী লীগের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ আসনে বিএনপি এখনো একক প্রার্থী হিসেবে সদ্য কারামুক্ত ও বিএনপির বর্তমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুকে মনোনীত করে রেখেছে। তার অবর্তমানে তার স্ত্রী লাকি আক্তার ও বেগমগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রহিমকেও প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে বলে বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এখানে ২০০১ সালে পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে বিএনপিতে যোগদান করে নির্বাচিত হলেও এরই মধ্যে বরকতউল্লা বুলু ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগে অন্তর্কোন্দল চাঙ্গা থাকলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের বরকতউল্লা বুলু নির্বাচিত হবেন বলে মনে করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
সব মিলিয়ে এই আসনে মূলত লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। একক প্রার্থী হিসেবে টেনশনমুক্ত বিএনপির প্রার্থী। আর দলীয় কোন্দলে জয় নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগ। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ মামুনুর রশিদ কিরণ ও বিএনপি থেকে বরকতউল্লা বুলুই চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে জানেন উভয় দলের নেতাকর্মীরা। আগামীতে কী হয় সেটা সময়ই বলে দেবে।