English Version
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৮:২৫

মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলার পাহাড়, কিন্তু আইন কী বলে?

নিজস্ব প্রতিবেদক
মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলার পাহাড়, কিন্তু আইন কী বলে?

ওয়ান ইলেভেনে নিশ্চিত না হয়ে খবর প্রকাশে ভুল স্বীকারের পর, ‘দ্য ডেইলি স্টার'-এর সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে অর্ধ শতাধিক মামলা হয়েছে৷ মামলাগুলো রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি ও ক্ষতিপূরণের৷ প্রশ্ন , একই অপরাধে এতগুলো মামলা হয় কি?

গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশের অন্যতম ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার'-এর সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারাদেশে মোট মামলা হয়েছে ৬১টি৷ এরমধ্যে ১৬টি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা এবং ৫৭টি মানহানির৷ এ সব মামলায় মোট ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে ৭১ হাজার ৮শ' ৪১ কোটি টাকা৷ শুধু তাই নয়, মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে এরইমধ্যে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং সমনও জারি করা হয়েছে৷

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক-শো অনুষ্ঠানে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বর্তমান প্রধনিমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর সরবরাহ করা তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে ছাপার ভুল স্বীকার করেন আনাম৷  লেন, ‘‘এটি ছিল আমার সম্পাদকীয় নীতিমালার ভুল৷'' এরপর থেকে প্রতিদিনই তাঁর বিরুদ্ধে সারাদেশের আদালতে মামলা হচ্ছে৷ গড়ে প্রতিদিন ৮-১০টি মামলা অব্যাহত আছে তাঁর বিরুদ্ধে৷ বুধবারও মামলা হয়েছে ৬টি৷

মানহানি ও ক্ষতিপূরণের মামলাগুলো দণ্ডবিধির ৫০০/৫০১/৫০২ ধারায় এবং রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা চূড়ান্তভাবে নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপক্ষো করা হচ্ছে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এখনো কোনো রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমতি দেয়নি৷ আর ক্ষতিপূরণের দাবিও করা হয়েছে একই মামলায়৷

এ নিয়ে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রচলিত আইন এবং সংবিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে একই অপরাধে একাধিক মামলা হতে পারে না৷ মামলা হবে একটাই৷ আর মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করা হলে তাঁকে আদালতে গিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে৷ কিন্তু ৬০-৭০টি মামলা হয়রানি ছাড়া আর কিছুই না৷ তাছাড়া যারা মামলা নিচ্ছেন, তারা যে কীভাবে একই ঘটনায় একাধিক মামলা নিচ্ছেন, তা আমি বুঝতে পারছি না৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘মানহানি কার হয়েছে? যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হয়ে থাকে তাহলে মানহানির মামলা তাঁকে করতে হবে৷ এটাই আইন৷ আর ক্ষতিপূরণের মামলা করতে হলেও সেটা তিনিই করবেন৷ কিন্তু আমার জানা মতে তিনি কোনো মামলা করেননি৷ যারা করছেন তাদের মামলা করার ভিত্তি কী?''

তাঁর কথায়, ‘‘একই ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আলাদাভাবে হতে পারে, যদি তা ব্যাখ্যা করা যায়৷ কিন্তু আইনটি হলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর সরকারের পক্ষ থেকে সেই মামলা করতে হবে৷ সাধারণ উৎসাহীরা কীভাবে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন? তাছাড়া সরকারবিরোধী তো রাষ্ট্রবিরোধীতা নয়৷ রাষ্ট্র এবং সরকার এক জিনিস না৷''

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একই ঘটনায় বা অপরাধে একাধিক মামলা হয়ে থাকলেও আলাদা-আলাদা বিচারের সুযোগ নেই৷ সবগুলোকে একটি মামলা হিসেবে বিবেচনা করাই আইনের নিয়ম৷''

তিনি বলেন, ‘‘মানহানির মামলার ক্ষেত্রে, যার মানহানি হয়েছে তিনি ছাড়া অন্য কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন যে এই মানহানি তারও হয়েছে, একমাত্র তবেই তিনিও মামলা করতে পারেন৷ যেমন ভাইয়ের মামহানি হলে তার আরেক ভাই মামলা করতে পারেন৷ আর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো আদালত বা থানার নেয়ার সুযোগ নেই৷ কেউ আবেদন করলে করতে পারেন, কিন্তু তা কার্যকর হয় না৷''

তাঁর কথায়, 'মাহফুজ আনাম আইনের ঊর্ধে নন৷ তাই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হতেই পারে৷ তবে তা হতে হবে দেশের প্রচলিত আইন মেনে৷ তিনি চাইলে একই ঘটনায় এতগুলো মামলা কেন করা হচ্ছে – এর প্রতিকার চাইতে উচ্চ আদালতে যেতে পারেন৷'