ভালবাসা দিবসে বিস্মৃত হচ্ছে যে সংগ্রামের ইতিহাস (দুষ্প্রাপ্য ছবিসহ)

১৪ ফেব্রুয়ারী, স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে পালিত হয় স্বৈারাচার প্রতিরোধ দিবস। ১৯৮২ সালের ১৪ মার্চ, সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখল করেন স্বৈরাচার এরশাদ সরকার। সামরিক আইন জারি করে মৌলিক অধিকারের ভূ-লুণ্ঠন এবং বিরোধী দলীয় কর্মী ধরপাকড়, নির্যাতনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এরশাদ আমল। এই দিনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রাণ দেয় এদেশের তরুণেরা। সেই হত্যান্ডের ইতিহাস জাতিকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য আমদানি করা হয় “ভ্যালেন্টাইন ডে”। যদিও সত্যিকারের ভালবাসার জন্য বিশেষ কোন দিন লাগেনা।

স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একুশে ফেব্রুয়ারির বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাতিল করে এবং আলপনাসহ বাঙালী ঐতিহ্যের অনেক কিছুকে ইসলামবিরোধী বলে ঘোষণা করে। শিক্ষা সঙ্কোচন ও সাম্প্রদায়িকীকরণসহ জনস্বার্থ এবং শিক্ষাবিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে থাকে। স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে প্রথম থেকে আন্দোলন শুরু হলেও সামরিক আইন ভঙ্গ করে বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশাল মিছিল বের হয়। ছাত্রদের দাবি ছিল- "ছাত্র-স্বার্থবিরোধী শিক্ষা সঙ্কোচনের মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল, সামরিক শাসন প্রত্যাহার, সাম্প্রদায়িক শিক্ষা বাতিল করে সেক্যুলার শিক্ষা চালু কর"।

সেই সময় ছাত্র আন্দোলনের পালে হাওয়া লাগায় তৎকালীন আমলে প্রণিত “মজিদ খান শিক্ষানীতি”। সাম্প্রদায়িকতা, শিক্ষা বাণিজ্যিকীকরণ আর শিক্ষা সংকোচন-কে ভিত্তি ধরে প্রণিত এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব ও শিক্ষার ব্যয়ভার যারা ৫০% বহন করতে পারবে তাদের রেজাল্ট খারাপ হলেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়- এই শিক্ষানীতিতে। মোদ্দাকথা, শিক্ষাকে পণ্যে রূপান্তরিত করার হীন প্রয়াস থাকে এই শিক্ষানীতিতে!
গণবিরোধী এই শিক্ষানীতির প্রতিবাদে, তিলে তিলে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন ফুঁসে ওঠে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী। মধুর ক্যান্টিনে সকল ছাত্র সংগঠনের সম্মিলিত রূপ, সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ -এর উত্থান ঘটে। একই ধারার অবৈতনিক বৈষম্যহীন সেক্যুলার শিক্ষানীতির দাবিতে ‘৮৩ এর ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশাল মিছিলে শামিল হয় শত শত ছাত্র। মিছিলের অগ্রভাগে ছিল ছাত্রীবৃন্দ। হাইকোর্টের গেইট এবং কার্জন হল সংলগ্ন এলাকায় কাঁটাতারের সামনে এসে ছাত্রীরা বসে পড়ে।


দেয়ালে দেয়াল প্রতিবাদ... ছাত্রদের আন্দোলন শুধু শিক্ষানীতি নয় সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রূপ নেয়।১৯৮২ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররা মিছিল বের করলে সামরিক স্বৈরাচারের পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে ছাত্রদের লাঠিচার্জ করে। স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের সূত্রপাত। বাংলাদেশে ভালবাসা দিবস শুরু হয় সাপ্তাহিক যায়যায় দিন পত্রিকার শফিক রেহমানের মাধ্যমে। ধীরে ধীরে আমাদের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরে যায়। নতুন প্রজন্ম ভুলতে বসে ইতিহাসের কালো অধ্যায়। শুরু হয় দেশে ভ্যালেন্টাইন দিবস পালন উৎসব। জাফর, জয়নাল, দিপালীর জন্য কারো মনে কোন ভালোবাসা থাকে না। মাঝে মাঝে কেউ কেউ হয়তো স্মৃতী হাতরায়... ওই পর্যন্তই। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গনতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য যারা প্রান দিলো তারা হারিয়ে যায় ভালোবাসা দিবসের কাছে।





