নিজ নিজ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি পেলো প্রধান দুই দল

সংঘাত এড়াতে ৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একই স্থানে সমাবেশ করার আবেদন করায় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না এমনটাই ভাবা হয়েছিলো। ডিএমপির কমিশনার রোববার সে কথা বলেও দিয়েছিলেন। তারপর দল দুটির পক্ষ থেকে কিছুটা নমনীয় হয়ে বলা হচ্ছিলো, দলীয় প্রধান কার্যালয়ের সামনে যদি পৃথকভাবে তাদের সমাবেশ করতে দেওয়া হয় তবে তারা তা মেনে নেবেন। অবশেষে সংঘাত এড়াতে সে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হলো। পৃথকভাবে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে তাদের নিজ নিজ প্রধান দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলো। রোববার আওয়ামী লীগের প্রেসেডিয়াম মেম্বার ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই হবে। আর আজ সোমবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা কোন প্রকার সাংঘর্ষিক কর্মসূচি দেবেন না এবং সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে।
সাধারণ মানুষও তা-ই প্রত্যাশা করে। গত বছর এই সমাবেশকে কেন্দ্র করেই বিএনপি লাগাতার অবরোধ-হরতালে দেশ এবং সাধারণ মানুষকে তিন মাসের অধিক সময় জিম্মি করে রেখেছিলো। এর নেতিবাচক প্রভাব যেমন কর্মজীবী মানুষের উপর পড়ে একইভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে আসে স্থবিরতা। বিশেষ করে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। যে উৎসাহে এখনো আস্থা রাখতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। নতুন করে সংঘাত-সংঘর্ষের আশংকায় মূলত সকল ক্ষেত্রেই এক ধরণের স্থবিরতা বিরাজ করতে। গত দু'দিনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নানান পর্যায়ের নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে সে আশংকা আরও বেড়ে গিয়েছিলো। সাধারণ মানুষও শংকায় ভুগছিলেন। তবে আজ সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন দুই প্রধান দলের সমাবেশ করার যে অনুমতি দিয়েছে, আশা করা যায় এতে রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রসমিত হয়ে উভয় দল নিজ নিজ কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণভাবেই সমাবেশ করবে।
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, বিশেষ বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নিজ কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগকে আগামীকাল মঙ্গলবার সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। একই সঙ্গে নয়াপল্টনে বিএনপিকে একইদিনে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। দক্ষিণের মেয়র আশা প্রকাশ করেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন অনুমতি দেয়ার কথা জানিয়ে বলেন, সব সময় সড়কের ওপরে সমাবেশের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে। আগামীতে রাস্তার ওপর কোনও সমাবেশ করতে না চাইতে দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে তিনি বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগকেও সমাবেশের অনুমতি দেয়ার কথা জানান।
গতকাল রোববার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিলো, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না পেলে নিজ নিজ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ জানায়, গতবারের মতো ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে নাশকতা হলে জনগণ এবং আইন-শৃংখলা বাহিনী জবাব দেবে। আর বিএনপির দাবি করেছিলো, সরকার পায়ে পাড়া দিয়ে রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে।
২০১৯ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় দিবসের পালন করবে বলে জানিয়েছিলো তাদের সংবাদ সম্মেলনে। আর ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে বিএনপি।
শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আশ্বাস বিএনপি'র :
৫ জানুয়ারিতে বিএনপি কোনো ‘সাংঘর্ষিক কর্মসূচিতে’ না গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার আগে সোমবার দুপুরে এর প্রস্তুতি নিয়ে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে এ আশ্বাসের কথা শোনান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে- যেখানেই সরকার অনুমতি দেবে, সেখানেই আমরা জনসভা করতে চাই। জনসভার করার অনুমতি এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ৫ জানুয়ারির জনসভা হবে সম্পূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ। আমরা এ-ও নিশ্চিতভাবে বলতে চাই, আমরা সংঘর্ষের রাজনীতি করি না; আমরা কোনো সাংঘর্ষিক কর্মসূচিতে যাবো না।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে এ বৈঠক করেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। পরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা’ অযথা বিএনপির জনসভা নিয়ে ‘রাজনৈতিক উত্তাপ’ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। আমরা কালকে জনসভা সফল করার জন্য মহানগর ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বসেছিলাম। যদিও আমরা এখন পর্যন্ত জানি না আমাদের জনসভা করার অনুমতি দেবে কি না। আমরা আশা করতে পারি, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের একটা প্রচেষ্টা থাকবে। আমাদের মৌলিক অধিকার জনসভার করার অধিকার প্রয়োগ করার জন্য সরকার যাবতীয় সহযোগিতা করবেন এবং আমাদেরকে জনসভা করার অনুমতি দেবেন।
নির্বাচনের দুই বছরপূর্তির দিনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণা দিলেও ওই জায়গা কেউ পাচ্ছে না; এর মধ্যেই দুই দলকে নিজ নিজ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। তবে সমাবেশ করার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কোন দলকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে সে বিষয়ে রোববার ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, জনগণের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি মনে করলে কাউকেই অনুমতি দেওয়া হবে না।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি গত বছরের ওই দিনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যা দিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করলে আওয়ামী লীগও ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ নাম দিয়ে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে। দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির উত্তেজনার মধ্যে সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে খালেদা জিয়া লাগাতার অবরোধ চালানোর ডাক দেন। তিন মাসের ওই কর্মসূচি চলার সময় পেট্রোল বোমা ছুড়ে ও গাড়িতে আগুন দিয়ে প্রায় দেড়শ মানুষকে হত্যা করা হয়।