ঢাক-ঢোল আর কাঁসার বাদ্যে দুর্গাপূজা শুরু আজ

বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা আজ বুধবার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে। আগামী রোববার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ৫ দিনব্যাপী এ উৎসবের।
শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে। টানা চার দিনের সরকারি ছুটি উৎসবের আমেজ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে। সরকার নির্বাহী আদেশে আগামী বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করেছে।
ছুটি ঘোষণা করে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আগামী শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটিসহ এবার দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা চার দিনের ছুটি হতে যাচ্ছে। পরদিন রোববার শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী উপলক্ষে সরকারি ছুটি। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত ছুটি থাকছে।
এর আগে গতকাল দুপুরে দুর্গাপূজার ছুটি এক দিন বাড়ছে বলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। দুর্গাপূজার সময় শুধু বিজয়া দশমীর দিন সরকারি ছুটি থাকে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গাপূজার ছুটি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
রাজধানীর পূজামণ্ডপগুলোতে প্রতিমা, মণ্ডপ তৈরি ও আলোকসজ্জা থেকে শুরু করে নানা আয়োজন প্রায় শেষ পর্যায়ে।
দুর্গা বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামের অন্য একটি অর্থ করেছেন। দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্য ক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।
‘মহা চণ্ডীতে’ উল্লেখ আছে, ত্রেতা যুগে ভগবান রাজা রামচন্দ্র দশানন রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে রত হন। পাপের বিনাশের লক্ষ্যে দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার কাছে শক্তি বৃদ্ধির আশায় শরৎকালে তার পূজা করেছিলেন এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে দেবী সীতাকে উদ্ধার করেন ও রাবণকে হত্যা করতে সক্ষম হন রামচন্দ্র। সেই থেকে পৃথিবীতে প্রতি বছর শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গোৎসব পালন করে আসছেন।
লোকনাথ পঞ্জিকা অনুযায়ী, আজ মহাষষ্ঠী, আগামীকাল মহাসপ্তমী, শুক্রবার মহাষ্টমী, শনিবার মহানবমী এবং রোববার (১৩ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে শারদীয় দুর্গোৎসবের।
এ বছর সারা দেশে এ বছর ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদ্যাপিত হবে। ঢাকা মহানগরে এবছর ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হবে।
রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছা রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, তাঁতীবাজার, শাঁখারি বাজারসহ বিভিন্ন মন্দিরে মন্দিরে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ব্যাপক আয়োজন চলছে। ঢাকেশ্বরী আর রামকৃষ্ণ মিশনের পূজা আয়োজন ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দুর্গোৎসবের ব্যাপক আয়োজন চলছে।
দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতারা হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিককে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেছেন, আসন্ন দুর্গাপূজা ঘিরে রাজধানী ঢাকায় কোনো থ্রট (হুমকি) নেই। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দুর্গাপূজার নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকায় পূজাকে ঘিরে কোনো থ্রেট আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের জানামতে এমন কোনো থ্রেট নেই, কোনো ঝুঁকিও দেখছি না।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজায় মণ্ডপ এলাকা, বিসর্জন শোভাযাত্রা ও বিসর্জনের সময় সব ধরনের মাদকদ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। একইসঙ্গে সব ধরনের পটকা ও আতশবাজির ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি।
মো. মাইনুল হাসান বলেন, বিসর্জনের সময় উচ্চৈঃস্বরে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা যাবে না। যারা সাঁতার জানেন না তাদের বিসর্জনের সময় পানিতে না নামার অনুরোধ করছি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা মহানগরীতে এ বছর ২৫৩টি স্থানে মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৩১টি ও উত্তর সিটিতে ১২২টি স্থানে পূজা উদ্যাপন হবে। ঢাকাসহ সারা দেশে এ পূজা যেন শান্তিপূর্ণ ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে উদ্যাপন করতে পারে, সে জন্য আমরা বিভিন্ন সমন্বয় সভা করেছি।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা মহানগরের প্রতিটি পূজামণ্ডপে বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি পূজামণ্ডপে ফিক্সড পুলিশ মোতায়েন থাকবে, থানা পুলিশের মাধ্যমে নিজস্ব টহল ও চেকপোস্টের ব্যবস্থাসহ সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ মোতায়েন থাকছে।
থাকবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা, আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিং ব্যবস্থা ও পূজা কমিটির মাধ্যমে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক। সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি প্রতিটি পূজামণ্ডপে পর্যাপ্ত সংখ্যক আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। একইসঙ্গে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যসহ র্যাবের সদস্যরা টহল ও অন্যান্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।