মহান মে দিবস আজ

মহান মে দিবস আজ বুধবার। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে ওইদিন প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিক শ্রেণির অধিকার।
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনকে তখন থেকেই সারা বিশ্বে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘শ্রমিক-মালিক গড়বো দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। মঙ্গলবার দেয়া পৃথক বাণীতে তারা মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মেহনতী মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
শ্রমিকদের অধিকার ও দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মে দিবস পালিত হয়। স্বাধীনতার পর মে দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়। ১৯৭২ সালে মহান মে দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে মে দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে দেশে যথাযথ মর্যাদায় দিনটি পালিত হয়ে আসছে।
বিশ্বের দেশে দেশে পালিত হয়ে আসছে মহান মে দিবস। দিবসটি হয়ে উঠেছে বিশ্বের সব শ্রমজীবী মেহনতী মানুষের অধিকার আদায়ের চিরঞ্জীব অনুপ্রেরণার দিন।
আজকের আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি হলো শ্রমজীবী মেহনতী মানুষের নিরলস পরিশ্রম। হাজার বছর ধরে শ্রমজীবী মানুষের রক্ত-ঘামে যে মানবসভ্যতার উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে তা থেকে সেই শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীই থেকেছে উপেক্ষিত।
উন্নত-সমৃদ্ধ পৃথিবীর কারিগর এসব অবহেলিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত, অধিকারবঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে অব্যাহত রয়েছে নিরন্তর সংগ্রাম। সময় পরিক্রমায় ‘অধিকার’ শব্দটির সুদৃঢ় শক্তি সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা ও দর্শনকে প্রভাবিত করেছে এবং পরিবর্তন সাধিত করেছে।
শ্রমজীবী মেহনতী মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রবণতা পৃথিবীর দেশে দেশে অধিকারবঞ্চিত মেহনতী মানুষের মধ্যে এক নবতর জাগরণের প্রস্ফুটন ঘটায়।
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় গতিশীল হয়েছে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক আদর্শের অগ্রযাত্রা। স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ববোধ সঞ্চারিত হয়েছে বিশ্বের বিবেকমান নাগরিকদের মানবিক সত্তায়। মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও মানবিক বিশ্বের আদর্শ প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে শ্রমজীবী মানুষের আত্মনিবেদন।
মহান মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে আজ বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আলোচনায় উপস্থিত থাকবেন।
অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিষয়ক একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
তাছাড়া অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন ও কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে দুস্থ শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করা হবে।
আলোচনা সভা শেষে রয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এছাড়াও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়গুলোকে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মহান মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন সড়কদ্বীপ ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লাকার্ড দিয়ে সজ্জিত করা হবে। মে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এবারও একটি তথ্যবহুল এবং দৃষ্টিনন্দন স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে।
সরকারের বাইরেও মহান মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিনটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান ও টক-শো সম্প্রচার করবে।