English Version
আপডেট : ২৮ জুলাই, ২০২২ ০৯:২১

উদ্বোধনের অপেক্ষায় আলফাডাঙ্গাবাসীর স্বপ্নের টিটিসি

অনলাইন ডেস্ক
উদ্বোধনের অপেক্ষায় আলফাডাঙ্গাবাসীর স্বপ্নের টিটিসি

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার কামারগ্রামে স্থাপিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) সহ ২৪টি কেন্দ্রের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই)। এদিন সকালে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এসব কারিগরি প্রশিক্ষণগুলোর উদ্বোধন করবেন।

২৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে একটি নির্মিত হচ্ছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার কামারগ্রামে। উদ্বোধন উপলক্ষে আলফাডাঙ্গাসহ গোটা অঞ্চলের মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের অধীন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র প্রকল্পের আওতায় নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেন্টেনিয়াল টিটিসিসহ ২৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে নয়টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন। অনুষ্ঠানে শেষে প্রধানমন্ত্রী নবনির্মিত কারিগরি প্রশিক্ষণগুলোর উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ।

জানা গেছে, প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতি আসার পর পর্যায়ক্রমে ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, আইটি সাপোর্ট টেকনিশিয়ান, অটোমেকানিক্স/ডিজেল ইঞ্জিন মেকানিক, সিভিল কন্সট্রাকশন, রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ার কন্ডিশনিং (আর এসি) ট্রেডের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে।

আলফাডাঙ্গা টিটিসির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘দেশে-বিদেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা মেটাবে এই টিটিসি। এতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। যদি একজন মানুষ দক্ষ হয় তাহলে তার কাজের কোনো অভাব হয় না।’

শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘বিদেশে যাওয়ার জন্য অনেক ধরনের ট্রেনিং রয়েছে। টিটিসিতে যেকোনো একটি বিষয়ের ওপর কোর্স করলে বিদেশে গিয়ে কাজ করতে সুবিধা হবে। এছাড়া সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গেলে প্রতারিত হওয়ার সুযোগও কম থাকে।’

আলফাডাঙ্গার স্থানীয়রা বলছেন, টিটিসির কার্যক্রম শুরু হলে গোটা আলফাডাঙ্গার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি আসবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে। এই প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমির প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, ‘কামারগ্রাম টিটিসি শুধু এই উপজেলায়ই নয়, পাশের বিভিন্ন উপজেলাতেও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। আশপাশের জেলা থেকেও শিক্ষার্থীরা এখানে কারিগরি শিক্ষা নিতে আসবে।’

টিটিসির কার্যক্রম শুরু হলে গোটা আলফাডাঙ্গার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একটা নতুন চেহারা পাবে বলে আশাবাদী পুলিশের সাবেক এআইজি মালিক খসরু। তিনি বলেন, ‘এই টিটিসি আলফাডাঙ্গাসহ আশপাশের উপজেলার তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ ফরিদপুর সফরে এসেছিলেন। তখন তিনি যেসব উন্নয়নকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন, তার মধ্যে কামারগ্রামের টিটিসি একটি। এর মাসখানেকের মাথায় শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। টিটিসির তিনটি ভবনের একটি একাডেমিক, একটি ডরমিটরি, একটি প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপালের কোয়ার্টার ও ছাত্রী হোস্টেল। একাডেমিক ভবনটিতে ক্লাস হবে। ডরমিটরিতে থাকবেন ছাত্ররা। প্রিন্সিপালদের আবাসিক কোয়ার্টারের ওপরে ছাত্রীদের আবাসন ব্যবস্থা থাকবে।

আলফাডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নির্মাণের জন্য জমি দিয়েছে কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমী। আলফাডাঙ্গাকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে উপজেলার মধ্যে সর্বপ্রথম ১৯৩৭ সালে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন মরহুম কাঞ্চন মুন্সী। এছাড়াও কামারগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, ঈদগাহ, কবরস্থান, খেলার মাঠ, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা কাঞ্চন মুন্সীর দান করা জায়গায় স্থাপিত হয়েছে।

কাঞ্চন মুন্সী শুধু নিজ গ্রামেই নয়, আশপাশের শত শত বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। তারই সু-সন্তান মরহুম মুন্সী বজলার রহমান কাঞ্চন একাডেমীকে ৯০ শতাংশেরও বেশি জমি দান করেছিলেন। কাঞ্চন একাডেমির সেই জায়গায় নির্মিত হয়েছে টিটিসি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম আকরাম হোসেনের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘আলফাডাঙ্গার উন্নয়নে মুন্সী পরিবারের অবদান মানুষের মুখে মুখে। এই পরিবারের সুযোগ্য উত্তরসূরি কাঞ্চন মুন্সীর প্রপৌত্র আরিফুর রহমান দোলনের চেষ্টায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট, মসজিদ-মাদ্রাসা, কবরস্থান, মন্দিরসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামাগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এখনও হচ্ছে।’

গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোনায়েম খান বলেন, ‘এলাকার শত শত বেকার তরুণ-তরুণী এই টিটিসি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারবে। বিভিন্ন জায়গায় কাজের সুযোগ পাবে। বিদেশে গিয়ে এসির মধ্যে বসে কাজ করতে পারবে। এমন একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের এলাকায় অনুমোদন এবং বরাদ্দ দেওয়ার জন্যে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’

এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রফিকুল হক বলেন, ‘এই টিটিসি শুধু আলফাডাঙ্গা নয়, আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এরকম প্রত্যন্ত অঞ্চলে এত সুন্দর একটি প্রতিষ্ঠান করার জন্য। সেই সঙ্গে যারা এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত, স্থানীয়ভাবে যারা জমি দান করেছেন বা এত সুন্দর একটি উদ্যোগ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন আমি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’