ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানজট যে কারণে

কোরবানি ঈদের দিন যতই এগিয়ে আসছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানজট ততই বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফিটনেসবিহীন যান চলাচল, সড়ক দুর্ঘটনা, প্রশিক্ষণবিহীন চালক, এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক ও সিরাজগঞ্জ থেকে গাড়ি টানতে না পারায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত কয়েক স্থানে খানাখন্দের কারণেও যানজট হয়।
পুলিশ, যানবাহন চালক ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল করে। এতে একটি যান বিকল হলে তা অপসারণ করতে যেটুকু সময় লাগে, ওই সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনা শিকার যানবাহনের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয় এই মহাসড়কে। প্রশিক্ষণবিহীন চালকরা ট্রাফিক সিগনাল ও সড়ক আইন না মেনে গাড়ি চালান। এলোমেলো, অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালানোর কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহন এখন কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন সড়কের কারণে দ্রুত চলে আসতে পারে। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক। আর সেতুটিও দুই লেনের। যানবাহন চার লেনের সুবিধায় দ্রুত এলেঙ্গা পর্যন্ত এসে আটকে যায় দুই লেনের মুখে। এছাড়াও সেতুর টোল দিতে গিয়েও যানজট লেগে যায়। এ কারণে ঈদে এ সড়কে যানজট হয়ে থাকে। সিরাজগঞ্জ অংশ থেকে গাড়ি টানতে না পারার কারণেও টাঙ্গাইল অংশে যানজেটর সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) ভোর থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের চাপ, দুর্ঘটনা, ও সিরাজগঞ্জ অংশ থেকে গাড়ি টানতে না পারায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটারে যানজটের সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপার থেকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রাবনা পর্যন্ত যানজট হয়।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আতাউর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সড়কে ধীর গতি ছিলো। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা স্বাভাবিক হচ্ছে।
সকাল ১১টায় মহাসড়কের পৌলি এলাকায় কথা হয় দিনাজপুরগামী বাসচালক হান্নান মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে অনেক প্রশিক্ষণ ছাড়া চালক ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে বের করেন। তাদের এলোমেলো গাড়ি চালানোর কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। একঘণ্টা ধরে আটকে আছি। কুড়িগ্রামগামী বাসচালক শরীফ বেপারী বলেন, গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত দ্রুত গতিতে আসতে পারি। কিন্তু এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত সড়কটুকু সিঙ্গেল লেনের হওয়ায় ধীর গতিতে চলতে হয়। এতে এক পর্যায়ে যানবাহনের চাপ বেড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।
ট্রাকচালক রাসেল হুদা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও তৎপরতা দরকার। তাহলে সবাই নিয়ম মেনে গাড়ি চালাতো। তখন আর মহাসড়কের যানজট হতো না। আমি মনে করি সবার প্রচেষ্টায় যানজট নিরসন করা সম্ভব।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, গত ঈদের মতো এবারও যানজটমুক্ত ঈদ উপহার দিতে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। উত্তরাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস সেতু পূর্ব পাড় গোলচক্কর থেকে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা দিয়ে যাতায়াত করবে। আর গরুবাহী যানবাহন ও উত্তরাঞ্চলগামী যাত্রীবাহী বাস মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করবে। তিনি আরও বলেন, যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে মহাসড়কে ৬২০ জন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও ১০০ জন এপিবিএন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হাইওয়ে পুলিশ ও সেতু কর্তৃপক্ষের চারটি রেকার সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। সড়ক পর্যবেক্ষণের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। সেখান থেকে সড়কের বিভিন্ন জায়গা মনিটরিং করা হচ্ছে। কোথাও কোন সমস্যা দেখলেই তাৎক্ষণিক তা সমাধান করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতু টোল প্লাজা সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে ১২/১৩ হাজার যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পারাপার হয়। কিন্তু ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েক গুণ বেশি যানবাহন সেতু পারাপার হয়ে থাকে। বুধবার (৬ জুলাই) বেলা ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) বেলা ১২টা পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৪০৭টি যানবাহন সেতু পারাপার হয়েছে। টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭২ লাখ ৩৩ হাজার ৫০ টাকা।