পদ্মা সেতু ও জনসাধারণের প্রত্যাশা
পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ কাজ শেষ। এখন চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। আগামী ২৫ জুন সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে সরকার থেকে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকে এ সেতু দেখতে আসছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষের এখন অপেক্ষার পালা। সেতুর সৌন্দর্য যেমন দৃষ্টি কাড়ছে, তেমন পদ্মার বিশাল জলরাশিও টানছে মানুষকে। সেতু চালুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল উন্নয়ন ঘটতে যাচ্ছে। এতে করে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
ধূসর রঙের সেতুর অদূরে নদী তীরে দর্শনার্থীরা ভিড় করছে প্রতিদিন। কেউ এসেছেন বন্ধুর দলে, কেউ সপরিবারে। যদিও নিরাপত্তা স্বার্থে সেতুর মূল কাঠামো ও নির্ধারিত এলাকায় কারও প্রবেশের অনুমতি নেই। সেতুর দেখার সঙ্গে কেউ ফোনে সেতুর ছবি তুলছেন, কেউ সেলফি তুলছেন। ভাড়ার ট্রলারে নদীতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেউ কেউ।
ফরিদপুর থেকে ঘুরতে আসা নাজমুল জানান, পদ্মাসেতু আমাদের স্বপ্ন ছিল। আজ সেই স্বপ্নটাকে সামনে থেকে দেখতে পেরে খুব আনন্দিত আমি। বাংলাদেশের জন্য এই পদ্মাসেতু নতুন মাইল ফলক। সেতু চালুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল উন্নয়ন ঘটতে যাচ্ছে।
তুহিন ভূইয়া নামে এক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জন্য আশীর্বাদ। ঢাকার সাথে এই মানুষগুলোর নতুন একটি বন্ধন তৈরি হলো পদ্মাসেতুর মাধ্যমে। সেতু খুললে ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়াঘাটে দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগের অবসান হবে।
সেতু দেখতে আসা মিতু আক্তার জানান, এখানে সবই অপরূপ সুন্দর। পদ্মা সেতু, পদ্মা নদী— সবই আকর্ষণীয়। কিন্তু এখানে রেস্ট হাউস নেই। মধ্যরাত পর্যন্ত অসংখ্য মানুষ পদ্মা তীরে আসে তাজা ইলিশ ভাজার স্বাদ নিতে। কিন্তু এখানে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা নেই। কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি দিলে এটি হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
ঢাকার চকবাজারের ব্যবসায়ী আশিক জানান, আগামী ২৫ জুন সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। আমরা যারা ব্যবসায়ী রয়েছি তাদের অনেক সুবিধে হবে। পণ্য আনা নেয়া থেকে শুরু করে সকল দিক থেকে সুবিধে হবে আমাদের। আগে তো মাসে একবার বাড়িতে আসতাম, এখন তো দৈনিক বাড়িতে আসতে পারবো।
ট্রাক ড্রাইভার খলিল বলেন, পদ্মাসেতু হওয়াতে আমাদের অনেক সুবিধে হলো। এখন আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। খুব সহজে আমরা দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে যাতায়াত করতে পারবো। আমাদের কষ্টের দিন শেষ হয়ে গেলো এই সেতুর মাধ্যমে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা যাত্রীবাহী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আঃ সালাম বলেন, সেতু হওয়াতে আমরা খুশি। সব কাজের ভালো মন্দ দিক আছে। পদ্মাসেতু খুলে গেলে আমাদের যাত্রী কমে যাবে। এখানকার টার্মিনালের যে পরিমাণ যাত্রী আসা যাওয়া করতো, সেতু খুলে গেলে সেটা আর হবে না। এটাই আমাদের হতাশ করছে। এছাড়ও আমরা বাস মালিক যারা রয়েছি তারা বসে সিদ্ধান্ত নিবো এই অসুবিধে থেকে পরিত্রাণের উপায় কি হতে পারে। দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে ঠিকই। ক্ষতির সম্মুক্ষিণ আমরা হতে যাচ্ছি। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবর চিঠি পাঠাবো। তিনি যেন আমাদের দিকে একটু তাকান।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের জানান, চলতি মে মাসের মধ্যে রোড মার্কিংয়ের কাজ শেষ হবে। আর পরিকল্পনামতো কাজ এগিয়ে গেলে ১ জুনে জ্বলে উঠবে সেতুর বাতিগুলো। ১৯ মে শেষ হয় পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সড়কের পিচ ঢালাই। সোমবার (২৩ মে) জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়কের পিচ ঢালাইয়ের কাজও শেষ হয়েছে। সেতুর অবশিষ্ট কাজের মধ্যে রোড মার্কিং ও সেতুকে আলোকিত করতে বসানো ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে এখন পুরোদমে। শুরু হয়েছে রেলিং বসানোর কাজও।