English Version
আপডেট : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৮:১৬

জনগণের আস্থার প্রতিদান দিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক
জনগণের আস্থার প্রতিদান দিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিজের ভোগ-বিলাসের কথা না ভেবে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করেপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও কাউন্সিলরদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে শপথ অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি কথা মনে রাখতে হবে, জনগণ ভোট দিয়েছে, আস্থা রেখেছে, বিশ্বাস করেছে। জনগণের সেই আস্থা, বিশ্বাসের মূল্যায়ন করতে হবে।’

ভোটের মাঠে জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে না গিয়ে তাদের কল্যাণে কাজ করতে জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেশ প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক নেতার জন্য নিজের স্বার্থ না দেখে পরের স্বার্থে কাজ করা, জনগণকে কতটুকু দিতে পারলাম, কতটা করতে পারলাম, সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। যতটুকু আপনি দিতে পারবেন, তাতে আপনার তৃপ্তি। নিজের ভোগ-বিলাস নয়, রাজনৈতিক নেতা হলে জনগণের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করতে হয়।’

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়নের যে গতিধারা আমরা সৃষ্টি করেছি, সেটা যেন কখনো ব্যাহত না হয়। কারণ নারায়ণগঞ্জ ঢাকার পাশে এবং নারায়ণগঞ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর।

‘নারায়ণগঞ্জবাসীর সার্বিক উন্নয়নে অনেক পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। অনেক প্রজেক্ট আমরা দিয়েছি। সেগুলো যেন যথাযথভাবে পালন করা হয়। কারণ যে শপথ আপনারা নিয়েছেন জনগণের কল্যাণে কাজ করবেন বলে, সেটা যেন কখনও ভুলে না যান।’

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের অর্থনীতিতে ধস নামলেও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সরকার সক্ষম হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে তো চিন্তা করতে হয়, আমার বয়স হয়েছে। ৭৫ বছর বয়স আমার। কাজেই আর কত দিন বাঁচব? কিন্তু এমনভাবে দেশের কাঠামো করে দিয়ে যেতে চাই, এমনভাবে পরিকল্পনা করে যেতে চাই, যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন বাংলাদেশের এই উন্নয়নের গতিধারাটা অব্যাহত রাখতে পারে, উন্নত জীবন পায়, সুন্দর জীবন পায়, আর যেন কাউকে নিষ্পেষিত হতে না হয়, নির্যাতিত হতে না হয়, সুন্দরভাবে যেন মানুষ বাঁচতে পারে।’

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হবে বলে আশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি বলেন, ‘আবার স্কুল-কলেজ খুলে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় খুলে যাবে। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দেয়া হচ্ছে। আমরা গবেষণা ও ট্রেনিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।’

নারায়ণগঞ্জে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মানুষ তার ভোটাধিকার ক্ষমতা প্রয়োগ করে পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অভিনন্দন জানাই বাংলাদেশের বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের সব মানুষকে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভী একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। নারায়ণগঞ্জবাসী নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করেছেন। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

‘বিএনপি নির্বাচনের অর্থ বোঝে না’

জনগণের ভোটের অধিকার বিএনপি স্বীকার না করলেও তারা ভোট চুরি করতে জানে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘বিদেশে থেকে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি যে দলের চেয়ারপারসন হয়, চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে, যাদের নেতা ফিউজিটিভ, সেই দলকে জনগণ কেন ভোট দেবেন? সেই দল ভোটের আশা করে কীভাবে? তারা আসলে নির্বাচন চায় না, তারা আসলে নির্বাচনের অর্থ বোঝে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা ভোট চুরি করতে জানে, কিন্তু জনগণের ভোট নিতে জানে না। জনগণের ভোট দেয়ার যে অধিকার সে অধিকার তারা স্বীকার করে না- এটা বাস্তবতা।’

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার অভ্যাস যাদের ছিল না, বরং কেড়ে নেয়া, চুরি করা তাদের অভ্যাস ছিল। কাজেই গণতন্ত্রের অর্থ তারা বোঝে না, জনগণের অধিকারের অর্থ তারা বোঝে না, সেই শিক্ষা তাদের নেই।

‘তারা বোঝে সন্ত্রাস, তারা বোঝে দুর্নীতি, তারা বোঝে জঙ্গিবাদ। তারা বাংলাভাই সৃষ্টি করতে পারে, তারা মানুষ হত্যা করতে পারে।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দেশের মানুষের ভোটাধিকার ক্ষমতা ছিল না বলে জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের '৭৭ সালের হ্যাঁ-না ভোট, '৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, '৭৯ সালের সংসদ নির্বাচন এবং '৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন- সবই ছিল প্রহসন। মানুষের কোনো ভোটের অধিকার ছিল না।’

একই ধারা জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অব্যাহত রেখেছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভূমিধস বিজয়ের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের আস্থা বিশ্বাস নিয়েই আমরা সরকারে আছি। বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে একটানা ১৩ বছরে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে দেশে আজকে উন্নতি হচ্ছে। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।’