English Version
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ ০৭:১৪

বিধিনিষেধের বালাই নেই, অজুহাতের শেষ নেই

অনলাইন ডেস্ক
বিধিনিষেধের বালাই নেই, অজুহাতের শেষ নেই

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে চলছে ১১ বিধিনিষেধ। বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হওয়া বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।যদিও বিধিনিষেধের প্রথমদিন শেষ হওয়ার আগেই বাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত বদলে গেছে!শনিবার থেকে যত আসন তত যাত্রী নিয়ে চলবে বাস। 

বিধিনিষেধে অমান্য করলে এবং মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হলে মোবাইল কোর্টের (ভ্রাম্যমাণ আদালত) মাধ্যমে জেল-জরিমানার কথা আগেই জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

জানিয়ে রাখছি, গত ২৪ ঘন্টায় প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২৮ হাজার ১২৩ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৩৫৯ জন।এ নিয়ে দেশে করোনাতে মোট শনাক্ত হলেন ১৬ লাখ ৪ হাজার ৬৬৪ জন।

নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে রোগী শনাক্তের হার ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ।গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ২৭ হাজার ৯২০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

এদিকে বিধিনিষেধ শুরুর দিন দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসান ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. সঞ্জীব দাস। পৌনে ২ ঘণ্টার অভিযানে ৫০-৬০ জনকে নিজের টেবিলে ডেকে পাঠান তিনি। তাদের প্রত্যেকেরই মাস্ক পড়ায় ত্রুটি দেখা যায়। কেউ থুতনিতে মাস্ক পড়েছেন, কেউ ম্যাজিস্ট্রেট দেখে পকেট থেকে মাস্ক বের করেছেন। এছাড়া অধিকাংশের কাছেই ছিল না মাস্ক। তারা দিয়েছেন নানা অজুহাত।

অভিযানে ১১ জনের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। তাদের ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট।

অভিযানের বিষয়ে ডা. সঞ্জীব দাস বলেন, অভিযানে পথচারী ও গণপরিবহনের যাত্রীরা মাস্ক পড়ছেন কি না তা দেখছি। সার্বিকভাবে আমরা দেখেছি অনেকে মাস্ক ছাড়া বের হয়েছেন, কেউ কেউ আবার মাস্ক পকেটে রাখছেন। কয়েকজনকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। ‘পরবর্তীতে মাস্ক পড়বে’ এ মর্মে মুচলেকাও নেওয়া হয়েছে। অপরাধ বিবেচনায় অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের মূল উদ্দেশ সবাইকে সতর্ক করা।

বিধিনিষেধের আরেক শর্ত করোনা টিকার সনদ ছাড়া রেস্টুরেন্টে খাওয়া যাবে না। তবে বাস্তবের অবস্থা ছিলো ভিন্ন। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা গেছে, টিকা সনদ ছাড়াই খাচ্ছেন মানুষ।রেস্তোরাঁ মালিকরা বলছেন, তারা এমন নির্দেশনা পাননি।

তারা বলেছেন, রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খেতে চাইলে ভোক্তাকে করোনা টিকা গ্রহণের সনদ দেখাতে হবে- এমন নির্দেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

রাজধানীর নামকরা এক রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক বলেন, ‘করোনার মধ্যে দীর্ঘদিন আমাদের ব্যবসা বন্ধ ছিল। কিছুদিন হলো রেস্তোরাঁয় ক্রেতা আসা শুরু হয়েছে। এখন নতুন করে সরকার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেটা আমাদের ব্যবসায় ধস নামাবে। সরকারের উচিত আগে সবার টিকা নিশ্চিত করা। তারপর এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। তা না হলে শুধু শুধুই ভোগান্তি বাড়বে।’

অন্যদিকে সকাল থেকে বাসেও দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বিধিনিষেধের শর্ত ছিলো, বাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করবে। তবে সকালে অফিসগামী যাত্রীদের গাদাগাদি করে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। 

এর প্রেক্ষিতে বিকেলে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। শনিবার থেকে যত আসন তত যাত্রী নিয়ে চলবে বাস। 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এ সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।

তিনি বলেন, বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার আমাদের জানিয়েছেন শনিবার থেকে গণপরিবহনের যত আসন তত যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে। কারণ অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করলে পরিবহন সংকট দেখা দেয়। এক্ষেত্রে যাত্রী এবং পরিবহন চালক ও হেলপারদের কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে হবে।

খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা সব পরিবহন মালিকদের বিআরটিএর এ বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। এক্ষেত্রে যারা সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মানবে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সড়কে পুলিশ প্রশাসনকে আমরা অনুরোধ করেছি তারা যাতে বিষয়টি দেখেন। এজন্য আমাদের হেলপার ও চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, সোমবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ইস্যুতে ১১ বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। 

করোনার ১১টি বিধিনিষেধে যা আছে:১. দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেঁস্তোরাসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

২. অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।

৩. রেঁস্তোরায় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।

৪. ১২ বছরের ঊর্ধ্বের সকল ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

৫. স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরসমূহে স্ক্রিনিং-এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টসমূহে ক্রু-দের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতেও আগত ট্রাকের সাথে শুধুমাত্র ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

৬. ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্বপ্রকার যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে।

৭. বিদেশ থেকে আগত যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন ও Rapid Antigen Test করতে হবে।

৮. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সকল মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামগণ সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

৯. সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা গ্রহণ করবে।

১০. কোভিড আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানে সর্বপ্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশসমূহ পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।

১১. কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।