English Version
আপডেট : ১৪ আগস্ট, ২০১৭ ১২:৫৮

জালে ইলিশ,জেলেদের মুখে হাসি

অনলাইন ডেস্ক
জালে ইলিশ,জেলেদের মুখে হাসি

সীতাকুণ্ড, ১৪ আগস্ট- এখন সাগরে গিয়ে কোনো জেলে খালি হাতে ফিরছে না। প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। সীতাকুণ্ডের প্রতিটি ঘাটে ইলিশভর্তি নৌকা নিয়ে ফিরছে জেলেরা। ছোট-বড় সব ধরনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে দামও মোটামুটি ভালো। তাই কষ্ট করলেও খুশি আমরা। কথাগুলো বললেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাটঘর জেলেপাড়ার বাসিন্দা বাবুল জলদাশ। মাছ ধরাই বাবুলের একমাত্র পেশা। 

তিনি আরো বলেন, আমরা (জেলেরা) বছরের ৯ মাস কষ্ট করে চলি। বাকি তিন মাস (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) ইলিশের মৌসুম। এ সময় সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। এ ইলিশ বিক্রি করেই জেলেরা সারা বছরের জন্য সঞ্চয় করে রাখের। কিন্তু এ বছর মৌসুমের প্রথম মাস জুলাইয়ে বঙ্গোপসাগরের সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ চ্যানেলে তেমন কোনো ইলিশ ধরা পড়েনি। ফলে আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। যদি আগস্ট-সেপ্টেম্বরেও ইলিশ ধরা না পড়ত তাহলে ঋণ করে সংসার চালাতে হতো সবাইকে। কিন্তু গত চার-পাঁচ দিন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। বাবুল আরো বলেন, একবার সাগরে গিয়ে আমরা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার ইলিশ পাচ্ছি। প্রতি নৌকায় তিন থেকে চারজন জেলে থাকি। এই টাকা সমান ভাগ করে নিই। অর্থাৎ একবার সাগরে গেলে ছয় থেকে সাত হাজার টাকার ইলিশ পাচ্ছি। এভাবে দিনে ও রাতে দুইবার মাছ ধরলে এক দিনে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হচ্ছে।

বাবুলের সঙ্গে একমত কুমিরা দক্ষিণ জেলেপাড়ার মানিক জলদাশ। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগেও আমরা ইলিশ নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু চার দিন মাছ পড়ছে প্রচুর। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসছে জালে। দামও পাচ্ছি ভালো। সাইজ অনুযায়ী বিভিন্ন দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। একদম ছোট সাইজের ইলিশ ১০০-১৫০ টাকা কেজি, তার চেয়ে বড়গুলো ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। মাঝারি ইলিশ ৪০০-৫০০ এবং বড়গুলো পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে কেজি ৭০০-৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা কিংবা আরো বেশি বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে উপজেলার সৈয়দপুর থেকে সলিমপুর পর্যন্ত সর্বত্রই প্রচুর রুপালি ইলিশ ধরা পড়ছে।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, কুমিরা-সন্দ্বীপ ঘাটঘরে প্রচুর মানুষ ইলিশ কিনতে জেলে নৌকাগুলোর কাছে ছোটাছুটি করছে। চট্টগ্রামের খুলশির ক্রেতা মো. আকরাম হোসেন বলেন, ‘শুনেছি এখানে ঘাটে সস্তায় টাটকা ইলিশ পাওয়া যায়। তাই ইলিশ কিনতে গাড়ি নিয়ে চলে এসেছি। এখান থেকে দুই ঝাঁকা ইলিশ (আনুমানিক ২০ কেজি) পাইকারিতে কিনলাম সাড়ে তিন হাজার টাকায়। এর মধ্যে সাত থেকে আট কেজির মতো ছোট ইলিশ। অন্যগুলো বড়, মাঝারি আকৃতির।

বাঁশবাড়িয়া বোয়ালিয়া কূলের জেলে ও উপজেলা জেলে সমন্বয় পরিষদের সভাপতি উপেন্দ্র জলদাশ বলেন, সাগরে প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। আগামী অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোতে (মাছ ধরার সময়) আরো বেশি ইলিশ ধরা পড়বে বলে তিনি মনে করেন। এই জেলে নেতা আরো বলেন, এবার ভালো দিক হলো, এখন পর্যন্ত কোথাও জলদস্যুতার খবর মেলেনি। সাগরে কোস্ট গার্ড নিয়মিত টহল দিলে জেলেরা নিশ্চিন্তে ইলিশ ধরতে পারবে। এ ছাড়া উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, এবার প্রথম দিকে ইলিশ না পড়লেও গত কয়েক দিনে পূর্ণিমার জো থেকে ইলিশ পড়তে শুরু করেছে। জেলেরা প্রচুর ইলিশ পাচ্ছে। তবে বেশির ভাগই সাইজে কিছুটা ছোট। এখন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আরো বাড়বে বলে ধারণা করছেন তিনি।