মোবাইল অ্যাপ ‘মায়া আপা’য় বিনিয়োগ করছে ব্র্যাক

অ্যান্ড্রয়েডভিত্তিক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন মায়া আপা’য় বিনিয়োগ করছে ব্র্যাক। প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের দৈনন্দিন সমস্যামূলক নানা প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞ মতামত পৌঁছে দিতে মায়া আপা’র সঙ্গে ব্র্যাকের এই উদ্যোগ। পাশাপাশি ব্র্যাকের আরবান ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচি একটি পাইলট প্রোজেক্টে এই অ্যাপের মাধ্যমে গার্মেন্টস কারখানার ৫০ হাজার নারীশ্রমিককে সেবাদান করবে। বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে ব্র্যাক-মায়া আপার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ‘মায়া আপা’ হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ চাওয়ার এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে যে কেউ নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখে প্রশ্ন করতে পারেন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য সংক্রান্তসহ বিভিন্ন মনো-সামাজিক এবং আইনি সমস্যা সমাধানের পরামর্শ পাওয়া যায়। কেউ প্রশ্ন পাঠালে সঙ্গে সঙ্গে তা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের প্রোফাইলে চলে যায় এবং সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টার মধ্যে তারা এর জবাব দেন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মায়া আপার যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এই প্লাটফর্মে প্রায় দেড় লাখ প্রশ্ন করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ এই অ্যাপ ব্যবহার করছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ব্র্যাকের স্ট্র্যাটেজি, কমিউনিকেশনস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট-এর ঊর্ধ্বতন পরিচালক আসিফ সালেহর সঞ্চালনায় এই কার্যক্রমের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ডা. মুহাম্মাদ মুসা। মায়া আপার কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন মায়া’র প্রতিষ্ঠাতা আইভি এইচ রাসেল। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেন ডা. মুহাম্মাদ মুসা এবং আইভি এইচ রাসেল। ব্র্যাক-মায়া আপার এই যৌথ উদ্যোগে দেশের অসংখ্য মানুষ ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধান অতিথি তারানা হালিম বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছাতে তথ্যযোগাযোগ ও প্রযুক্তি যে অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে, আজকের আয়োজনটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এরকম সামাজিক উদ্যোগের সঙ্গে বিটিআরসি সবসময়ই পাশে থাকবে। উদ্যোক্তারা জানান, সারা পৃথিবীতে যে ডিজিটাল বিপ্লব ঘটছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষকে সংযুক্ত করতে চান তারা। এখানে প্রশ্ন করতে শুধু একটি মোবাইল নম্বরই যথেষ্ট, তবে কেউ চাইলে ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করেও প্রশ্ন করতে পারেন। ফলে ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই তাদের গোপনীয়তা বজায় রাখতে পারেন। আজ পর্যন্ত এই সেবা ব্যবহারকারীর মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী এবং ৪০ শতাংশ পুরুষ। যে কোন ধরনের অ্যান্ড্রয়েডভিত্তিক স্মার্টফোন অ্যাপ, ওয়েব এবং এসএমএসেও এ সেবাটি পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের শহুরে এবং গ্রামীণ মানুষের কাছে তথ্য ও পরামর্শ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। https://goo.gl/LTW2OA লিংকটি ডাউনলোড করে যে কেউ এই সেবা নিতে পারবেন। ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ডা. মুহাম্মাদ মুসা এই চুক্তি স্বাক্ষরের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে উন্নতমানের সেবা পৌঁছে দেওয়া। তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে এই কার্যক্রমকে সম্পৃক্ত করে এই সেবা আমরা আরো বেশি দ্রুততর উপায়ে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। মায়ার প্রতিষ্ঠাতা আইভি এইচ রাসেল বলেন, ‘মায়া আপা এবং আমি ব্র্যাকের এই অঙ্গীকার পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। ব্র্যাকের রয়েছে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়ার মত সুবিধা। এর মধ্য দিয়ে বৃহত্তর সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল কিছু এখন প্রস্তুত থাকবে। এর পাশাপাশি মেশিন লার্নিং, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়জে প্রসেসিং-এ আমাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মোবাইল ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধতর করতে এখন ব্যাপক বিনিয়োগ করা হবে’ উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে রবি-র সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মায়া আপা প্লাস নামে একটি সার্ভিস চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ১০ মিনিটের মধ্যেই গ্রাহকরা প্রশ্নের জবাব পাবেন।