সরকারের বাকি সময়টুকুকে আরো চ্যালেঞ্জিং

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের বাকি সময়টুকুকে আরো চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে সরকারের উন্নয়ন কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের আরো আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ৩য় বছর শেষ করে আবার ৪র্থ বছরের কাজ শুরু করেছি। কাজেই এখনকার পথটা আরো কঠিন পথ। আমাদের যেই কাজগুলি রয়েছে সেগুলি শেষ করতে হবে। যাতে দেশের মানুষ ভাল থাকে।’
আওয়ামী লীগের শক্তি সততার শক্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় পদ্মা সেতু নির্মাণে নিজস্ব উদ্যোগ গ্রহণে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে একদিকে যেমন আমরা পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি তেমনি অন্যান্য দেশগুলোও আমাদের এই উদ্যোগ দেখে খরস্রোতা নদীর উপর সেতু নির্মাণে সাহসী হয়ে উঠতে পারে। আগে খরস্রোতা নদীর ওপর অনেকেই সেতু করতে চাইত না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা আজ বিকেলে দলের ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে এক আকস্মিক সফরে এসে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে একথা বলেন।
আওয়ামী লীগের কর্মীদের একটা কথা মনে সবসময় মনে রাখতে হবে। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। এই কথা আর চিন্তাটা একজন রাজনীতিবিদের মাথায় থাকলে যে কোন সাফল্য সে আনতে পারে বলেই আমি বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার বাবাকে দেখেছি বাবার কাছ থেকে শিখেছি, মাকে দেখেও শিখেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মাকেও দেখেছি মায়ের যে ত্যাগ কিন্তু কখনই তিনি কোন জিনিষের জন্য আফসোস করেননি। বরং এই দলের জন্য তিনি নিজের গহনাটি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। সব সময়ই আমার বাবার পাশেপাশে তিনি থেকেছেন। প্রতিটি কাজে তিনি সহযোগিতা করেছেন। কাজেই আমিওতো সেই পরিবার থেকেই এসেছি। আমাদের কাজই হচ্ছে দেশের মানুষের জন্য কাজ করা।
এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী দুদিন আগেই ১১ জানুয়ারি অতিক্রান্ত হবার প্রসংগ উল্লেখ করে বলেন, সে সময়ে সরকারি দলে যারা দুদিন আগেও ছিল, ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, তাদেরকে বাদ দিয়ে আমাকেই আগে গ্রেপ্তার করা হলো। আমরা দেশের স্বাধীনতা এনেছি। অথচ দেখা যায় আঘাতটা সবসময় আমাদের ওপরই আগে আসে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাক সেই দুর্দিন কেটে গেছে। আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি। তবে, আমাদের পুরনো দিনের কথাও মনে রাখতে হবে এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা বার্তা সব সময় মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে-আওয়ামী লীগ আসলে দেশের উন্নতি হয়। ’৯৬ থেকে ২০০১ যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন দেশের উন্নয়ন করে গিয়েছিলাম। ২০০১ থেকে ২০০৬ বিএনপি লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিল। দেশব্যাপী সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, লুটতরাজের বিভীষিকা সৃষ্টি করে জঙ্গীবাদ প্রতিষ্ঠা করে। আমাদের অর্জনগুলো তারা ধরে রাখতে পারেনি বরং দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৮ এ জনগণ আমাদের উপর আস্থা রেখে আমাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা যা যা ঘোষণা দিয়েছিলাম তা সম্পন্ন করেছি। অনেক ক্ষেত্রে যা বলেছি তার চেয়ে বেশিও করেছি। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আমরা যা বলি তা করি, করতে পারি এবং করি। আমাদের রাজনীতি জনগণের জন্য। আমাদের রাজনীতি জনগণের স্বার্থে। শুধু নিজের ভাগ্য গড়ার রাজনীতি নয়, জনগণের ভাগ্য গড়ার রাজনীতি করি। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। শেখ হাসিনা বলেন, এখন সামনে ইলেকশন। এই ইলেকশনে আগামীর ম্যানিফেস্টো কি হবে-সে ব্যাপারে আমরা এখনই চিন্তা-ভাবনা করছি। আলাদা সেল গঠন করে কাজ করছি। ২০২১ সাল পর্যন্ত আমাদের করণীয় ইতোমধ্যেই আমরা ঘোষণা করেছি। যার অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে আমরা আরো বেশি করতে চাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলব। সেখানে আমাদের কি কি কাজ করতে হবে-সেটা একদিকে করা হচ্ছে। আরেকটা হচ্ছে-এমডিজি বাস্তবায়নের পর আমরা এসডিজি’র ৫৬টি গোল বাস্তবায়নে কাজ করছি। সরকারিভাবে আমরা কাজগুলো করে যাচ্ছি এবং দলীয় ম্যানিফেস্টোতেও এগুলোর উল্লেখ করা আছে। সেভাবেই আমরা কাজ করছি। কাজেই ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা কঠিন একটা কাজ নয়। ইনশাল্লাহ আমরা সেটা পারব। অবশ্য এখন আমাদের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ বলা হচ্ছে। আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ে থাকতে চাই না। এদেশ হবে সমৃদ্ধ দেশ।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বে একটা মর্যাদা পূর্ণ দেশ হিসাবে তুলে ধরতে চাই। এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি বলেই আজকে সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ একটা মর্যাদা পূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশ্বেও অনেক নেতৃবৃন্দই বিস্ময় প্রকাশ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেখানেই যাই বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়করা জানতে চান এটা কি করে সম্ভব হল। বিশ্বমন্দার মাঝেও ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র বিমোচন, মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন কিভাবে সম্ভব হল?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের জন্য কাজ করি, মানুষের জন্য কাজ করি। দেশের মানুষের জন্য কাজ করব-এ চিন্তা ধারাটা যদি মাথায় থাকে, এই নীতিটা যদি ঠিক থাকে-তাহলে আমি বিশ্বাস করি, যে কোন চড়াই-উৎরাই পার হয়ে যে কোন কাজই করা সম্ভব।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি নিজের কথা কখনো চিন্তা করিনা। দেশের মানুষ ভাল আছে কিনা-দু’বেলা পেট ভরে খেতে পারছে কিনা, রোগে-শোকে চিকিৎসা পাচ্ছে কিনা, একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছে কিনা, কতটুকু উন্নত জীবন ভোগ করছে সে কথাই সব সময় চিন্তা করি। কাজেই এটা হচ্ছে একটা দায়িত্ব বোধ। এ দেশ আমাদের। আমরাই দেশ স্বাধীন করেছি, কাজেই আমরাই তো দেশের জন্য কাজ করব।
প্রধানমন্ত্রী ৭৫’র বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে বলেন, ৭৫’র পরে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা এসেছে অবৈধভাবে, সংবিধান লঙ্ঘন করে। তারা এসেছে লুটপাট করতে। নিজেরা কি খাবে, কি করবে, কিভাবে বিত্ত-বৈভব গড়ে তুলবে সে চিন্তাই তারা সব সময় করত। যে কারণে দেশের কোন উন্নয়ন করতে পারেনি। তারা কেবল দেশের অর্থ সম্পদ লুট করে নিজেদের উন্নয়ন করেছে। এখানেই বিরাট তফাত-আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা রাজনীতি করবেন তারা যদি নিজের জন্য চিন্তা করেন তাহলে আর দেশের জন্য করা হবে না। কাজ করতে হবে মানুষের জন্য, যেটা জাতির পিতা সব সময় করে গেছেন। আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, তিনি ঘর সংসারের কি হবে তা নিয়ে কখনো চিন্তা করেননি, একটাই চিন্তা করেছেন-দেশের মানুষের কি হবে। কাজেই আমরা যদি একটু কাজ করতে পারি তাহলেই আমরা কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছে যেতে পারব। আজকে এটা ভাবতেও ভাল লাগে যখন দেখি দেশের মানুষ ভাল আছে। দেশের মানুষ ভাল থাকলে তাঁর (জাতির পিতার) আত্মাটা শান্তি পাবে। তিনি বেহেস্ত থেকে সবই দেখছেন। যদি তিনি বেঁচে থাকতেন তাহলে ২০/২৫ বছর আগেই আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ হতে পারত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পায়। এটা তো স্বাভাবিক। এই লুটেরারা যদি ক্ষমতায় আসে তখনতো দেশের মাটিও খাবলে খাবে। এটাই হচ্ছে তাদের কাজ।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান।বাসস।