গৌরবের বিজয় দিবস আজ

আজ ১৬ ডিসেম্বর। গৌরবের মহান বিজয় দিবস।বিশ্বের মানচিত্রে নতুন স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে ৪৫ বছর আগে এই দিনে। বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অবস্মরণীয় দিন। আজকের এই দিনেই লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বিজয় অর্জিত হয়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ, নিপীড়ন আর দুঃশাসনের প্রাচীর ভেঙে বাংলার আকাশে বিজয়ের সূর্য উদয় হয় আরও রক্তিম হয়ে। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের কালো অধ্যায়ের অবসান হয়েছিল সেদিন।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার আকাশে যে সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়, ৯১ হাজার ৫শ’ ৪৯ জন পাকিস্তানি সৈন্যের আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে সেই সূর্য আবারও উদিত হয়। ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সর্বাধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের পর নত মস্তকে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজয় মেনে নেয়। পৃথিবীতে নতুন একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। আর এই বিজয়ের মহানায়ক হিসেবে যিনি ইতিহাসে চির অম্লান ও ভাস্বর হয়ে আছেন তিনি হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ত্রিশ লাখ বাঙালির আত্মহুতি ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ, তার সৃষ্টির ইতিহাস একদিনের নয়। দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম শেষে জন্ম নেয় একটি নতুন দেশ, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
ইংরেজ শাসনামলে বাঙালি রক্ত দিয়েছে। লড়াই করেছে শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে। সোয়া ২শ’ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংগ্রাম ও লড়াইয়ে রক্ত দিয়েছে এই বাঙালি জাতি।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনেও ছিলো বাঙালিদের অবদান। বাঙালিরাই ছিলো পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল কারিগর। কিন্তু কয়েক বছরেই বাঙালির মোহভঙ্গ হয়। যে শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে তারা ইংরেজদের বিতাড়িত করেছিল সেই একই রকম শোষণ বঞ্চনার মুখোমুখি হয়ে পড়ে কয়েক বছরের মধ্যেই। শুরু হয় সংগ্রামের নতুন যুগ। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সর্বক্ষেত্রেই তারা বঞ্চিত করতো বাঙালিদের। এমনকি নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতেও তারা অস্বীকার করতো।
৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬`র ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এ সবই ইতিহাসের বাঁক ঘুরিয়ে দেয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচন পূর্ববাংলা জয়ী হলে শুরু হয় নতুন অধ্যায়ের। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে আসে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই ঘোষণার মধ্যদিয়েই বাঙালি জাতি উজ্জিবীত হয়ে স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশ নিয়ে বিজয় ছিঁনিয়ে আনে।
মহান বিজয় দিবস পালনে যেন নতুন সাজে সেজেছে বাংলাদেশ। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো রাজধানী ঢাকাকেও সাজানো হয়েছে আলোর বর্ণিল সাজে। যে দিকেই তাকানো যায় শুরু লাল-নীল-বেগুনী নানা রংয়ের আলো। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
আজ প্রত্যূষে ঢাকায় তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের সূচনা হবে। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী দিবসটি উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দেবেন। ভোরে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ও বিএনপি নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকেও জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর কথা রয়েছে। স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে ঢল নামবে সাধারণ মানুষের।