English Version
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০১:২৫

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক বেদনাঘন দিন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের মাত্র দু’দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর জাতির সূর্য সন্তানদের হত্যায় মেতে উঠেছে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোষররা। হত্যা করা হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।

১৯৭১ সালের এই দিনে ঘাতক বাহিনী পরাজয় নিশ্চিত জেনে এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতেছিল। তারা চেয়েছিল বাঙালিকে মেধা-মননশূন্য করতে। সে জন্য তারা বেছে বেছে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দার্শনিক ও সংস্কৃতিক্ষেত্রের অগ্রগণ্য মানুষদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। পাকিস্তানি ঘাতকদের এ বর্বর হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছিল রাজাকার-আলবদর বাহিনী।

তারা বুদ্ধিজীবীদের ঘর থেকে চোখ বেঁধে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। হত্যা করে তাদের লাশ ফেলে রাখে নিস্তব্ধ ভূতুড়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন বধ্যভূমিতে। তাদেরকে চোখ বেঁধে হত্যা করে সেদিন পাকিস্তানিরা। একাত্তরের ডিসেম্বরের হেমন্তের স্নিগ্ধ এক সকালে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিধনের দুঃখ ভারাক্রান্ত খবরটি সেদিন সকলের সামনে প্রতিফলিত হয়। আর সেই থেকে জাতি দিনটি পালন করে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেবে। 

বিজয় অর্জনের পরে রায়েরবাজারের পরিত্যক্ত ইটখোলা, মিরপুরসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে একে একে পাওয়া যায় হাত-পা-চোখ বাঁধা দেশের খ্যাতিমান এই বুদ্ধিজীবীদের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। হত্যার আগে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল তাদের উপরে। এসব মৃতদেহ পাওয়ায় উন্মোচিত হয় ঘাতকদের বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা। এ ঘটনায় বিশ্ববিবেক স্তম্ভিত হয়ে পড়ে।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এস এ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, সেলিনা পারভীনসহ আরও অনেকে।

বিনয় এবং শ্রদ্ধায় জাতি আজ সেসব বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করবে। একই সাথে এবারও জাতির প্রত্যাশা, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যারা হত্যা করেছে তাদের কয়েক জনের রায় কার্যকর হলেও যারা বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে আছে অথবা পলাতক আছে তাদের বিচারের রায কার্যকর করে, দেশকে কলঙ্কমুক্ত করা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। দিনব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা, মৌন মিছিল ইত্যাদি। এ ছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও প্রার্থনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।