English Version
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৮:৫৩

সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদ বাতিল চান প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদ বাতিল চান প্রধান বিচারপতি

সংবিধানের দুটি ধারায় ‘দ্বৈত শাসনের’ অভিযোগ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘১১৬ এবং ১১৬ (এ) সংবিধানের প্রিন্সিপালসের সঙ্গে কনফ্লিক্ট করে। এ দুটি বিধান সংবিধানের পরিপন্থী। যা আমাদের পবিত্র বই থেকে অতি তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এটা থাকায় আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।’

শনিবার (১০ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদারের আইন পেশায় ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়।

প্রায় দেড় মাস আগে দেয়া এক বাণীতে যে অনুচ্ছেদকে প্রধান বিচারপতি ‘বিচার বিভাগের ধীরগতির অন্যতম কারণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন আজ তিনি তা সরাসরি সরিয়ে দিতে বললেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি কোনো এক অনুষ্ঠানে বলেছিলাম এদেশে দ্বৈত শাসন চলছে, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আইনমন্ত্রী বললেন, না চলছে না।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনের অভিভাবক, সংবিধানের অভিভাবক হয়ে বলছি, এটা যদি না হয় তাহলে আজকে আমরা বিচারকদের ডিসিপ্লিন রুলস কে করবে? সরকার করবে না আমরা বিচারকরা করবো? তাদের কন্ট্রোল, বদলি কোনো কিছুই আমরা করতে পারছি না। তাই এই অসাংবিধানিক প্রভিশনগুলো তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেয়া হবে বলে আমি আশা করি।’

তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে আমাদের ফান্ডামেন্টাল রাইটস খর্ব করা হচ্ছে, আমরা সুপ্রিম কোর্ট কারো পক্ষপাতিত্ব করি না। আপনারা যারা আইনজীবী আছেন তারাও কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করেন না। আপনারা যখন আইনের শাসনের কথা বলেন, ফান্ডামেন্টাল রাইটসের কথা বলেন, আপনারা যখন জনগণের কথা বলেন, আমি বলবো আপনাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। দেশের প্রতি সরকারের প্রতি কিছু দায়িত্ব আছে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনের পেশা সম্মানের পেশা। ক্রিম অব দ্যা সোসাইটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটা অংশ চলে যায় আইন পেশায়, একটা ক্ষুদ্র অংশ চলে যায় বিচার বিভাগে। তারা দুই ভাগে ভাগ হলেও তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য হলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা কার। সে অর্থে আমরা একই পরিবারের সদস্য। আইনজীবীরা হলো জাতির বিবেক। বিচারকরাও জাতির বিবেক। কিন্তু তাদের পক্ষে কোড অব কন্ডাক্টের কারণে কথা বলতে পারেন না পাবলিকলি।’

সংবিধানের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই সংবিধান একটি সোশ্যাল ডকুমেন্ট। এই সংবিধানে বলা আছে, আমাদের বঙ্গবন্ধু প্রথমেই বলেছেন এই দেশে এমন একটা সংবিধান হবে যেখানে কমপ্লিট জাস্টিস থাকবে, রুল অব ল মেইনটেইন করা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংবিধানের সঙ্গে তুলনা করা যায়। আমরা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি আমাদের সংবিধার এরকমই ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা দেখলাম এই সংবিধান ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে। এই সংবিধানে মৌলিক অধিকার রক্ষিত করা হেয়েছে। এই সংবিধানে রক্ষিত করা আছে যারা সমাজে অনুন্নত। সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ প্রটেকশন করে দিয়েছে জুডিশিয়ার রিভিউয়ের জন্য আসতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘আমারা সংবিধানের অসাংবিধানিক প্রবিশনগুলো বাতিল করেছি। কিন্তু আমরা এখনও দেখতে পারছি, বর্তমানে সংবিধানে যে ১১৬ ধারা এবং ১১৬ (এ) যথাক্রমে চতুর্থ এবং পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১১৬ এবং ১১৬ (এ) সন্নিবেশন করা হয়েছে। এ দুই বিধান থাকার পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু যে ১১৬ রাখার বিধান করেছিলেন, ইনডিপেন্ডেন্ট অব জুডিশিয়ালি এবং রুল অব ল আইনের শাসন বলতে কি রকম করতে হবে এটাকে আমরা বাদ দিয়ে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, আমরা পঞ্চম, সপ্তম, ত্রয়োদশ ও ষোড়শ সংশোধনীর প্রত্যেকটা সংশোধনী বাতিল করেছি। পার্লামেন্টের আইন করার যথেষ্ট ক্ষমতা আছে, পার্লামেন্ট সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের সংশোধন করতে পারবে। এমনকি সংবিধানকে বন্ধ করে দিতে পারবে। সংবিধান আমাদের সুপ্রিম কোর্টকে বন্ধ করে দিতে পারবে। এটা অল রেডি সেটেল হয়ে গেছে ভারতের সদানন্দের মামলায়। কিন্তু পার্লামেন্ট একটা জিনিস পারবে না, সেটা হলো, আজকে যদি সরকার বলে দেয় সুপ্রিম কোর্ট থাকবে না আমাদের কিছুই করার থাকবে না। পার্লামেন্টের এই ক্ষমতা আছে। কিন্তু পার্লামেন্টের এই ক্ষমতা নেই যে, মেইন পিলারস অব দি কনস্টিটিউশন। সংবিধানের মেইন পিলার যেটা আমরা পঞ্চম, ষষ্ঠ সংশোধনীসহ সবগুলো আমরা বাতিল করেছি যে, বেসিক স্ট্রাকচার অব দি কনস্টিটিউশন চেঞ্জ করে কোনো সংবিধান বা কোনো আইন করা যাবে না।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ সাবেক প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টে উভয় বিভাগের বিচারপতিসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।