দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ঝিনাইদহে ৪৫৮ চাঁদাবাজ

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঝিনাইদহে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫৮ চাঁদাবাজ। এদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন ১৮১ জন গডফাদার। তালিকা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিভাগে চাঁদাবাজের সংখ্যা বেশি। এরপরেই রয়েছে ঢাকা বিভাগের অবস্থান।
তবে গডফাদার বেশি ঢাকা বিভাগে। দেশের শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থা ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানের (ঢাকা মহানগর ছাড়া) মার্কেট, ফুটপাথ, শপিং মলে চাঁদাবাজি নিয়ে তৈরি করা এক বিশেষ প্রতিবেদন এমনটাই জানিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের চাঁদাবাজ ও তাদের গডফাদারদের নাম, তাদের দলীয় পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ঢাকা বিভাগে মোট চাঁদাবাজের সংখ্যা ১৬৪ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ১০০ জন, বিএনপি’র ১২ জন এবং সুবিধাবাদী-সন্ত্রাসী ও অন্যান্য ৫২ জন।
এসব চাঁদাবাজকে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন ৯১ জন গডফাদার। গডফাদারদের মধ্যে ৭১ জন আওয়ামী লীগের, বিএনপি’র তিনজন এবং অন্যান্য ১৭ জন। রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগে মার্কেট-ফুটপাথের ৭৩টি স্পটে চাঁদাবাজি সংঘটিত হতে পারে।
চট্টগ্রাম বিভাগ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বিভাগে মোট চাঁদাবাজের সংখ্যা ১৮৫ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৮৮ জন, বিএনপি’র ২৬ জন এবং সুবিধাবাদী-সন্ত্রাসী ও অন্যান্য ৭১ জন। এসব চাঁদাবাজকে পৃষ্ঠপোষকতা (গডফাদার) করছেন ৪৮ জন।
গডফাদারদের মধ্যে ২৮ জন আওয়ামী লীগের, বিএনপি’র দুজন এবং অন্যান্য ১৮ জন। মহানগরীসহ চট্টগ্রাম বিভাগে মার্কেট/ফুটপাথের ৮৪টি স্পটে চাঁদাবাজি সংঘটিত হতে পারে।
রাজশাহী বিভাগ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বিভাগে মোট চাঁদাবাজের সংখ্যা ৬৬ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৫৩ জন, বিএনপি’র ৫ জন এবং সুবিধাবাদী-সন্ত্রাসী ও অন্যান্য ৮ জন।
এসব চাঁদাবাজকে পৃষ্ঠপোষকতা (গডফাদার) করছেন ১৮ জন। গডফাদারদের মধ্যে ১৫ জন আওয়ামী লীগের, বিএনপি’র একজন এবং অন্যান্য দুজন।
মহানগরীসহ রাজশাহী বিভাগে মার্কেট-ফুটপাথের ৫৬টি স্পটে চাঁদাবাজি সংঘটিত হতে পারে। খুলনা, রংপুর, সিলেট ও বরিশাল বিভাগ সম্পর্কে বলা হয়েছে খুলনা, রংপুর, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে মোট চাঁদাবাজের সংখ্যা ৪৩ জন।
এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ২১ জন, বিএনপি’র ১১ জন এবং সুবিধাবাদী-সন্ত্রাসী ও অন্যান্য ১১ জন। এসব চাঁদাবাজকে পৃষ্ঠপোষকতা (গডফাদার) করছেন ২৪ জন।
গডফাদারদের মধ্যে ১৫ জন আওয়ামী লীগের, বিএনপি’র তিনজন এবং অন্যান্য ছয়জন।
বিশেষ প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ধর্মীয় উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন বিপণি বিতান, সুপার মার্কেট, ফুটপাথসহ শহরের অলিগলিতে ব্যাপক কেনাবেচা হয়ে থাকে।
আর এই উৎসবগুলোকে সামনে রেখে দেশের মহানগরী, জেলা ও উপজেলায় মার্কেট ও ফুটপাথে ব্যাপকহারে চাঁদাবাজির তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। এজন্য বিশেষ সংস্থা থেকে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সারা দেশের মার্কেট-ফুটপাথে চাঁদাবাজি সংঘটনের স্থান, সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের নাম এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ সম্পর্কে অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়। এর ভিত্তিতে তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
বিশেষ প্রতিবেদনে মন্তব্য আকারে বলা হয়েছে, ঈদকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন সুবিধাবাদী ব্যক্তি বিভিন্ন মার্কেট- ফুটপাথে চাঁদাবাজি করলে দলের ও বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।
এসব চাঁদাবাজদের সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগে থেকে জানলেও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে তাদের তেমন কোনো কর্মকান্ড পরিলতি হয় না। প্রতিবেদনে চারটি সুপারিশ দিয়ে বলা হয়েছে, ঈদুল আজহা উপলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বেচাকেনা নির্বিঘ্ন করতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
এছাড়া, দলীয় পরিচয়ধারী চাঁদাবাজদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দেয়া যায়।
একই সঙ্গে চাঁদাবাজদের গডফাদার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের কেন্দ্র থেকে সতর্ক করার সুপারিশ করা যেতে পারে।
এতে বলা হয়েছে, কেউ যাতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া যায়।
এছাড়াও ঈদকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সক্রিয় থাকার পরামর্শ দেয়া যায়। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য চাঁদাবাজির মতো কাজে সহযোগিতা করলে তাদের শনাক্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া যায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ প্রতিবেদনের আলোকে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে প্রযয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।