English Version
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৫:৪৭

স্ত্রীর মৃত্যুর পর ফেসবুকে স্বামীর স্ট্যাটাস

অনলাইন ডেস্ক
স্ত্রীর মৃত্যুর পর ফেসবুকে স্বামীর স্ট্যাটাস

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলির মৃত্যুর ঘটনায় সামাজিক গনমাধ্যম ফেসবুকে একই বিভাগের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা নানা কথা লিখে স্ট্যাটাস দিচ্ছিল। কেউ কেউ জলির আত্মহত্যার পেছনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তার সাবেক স্বামী ও একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভির আহমেদকে দায়ী করেন।

এসব নিয়ে শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) আকতার জাহান জলির সাবেক স্বামী তানভির আহমেদ ফেসবুকে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন।

তানভির আহমেদ তার স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘শনিবার থেকে মিডিয়াসহ অনেকেরই কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। তাই কিছু উত্তর এখানে দিয়ে রাখলাম। আমাদের জীবনে সমস্যার সূত্রপাত ২০১০ সালে। বিষয়টি আমার সহকর্মীরাসহ ক্যাম্পাসের অনেকেই জানেন। ফলে ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমরা মিউচুয়ালি আলাদা হয়ে যাই। তিনি আমাদের সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। কিন্তু প্রায় ২ সপ্তাহ পরেই ছেলেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন এবং জানান যে, শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি ছেলের দায়িত্ব নিতে পারছেন না। আমাদের ছেলে তখন ক্লাশ ফোরে উঠেছে। পরবর্তী বছরগুলোতে আমি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অনুরোধ জানালেও নিজের অসুস্থতার কারণে তিনি ছেলেকে নিজের কাছে নিতে অপরাগতা জানিয়েছিলেন। তখন থেকে ২০১৬ সালের ৩০ মে পর্যন্ত ছেলে আমার কাছেই ছিল। তবে প্রতিটি ঈদ ও স্কুলের ভ্যাকেশনে মায়ের সাথে নানীবাড়িতে যেত। সে রাজশাহীর প্যারামাউন্ট স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিল।

সম্প্রতি তার মা তাকে ঢাকার স্কুলে পড়াশোনা করানোর ইচ্ছা আমার মায়ের কাছে জানান। আমার কাছেও এটি সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ভাল প্রস্তাব মনে হয়। ঢাকার স্কুলটিতে সেশন জানুয়ারিতে শুরু হওয়ায় আগামী জানুয়ারিতে তার ক্লাশ নাইনে ভর্তি হওয়ার কথা। ২০১১ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আকতার জাহানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ ছিল না।

গত ২৬ আগস্ট ২০১৩ সালে তিনি অফিসিয়ালি ডিভোর্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আমাকে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠান। আমিও তাতে সম্মতি দিই। এই ৫ বছরে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন-যাপন, ভালো-মন্দ কোন কিছুর সাথেই আমি সংশ্লিষ্ট ছিলাম না। তিনি নতুন করে জীবন গুছিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। আমি তাতে বাঁধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে চাইনি। তিনি নিঃসন্দেহে একজন ভাল শিক্ষক, সহকর্মীদের কাছে একজন ভাল সহকর্মী এবং ছাত্রদের কাছে মাতৃতুল্য অভিভাবক।

তানভির আহমেদ লিখেছেন, ‘আমার সাথে তাঁর বহু আগেই শেষ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিগত সম্পর্কের থেকে মুখ্য হলো তিনি এই ৫ বছরে যাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাঁর বর্তমান সময়ের সুখ-দুঃখ, সাফল্য-ব্যর্থতা সম্পর্কে তারাই সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন। এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি মোটেই সঠিক ব্যক্তি নই।’

এদিকে, শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাবির জুবেরী ভবন থেকে নিজের আবাসিক কক্ষের দরজা ভেঙে সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ রামেক হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। শনিবার দুপুরে তার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে শনিবার বিকেল ৫টায় ওই শিক্ষকের ছোট ভাই কামরুল হাসান রতন বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘পেনাল কোড ৩০৬ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। ধারাটির অর্থ হলো, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া। তবে এজাহারে কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কারো না কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে শিক্ষক আকতার জাহান আত্মহত্যা করেছেন বলে এজাহারে বলা হয়েছে।’

ওসি আরো বলেন, ‘মামলাটি খুবই স্পর্শকাতর। অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গেই মামলাটির তদন্ত করা হবে। আকতার জাহানকে কেউ আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছেন বলে তদন্তে বেরিয়ে আসলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’