English Version
আপডেট : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১২:৫৭

প্রধান শিক্ষক ছাড়া চলছে ঝালকাঠির ২৩৪টি স্কুল

সুতীর্থ বড়াল
প্রধান শিক্ষক ছাড়া চলছে ঝালকাঠির ২৩৪টি স্কুল

ঝালকাঠির ৪ উপজেলার ২৩৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়া। প্রাক-প্রাথমিকে শিক্ষক নেই ২৯৩টি স্কুলে। সাধারণ সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা ১৬৫। এছাড়া অনুমোদন নেই শতাধিক পদের। এসব কারণে চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৭৮। এর মধ্যে ৩৬৪টি পুরনো সরকারি, ২০৭টি নতুন জাতীয়করণকৃত ও সাতটি স্কুল নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ২৯টি স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদের অনুমোদনই নেই।

এর মধ্যে ৩০ বছর আগে সরকারি হওয়া কাঁঠালিয়ার বলতলা নবলক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও রয়েছে। এছাড়া নতুন জাতীয়করণকৃত ২১টি ও নতুন প্রতিষ্ঠা করা সাতটি স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ অনুমোদিত হয়নি। বাকি ৫৪৯ স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ৩৪৪ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ২০৫।

ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ১৬০ স্কুলের মধ্যে ৬৩টি, নলছিটি উপজেলায় ১৬৫টি স্কুলের মধ্যে ৬৯টি, রাজাপুর উপজেলায় ১২১টি স্কুলের মধ্যে ৫২টি ও কাঁঠালিয়া উপজেলায় ১৩২টি স্কুলের মধ্যে ৫০টি স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই। সহকারী শিক্ষকরাই এসব স্কুলে প্রধান শিক্ষকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ফলে তার পক্ষেও নিয়মিত স্কুলে ক্লাস নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রতিটি স্কুলে একজন করে সহকারী শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত শুধু পুরানো সরকারি ৩৬৪টি স্কুলে ওই শিক্ষক পদের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে কর্মরত ২৮৫ জন এবং শূন্য পদ ৭৯। নতুন জাতীয়করণকৃত ২০৭টি ও নতুন প্রতিষ্ঠিত ৭টিসহ ২১৪টি স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষকের পদ অনুমোদন করা হয়নি।

বর্তমানে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ৭৭টি, নলছিটি উপজেলায় ৮৬টি, রাজাপুর উপজেলায় ৬০টি ও কাঁঠালিয়া উপজেলায় ৭০টি স্কুল চলছে প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ছাড়া। সংশ্লিষ্ট স্কুলের সাধারণ সহকারী শিক্ষকদেরই প্রাক-প্রাথমিক ক্লাস দেখভাল করতে হয়।

সাধারণ সহকারী শিক্ষকের দুই হাজার ৩৯৯টি পদ থাকার কথা থাকলেও অনুমোদিত পদের সংখ্যা দুই হাজার ২৮৭টি। এর মধ্যে কর্মরত দুই হাজার ১২২ ও শূন্য পদের সংখ্যা ১৬৫। ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ৬১, নলছিটি উপজেলায় ৩৬, রাজাপুর উপজেলায় ২৫ ও কাঁঠালিয়া উপজেলায় ৪৩টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।

নতুন জাতীয়করণকৃত ২১টি স্কুলে ৮৪ জন শিক্ষক কাজ করলেও তাদের পদগুলোর অনুমোদন মেলেনি। এছাড়া নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত সাতটি সরকারি স্কুলে সহকারী শিক্ষকের ২৮টি পদের অনুমোদন নেই।

অন্যদিকে, ২০১৩ সালে জেলার ৪টি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চালু করা হলেও এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত জনবল দেয়া হয়নি। বাড়ানো হয়নি শিক্ষকের সুযোগ-সুবিধাও। অনেক শিক্ষক এ ধরনের স্কুলে কাজ করতে আগ্রহী না। ফলে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জিত হচ্ছে না।

প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হওয়ারর কথা স্বীকার করে ঝালকাঠির জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিখিল চন্দ্র হালদার জানান, অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ভাল কাজ করার চেষ্টা রয়েছে। বিভিন্ন জটিলতার কারণে সহজেই শিক্ষক সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না।

তিনি জানান, সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন সরাসরি নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। পিএসসির সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। সম্প্রতি ৩৪তম বিসিএস থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য যেসব স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই তার তালিকা সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে জেলার কিছু শূন্য পদ পূরণের সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরো জানান, সাধারণ সহকারী শিক্ষকদের শুন্য পদ পূরণের জন্য আবেদনপত্রও গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে হাইকোর্টে মামলার কারণে সব আটকে রয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পূরণের কথা। বিষয়টি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

এছাড়া রেজিস্ট্রার্ড স্কুল সরকারিকরণের প্রথম পর্যায়ের স্কুলগুলোর সঙ্গে শিক্ষকদেরও জাতীয়করণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে শুধু স্কুলগুলো জাতীয়করণ হয়েছে। শিক্ষকরা এখনো তার বাইরে রয়েছেন।

তিনি বলেন, শিক্ষক সমস্যার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে কবে নাগাদ সমাধান মিলবে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়।