English Version
আপডেট : ৩০ আগস্ট, ২০১৬ ২১:৫৩

‘জঙ্গিদের জন্য খালেদার কেন মায়াকান্না’

অনলাইন ডেস্ক
‘জঙ্গিদের জন্য খালেদার কেন মায়াকান্না’

সাম্প্রতিক নিহত জঙ্গিদের পরিচয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে দেওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেসব জঙ্গি মারা যাচ্ছে, তাদের জন্য খালেদা জিয়ার এত মায়াকান্না কেন?

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিএনপি নেত্রী বলেছেন, জঙ্গিদের বাঁচিয়ে রেখে শিকড়ের সন্ধান কেন করা হচ্ছে না? তার এই বক্তব্যের পর শিকড়ের সন্ধান করার আর প্রয়োজন পড়ে না।  তিনিই যে জঙ্গিদের মূল শিকড়, সেটিও জনগণ জানে। এদেরও রেহাই নেই বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, জঙ্গিদের পক্ষ নিয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘এদের মারা হলো কেন? বাঁচিয়ে রাখা হলো না কেন?’ এদের বাঁচিয়ে রাখা হলে খালেদা জিয়া কী তাদের পূজা দেবেন- এটিই আমার প্রশ্ন। শেখ হাসিনা বলেন, 'জঙ্গিদের বাঁচিয়ে রেখে জঙ্গিদের শিকড় খুঁজে বের করার কথাও খালেদা জিয়া বলেছেন। তার এ বক্তব্যের পর আর শিকড়ের সন্ধান করার প্রয়োজন হয় না। যিনি নিজেই জঙ্গিদের মদদ দেন, তখন সেখানেই যে শিকড় রয়েছে- সেটি আর খুঁজে দেখা লাগে না। শিকড় সেখানেই কী-না, সেটিও তদন্ত করতে হবে। আর শিকড়ের সন্ধানে আর যেতে হবে না। কেননা এখন শিকড় নিজেই কথা বলছেন।' দেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'জাতির দাবি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। আমরা সেটা শুরু করেছি। অনেক হুমকি-ধামকি পেয়েছি। কিন্তু আমি একটা জিনিস মনে রেখেছি আমি জাতির পিতার কন্যা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে বিচারের কাজে হাত দিয়েছেন, শত হুমকি-ধামকি আসলেও আমি সে কাজ থেকে পিছপা হব না। সব কিছু মোকাবেলা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, রায়ও হচ্ছে। সেই রায় বাস্তবায়নও করছি। একেকটি বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। আর জাতি শ্বাস ফেলে বাঁচছে। দেশ অভিশাপের কবল থেকে মুক্ত হচ্ছে।' যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাদীদের পক্ষাবলম্বনকারীদের ভূমিকারও কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, 'একজন আইনজীবী কিভাবে এসব যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে দাঁড়ান, বুঝতে পারি না। টাকাই কি সব? আবার তারাই বলে সরকার পরিবর্তন হলে নাকি ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তারা দেশের জনগণকে চেনেন না। যারা এ কথা বলেন তাদেরও ব্যবস্থা জনগণই নেবে। রাজাকারের দোসর হিসাবে তাদেরও বিচার হবে। এটিও তাদের মনে রাখা উচিত।' বক্তব্যের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিয়োগান্তক ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। বারবার অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি। এতে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত সবাইকেও চোখ মুছতে দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, '১৫ আগস্ট জাতির জীবনে একটি কলঙ্কময় দিন। মানুষ একটা শোক সইতে পারে না। আর আমি এতগুলো স্বজন হারালাম। আমি আর আমার বোন রেহানা হঠাৎ করে বিদেশে বসে জানতে পারলাম আমাদের কেউ নাই।' শেখ হাসিনা বলেন, 'আমার কাছে কেউ বিচার চাইতে এলে ১৫ আগস্টের ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়। কেউ কি আমাদের কথা ভাবেন! কেউ যখন বিচার চায় আমার মনে পড়ে আমরা তো বিচার চাইতে পারতাম না। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। পরে রায়ও কার্যকর হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। জাতির বুকে যে অপরাধবোধ ছিল, সেটি কেটে গেছে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমার রাজনীতি করার লক্ষ্য বাবার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। গরীব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। সেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসি। সকল শোক-দুঃখ বুকে চাপা দিয়ে জাতির পিতার লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলার মাটিতে বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, তাদের অন্ন, বস্ত্র বাসস্থান নিশ্চিত করা, শিক্ষার ব্যবস্থা করা। আমি তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে কাজ করছি।' ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, এ কে এম রহমতউল্লাহ, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান খান কামাল, মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, শাহে আলম মুরাদ, সাদেক খান, হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন প্রমুখ।