‘১০ বছরে এতো পানি আসেনি পদ্মায়’

পদ্মা নদীতে পানি প্রবাহ বেড়েছে আরও। পানি বাড়ায় বিপদসীমার আরও কাছাকাছি চলে এসেছে নদী। পশ্চিমবঙ্গ সরকার গঙ্গানদীর ওপর নির্মিত ফারাক্কা বাঁধের সবগুলো গেট খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, পদ্মায় এখন যত পানি এসেছে, গত এক দশকেও এত পানি আসেনি।
পদ্মায় পানি বৃদ্ধির এই হার নিয়ে নদী তীরে আতঙ্ক থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, যমুনা নদী বিপদসীমার নিচে থাকায় উদ্বেগের তেমন কারণ নেই।
আরও পড়ুন: পদ্মায় পানি বাড়ছে, বিপদসীমা ছুঁইছুঁই
স্থানীয় সংবাদ কর্মী সেলিম দরকার বলেন, ‘পদ্মায় এই সময় এত পানি গত ১০ বছরে দেখিনি।'
নদী গবেষক ও পাবনা সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যখন শুকনো মৌসুমে পানি দরকার হয়, তখন হিস্যা অনুযায়ী ভারত পানি দেয় না, আর এখন যখন আমাদের পানি সরকার নেই তখন ভারত তাদের সমস্যার কারণে ফারাক্কার সব কটি গেট খুলে দিয়েছে। এটা খুবই অন্যায়।’
দুই দিনে দুই কূল ছাপিয়ে যেতে পারে পদ্মা
ফারাক্কার সবগুলো গেট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের পর থেকে প্রতিদিনই পদ্মায় পানি বাড়ছে। শুক্রবার দুপুরে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে এই পানি পরিমাপ করা হয় ১৪ দশমিক ০৮ মিটার। বৃহস্পতিবার এখানে পানি পরিমাপ করা হয় ১৩ দশমিক ৯২ মিটার। আগের দিন যা ছিল ১৩ দশমিক ৭৯ মিটার।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় বিপদসীমা ধরা হয় ১৪ দশমিক ২৫ মিটার। অর্থাৎ আর ১৭ সেন্টিমিটার পানি বাড়লেই পদ্মাতীরবর্তী নিচু এলাকা ডুবে যেতে পারে। গত দুই দিনেই নদীতে পানি বেড়েছে ২৭ সেন্টিমিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চল পানি পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী পরিচালক কে এম জহিরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পানি বৃদ্ধির এখন যে হার, তা অব্যাহত থাকলে পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করতে আরও দুই দিন লাগবে।’
আতঙ্কিত তীরের মানুষ, অভয় দিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড
পদ্মায় পানি বৃদ্ধির এই ধারা নিয়ে রীতিমত আতঙ্কিত নদী তীরের বাসিন্দারা।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চল পানি পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী পরিচালক কে এম জহিরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘পদ্মা বিপদসীমা ছাড়ালেও দুশ্চিন্তার তেমন কারণ নেই। কারণ যমুনা এখন গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপদসীমার নীচে আছে। ফলে পদ্মার পানি দ্রুত বঙ্গোপসাগরে নেমে যাবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে জহিরুল ইসলাম বলেন, ১৯৮৮ এবং ৯৮ সালে পদ্মার পানি এর চেয়ে বেশি ছিল। এরপর নদীতে এত পানি কি কখনও এসেছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে এসেছে, ২০০৫ সালেও একবার এখনকার মত বেড়েছিল।’
আমাদের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, পদ্মায় পানি বাড়ায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ও রামকৃষ্ণ ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিম ইউনিয়নের সলেমাননগর গ্রামটিও পানির নিচে চলে গেছে। চরগোলাপনগরের ঢাকাপাড়া গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। ঢাকাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
ভেড়ামারার গোলাপনগর-রাইটা ও দৌলতপুর উপজেলার রাইটা-মহিষকুণ্ডি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকিতে পড়েছে। পানি বাড়ছে শাখা গড়াইয়েও। এতে কুষ্টিয়া শহর রক্ষায় নির্মিত রেনউইক বাঁধ এলাকায় পানি বিপদসীমার কাছাকাছি দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
বিহারে বন্যা মোকাবেলায় ফারাক্কার সব গেট খোলার নির্দেশ
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বিহারে বন্যা মোকাবেলায় ফারাক্কার ১০৪টি গেটের প্রায় সবগুলো খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। কর্মকর্তারা বলছেন, এই গেটগুলো খুলে দিলে ১১ লাখ কিউসেক পানি সরে যাবে, এতে বিহারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সমীর সিনহা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ফারাক্কায় গেটগুলো খুলে দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশকে আগেই নোটিশ দিয়ে জানানো হয়েছে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে।
তবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিব ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন, গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেদক আসার পর যৌথ নদী কমিশনকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। কমিশনের পরিচালক মোজাফফর হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে ফারাক্কায় যাওয়া প্রতিনিধি দল এখনও প্রতিবেদন পাঠায়নি। পাঠালে পরে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।