প্রধানমন্ত্রীর পুরো বক্তব্যে আবেগ আর কান্নায় ভরা

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত ও কান্না দিয়েই প্রায় পুরো বক্তব্য শেষ করলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মঙ্গলবার বিকেলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর হঠাৎ শুনলাম ৩২ নাম্বারের বাড়ি আমার কাছে হস্তান্তর করা হবে। আইনজীবী ঠিক করে এ বাড়ি আমাদের নিতে হবে। তাদের যেন কিসের তাড়া ছিল। আমাকে যখন বাড়িতে নিয়ে গেল আমি তখন সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারিনি। আমি অর্ধেক সিঁড়ি উঠে আর উঠতে পারিনি। তখন কলাপসিপল গেট বন্ধ ছিল। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর আমাকে কীভাবে ছাদে নিয়ে যাওয়া হয় আমি জানি না। তারা অনেকগুলো কাগজপত্রে সই করতে বলে, আমি অর্ধ অচেতন অবস্থায় সই করি। এরপর বাড়ি হ্যান্ডওভার করে। তাড়াহুড়োর উদ্দেশ্য তখন বুঝতে পারি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে তার চরিত্র হননের জন্য নানা বদনাম এবং পরিবারের সব সদস্যের বিরুদ্ধে যেভাবে অপপ্রচার করা হচ্ছিল, সেই অপপ্রচারের আরেকটি পর্ব শুরু করা হয়েছিল ওই বাড়িটি হস্তান্তর করে। যে বাড়িতে ১৫ আগস্ট পরিবারের সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, লুটপাট করা হয়, এরপর ৬ বছর তাদের হাতে ছিল বাড়িটি। সেই বাড়িটিতে কী সম্পদ থাকতে পারে যা হস্তান্তর করা হয়েছে? আমি বলেছিলাম, আমি তো কিছু চাই না, আমার একজন পরিবারের সদস্য হলেও ফেরত দাও। আমি সেটা চাই, তাতো আমাকে দিতে পারেনি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হল? হত্যার পরও নিষ্ঠুরতা, তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়েছিল, যার নেতৃতে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, যিনি আমাদের স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। যারা এ স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না, যারা আমাদের এ বিজয়কে মেনে নিতে পারে না, তারা সেই বিজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। তারপরও এ প্রচেষ্টা থামেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তানের ৯৬ হাজার সৈন্য বাংলাদেশে বন্দি, তাকে (বঙ্গবন্ধুকে) যখন তারা মুক্তি দিল তখন বঙ্গবন্ধু প্রথমে গেলেন লন্ডনে এরপর দিল্লি হয়ে ঢাকা ফিরলেন। আমরা উন্মুখ হয়ে বসে আছি আব্বা কখন আসবেন, আমার আম্মা উন্মুখ হয়ে আছেন তার প্রতীক্ষায়, পাথরের মতো বসে আছেন আর রেডিও শুনছেন। আব্বা নামলেম। তিনি কিন্তু চলে গেলেন তার জনতার কাছে, আমাদের কাছে না। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর তিনি ১০ জানুয়ারি যে ভাষণ দিলেন, একটি স্বাধীন বাংলাদেশ কীভাবে চলবে, কী তার অর্থনীতি হবে, কী হবে সামাজিক নীতি, কীভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে উঠবে, সমস্ত নির্দেশনা দিলেন। ঠিক যেভাবে ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন। একটি মুক্তিযুদ্ধ হবে গেরিলা যুদ্ধ হবে, বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। যে ভাষণ দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ উন্মুক্ত করে দিয়ে গিয়েছিলেন ঠিক সেই ভাবে।’
‘রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। এ সময়ের মধ্যে তিনি সংবিধান দিলেন, এখন আমরা যেখানেই হাত দেই সেখানেই আমরা দেখি একটি স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার সমস্ত কিছু করে দিয়ে গেছেন তিনি’
অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্ট শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এ সময় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ‘৩২ নম্বর মেঘের ওপারে’ শীর্ষক এবং দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন ১৫ আগস্ট নিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন—আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কেন্দ্রীয় সদস্য এসএম কামাল হোসেন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আফজল হোসেন প্রমুখ।