English Version
আপডেট : ১৪ আগস্ট, ২০১৬ ২০:২২

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দের চাল আত্মসাৎ, দুদকে অভিযোগ

উজ্জ্বল রায়
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দের চাল আত্মসাৎ, দুদকে অভিযোগ

নড়াইলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে ৫০টি প্রকল্পে বরাদ্দ করা ১৩০ মেট্রিক টন চাল স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের দ্বায়িত্বরত সরকারি কর্মকর্তার যোগসাজশে আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।

পিআইওর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার আউড়িয়া গ্রামের ৫০টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে জিআরের ১৩০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৬টি মসজিদে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল এবং ৩৪টি মন্দিরে নামযজ্ঞানুষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত ৩০ জুন বরাদ্দ হওয়া মালামাল উত্তোলনের জন্য খাদ্য বিভাগের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। গত ২৮ ও ২৯ জুলাই ৫০টির মধ্যে ৩২টি প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়নি।

প্রকল্প সভাপতিকে, এমন কাউকে খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। একই ব্যক্তির বাড়িতে দুর্গা ও কালীমন্দিরে নামযজ্ঞানুষ্ঠান দেখিয়ে দুভাবেই বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে।

এ সময় এলাকাবাসী সূত্র জানায়, ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আছাদ মোল্লা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে এসব চাল আত্মসাৎ করেছেন।

জানতে চাইলে আছাদ মোল্লা বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।’ এক মাস অতিবাহিত হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো নমুনা খুঁজে পাওয়া যায়নি, এমন কথায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘জিআর প্রকল্প অনুমোদনের আগে মোটা অঙ্কের টাকা সংশ্লিষ্ট বিভাগে অগ্রিম দিতে হয়। মাল বিক্রি করে সেই টাকা তুলে তারপর তো কাজ?’

প্রকল্পের তালিকায় দেখা যায়, আউড়িয়া টোলঘর বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের জন্য দুই মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। টোলঘর-সংলগ্ন বাসিন্দা আবদুল মান্নান ও ব্যবসায়ী আইউব আলী বলেন, এখানে কোনো বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল হয়নি। আউড়িয়া গ্রামের আমজাদ আলীর বাড়ির বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের নামে দুই মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।

আমজাদ হোসেনের ছেলে আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে ওয়াজ মাহফিল হবে কেন? বাড়িতে ওয়াজ মাহফিল হয়, জীবনে কোনো দিন শুনিনি।’ আউড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ওয়াজ মাহফিলের নামে বরাদ্দ দুই মেট্রিক টন চাল।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ বছর মাঠে তো কোনো ওয়াজ মাহফিল হয়নি।’ উড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের নামে বরাদ্দ তিন মেট্রিক টন চাল।

বিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরা জানান, এখানে কোনো ওয়াজ মাহফিল হয়নি। আউড়িয়া গ্রামের পদ বিশ্বাসের বাড়ির কালীমন্দিরে নামযজ্ঞানুষ্ঠানের নামে দুই মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়।

পদ বিশ্বাসের ভাই উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে কোনো মন্দির নেই। আমরা কোনো দিন নামযজ্ঞ করিনি।’ সেলিমের বাড়ির সামনের মসজিদে তিন টন, ইসমাইলের বাড়ির সামনের মসজিদে তিন টন, অজয়ের বাড়ির দুর্গামন্দিরে দুই টন ও কালীমন্দিরে নামযজ্ঞানুষ্ঠানের নামে তিন টন, নিহারের বাড়ির সামনের কালীমন্দিরে নামযজ্ঞানুষ্ঠানের নামে তিন টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব স্থানে কোনো অনুষ্ঠান হয়নি।

ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত সদস্য বাশার মণ্ডল বলেন, ‘শুনেছি সাবেক মেম্বার আছাদ মোল্লা বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে ১৩০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছেন। কিন্তু কোথায় কোন কাজে ব্যয় করেছেন, এলাকার কেউ বলতে পারে না।’

আউড়িয়া গ্রামের দাউদ শিকদার বলেন, ‘ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে প্রকল্প করে এক শ্রেণির মানুষ এগুলো করে থাকে। জানতে পেরে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লিখিত আবেদন করি। দুদক আবেদনটি গ্রহণ করেছে এবং তদন্তের সময় আমাকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।’

অফিসে গিয়ে পিআইও সৈয়দ আজিম উদ্দীনকে পাওয়া যায়নি। তবে অফিসের কর্মচারীরা জানান, তিনি ঢাকায় গেছেন। পরে মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অফিসে চায়ের দাওয়াত দেন। প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুনেছি কয়েকটি মসজিদে ওয়াজ মাহফিল করা হয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, ‘যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলো তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।