English Version
আপডেট : ১০ আগস্ট, ২০১৬ ১২:৪৩

চিত্রশিল্পী সুলতানের ৯২তম জন্মবার্ষিক আজ

উজ্জ্বল রায়
চিত্রশিল্পী সুলতানের ৯২তম জন্মবার্ষিক আজ

বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯২ তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২৪ সালের এদিন তিনি নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া  গ্রামে  এক রাজমিস্ত্রী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

তার পিতা ছিলেন মেছেন আলী। মাতা মাঝু বিবি। দিবসটি পালন উপলে জেলা প্রশাসন ও এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনসহ স্থানীয় সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে নড়াইলে।

এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শিল্পীর মাজার জিয়ারত, মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পন, কোরআনখানি, দোয়া ও মাহফিল, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ।  এস এম সুলতানের বাল্য নাম ছিল লাল মিয়া। এ নামেই তিনি কলিকাতায় আর্ট স্কুলে লেখাপড়ার আগ পর্যন্ত সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। ১৯২৮ সালে লাল মিয়া নড়াইল আশ্রম স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। অষ্টম শ্রেণী  পাশ করার পর  পড়ালেখা বন্ধ করে দেন তিনি  । 

জানা যায়, ১৯৪১ সালে কলকাতা চলে যান। এখানে গিয়ে তিনি শহীদ সোহরাদীর সহযোগিতায়   কলিকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হন।  এ সময় শহীদ সোহরাযাদী লাল মিয়াকে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি করার সময় তাকে এস এম সুলতান নামে নাম করন করেন।  পরবর্তীতে এ মহান শিল্পিী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পৃথীবিব্যাপি এস এম সুলতান নামে খ্যাতির শীর্ষে উঠেছেন।  সেখানে তিনি ফরাসী এবং ইংরেজী ভাষায় জ্ঞান লাভ করেন।

১৯৪৪ সালে স্কুল  পরীায় প্রথম স্থান দখল করেন। এরপরও তিনি হঠাৎ করে শিক্ষা জীবন সমাপ্ত না করেই  একদিন কাশ্মীরের পাহাড়ি অঞ্চলে  উপজাতীয়দের সঙ্গে বসবাস করেন। এবং  তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে চিত্রাংকন শুরু করেন তিনি ।

তিনি শিমলায় প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী করেন। ১৯৪৯ সালে শিল্পী পাকিস্তান চলে যান এখানে তিনি পরিচিত হন কায়েদী আযম জিন্নাহর স্ত্রী ফাতিমা জিন্নাহর সাথে ।  তিনি ফাতিমা জিন্নাহর  সহযোগিতায় পাকিস্তানে একক চিত্র প্রদর্শনী করেন। ১৯৫০ সালে শিল্পী সুলতান আমেরিকার একটি আর্ট ক্যাম্পে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করতে আমেরিকা গমন করেন। পরে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফরে বেরিয়ে যান।  যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মান,জাপানসহ বিভিন্নদেশ সফর করেন এবং এসব দেশে চিত্র প্রদর্শনী করেন।

তিনি পাবলো পিকাসো, ডুরীসহ বিখ্যাত ব্যাক্তিদের সাথে একাধিকবার চিত্র প্রদর্শনী করে বিশ্ব বিখ্যাত হয়েছেন।  ১৯৬৭ সালে শিল্পী সুলতান মা, মাটি ও মানুষের টানে দেশে ফিরে আসেন এবং নিজ গ্রাম নড়াইলের মাছিমদিয়ায় ফাইন আর্ট স্কুল ও “শিশুস্বর্গ” নামে শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। তিনি ১৯৮২ সালে ক্যাবব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যান অফ দ্যা এচিভমেন্ট এ ভুষিত হন। এ ছাড়া  বিএন পি আমলে একুশে, আওয়ামীলীগের আমলে স্বাধিনতা পদকে ভুষিত হন।  চির কুমার নিরহংকারি এ ব্যাক্তির জীবনে প্রথম ১৯৮৪ সালে  সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এস এম সুলতানকে সরকারিভাবে সম্মান প্রদান করেন।

জাতীয় পার্টির শাসনামলে শিল্পীর বাসভবনসহ তাকে মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়ে ছিলেন। এসএম সুলতান শিশুদের খুব ভালোবাসতেন। তিনি যা করতে চেয়েছেন তা শূধু তিনি শিশুদের জন্যই করতেন।  চিত্রকলা এবং শিশুদের নিয়ে তিনি তার জীবনের স্বপ্ন দেখতেন। এ ত্যাগী শিল্পীর  কখনো সংসার নামক যন্ত্রের কাছে নিজেকে সোর্পদ করেননি। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর তিনি যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এসএম সুলতান স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সম্মাননা এবং বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট হিসেবে স্বীকৃতি পান।