English Version
আপডেট : ৩ আগস্ট, ২০১৬ ১৫:০২

জঙ্গি প্রশিক্ষণ হতো শফিউলের ভাড়া বাড়িতে

নূরে আলম
জঙ্গি প্রশিক্ষণ হতো শফিউলের ভাড়া বাড়িতে

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস, পারটেক্স শো-রুমের পাশে একটি বাড়ি। বাড়িটি টিনশেড হলেও বাড়ির গেট খুবই মজবুত। বাহিরের দিক থেকে এ বাড়ির ভেতরের কিছুই নজরে পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। বাড়ির সামনে একটি হজ্ব এজেন্সির সাইনবোর্ড। রহস্যময় এই বাড়িটিতেই জঙ্গি প্রশিক্ষণ হতো এমন খবর যেন টক অব দ্য জেলা।

বাড়িটি স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কমিশনার ভেলা এই বাড়ির মালিক। ঐ বাড়ির পেছনেই খলিশা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আনোয়ারের বাড়িও। শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে জঙ্গি হামলায় ধরা পড়া শফিউল ওরফে শরিফুল ওরফে সোহান ওরফে মুত্তাকিল এই আনোয়ারের বাড়িতেই ভাড়া থাকতেন বলে জানিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে।

শফিউলের বর্ণনা দেওয়া টিনশেড বাড়িটি প্রশিক্ষণ শিবির হিসেবে পরিচালিত হত। আনোয়ারের বাড়িতে থাকলেও সামনের অন্য আরেকটি বাড়িতেও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাতো শফিউলরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শফিউল আটক হওয়ার পর আনোয়ার ও ভেলা কমিশনারের বাড়িতে অভিযান চালায় সাদা পোশাকের পুলিশ। এসময় দুই বাড়ি থেকে একাধিক সন্দেহ ভাজনকে ধরে নিয়ে যায় তারা। এদেরই একজন আনোয়ারকে রাতারাতি গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র‌্যাব। তবে ভেলা কমিশনারের বাড়ির ব্যাপারে মুখ খুলছে না কেউই।

আটক আনোয়ার উপজেলার খলসি দাখিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শাখার প্রধান শিক্ষক। ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ জামায়াতের কাছে পুলিশের উপর হামলার পর গ্রেফতার মাদ্রাসাছাত্র শফিউল বলেছিলেন, গোবিন্দগঞ্জে আনোয়ারের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে ছিলেন তিনি।

তার বাড়ি দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটে। তিনি দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বিজুল দারুল হুদা কামিল মাদ্রাসার ছাত্র। শফিউলকে গ্রেফতারের পর র‌্যাব-১৪ এর কর্মকর্তা মেজর সাইফুল সাজ্জাদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আলিম পরীক্ষা শেষ না করেই ‘ওস্তাদের নিদের্শে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে’ কিশোরগঞ্জে গিয়েছিলেন এই তরুণ।

তিনি গোবিন্দগঞ্জে মাদ্রাসা শিক্ষক আনোয়ারের বাড়িতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত ছিলেন বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা কায়সার আলী আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ার জানিয়েছে, তিনি জঙ্গি শফিউল ও তার কথিত এক ভাইকে ছাড়া অন্য আর কাউকে চেনেন না।

আশ্রয়দাতা আনোয়ারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শেখানে প্রশিক্ষণ কাজ চালানোর মতো তেমন কোন পরিবেশ নেই। একটি আধাপাকা টিনশেড ঘরে সামনের দিকের অংশে থাকতেন শফিউল । পিছনের অংশে পরিবার নিয়ে থাকেন আনোয়ার।

আনোয়ারের স্ত্রী তুহিন বেগম প্রথমে কথা বলতে না চাইলেও পরে জানান, শফিউল তার ছোট একটি সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে আমাদের বাসায় ভাড়া থাকত। তাকে শধু ভাড়াটে হিসেবেই চিনতাম।

পুলিশের ভাষ্য অনুুযায়ি, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের গৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় হত্যাকান্ডেরও আসামি এই শফিউল। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ব্যবসায়ি তরুণ দত্ত ও দেবেশ চন্দ্র হত্যা কান্ডের সাথেও তিনি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে, ভেলা কমিশনারের বাড়ি সম্পর্কে এলাকার কেউই মুখ খুলতে চাইছেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভেলা বিভিন্ন সময়ে এলাকায় বিভিন্ন জনের লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করলেও তার কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ নেই।

তবে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভেলা কমিশনার টাকার জন্য যে কারো সঙ্গে যা ইচ্ছা করতে পারেন তিনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার তার বাড়িতে গেলেও ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ মেলেনি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এ প্রসঙ্গে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন জানান, যে বাড়িতে শফিউল থাকতো, সেই বাড়িটি চিহ্নিত হয়েছে। বাড়ির মালিককে আটক করা হয়েছে। কিন্তু প্রশিক্ষণের যে বাড়ির কথা বলা হচ্ছে, তা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, টিনশেড বাড়ির সংখ্যা তো অনেক। গোবিন্দগঞ্জ শহরের প্রায় পুরো এলাকাতেই এমন অনেক টিনশেড বাড়ি রয়েছে।