English Version
আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০১৬ ১২:৪৮

আজ ‘হুমায়ূন আহমেদ’ এর মৃত্যুবার্ষিক

অনলাইন ডেস্ক
আজ ‘হুমায়ূন আহমেদ’ এর মৃত্যুবার্ষিক

জন্ম: ১৩ই নভেম্বর, ১৯৪৮ – মৃত্য : ১৯শে জুলাই, ২০১২) ( হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ইং সালের ১৩ই নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোণা মহুকুমার কেন্দুয়ার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শহিদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা ফয়েজ। তাঁর পিতা একজন পুলিশ কর্মকতা ছিলেন। চাকুরীর পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করতেন এবং সাহিত্য বিষয়ে খুবই আগ্রহী ছিলেন। ‘‘দ্বীপ নেভা যার ঘরে’’ নামক একটি প্রন্থও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। হূমায়ূন আহমেদ’র মা আয়েশা ফয়েজের নিয়মিত লেখালেখির অভ্যাস না থাকলেও তিনি একটি আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন যার নাম‘‘জীবন যে রকম’’। )

বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র অথবা বিংশ শতাব্দির ক্ষণজন্মা কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম হুমায়ূন আহমেদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ ও সফল লেখক হিসেবে গণ্য করা হয় তাঁকে। হুমায়ূন আহমেদ একাধারে শিক্ষক, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, চলচ্চিত্রকার, গীতিকার। কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যেও পথিকৃত তিনি। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি এক ভিন্ন ধারার নাম। বাংলা সাহিত্যে সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক বলেও তাঁকে আখ্যায়িত করেন অনেকে।

সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে হুমায়ূন আহমেদ’র সুনাম ছড়াতে থাকলেও এই দশকের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারীগর। এই কালপর্বে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। তাঁর সৃষ্ট হিমু, মিসির আলি, শুভ্র চরিত্রগুলো বাংলাদেশের যুবকশ্রেণীকে গভীর ভাবে উদ্বেলিত করেছে। এই হিমু চরিত্রের পোশাক, আচার-ব্যবহার, চলাফেরা, ভাব-গাম্ভির্য বাস্তবেও তরুণশ্রেণীর মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে। এবং এখনও চোখে পরে। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা দুইশত। এই হুমায়ূন আহমেদ রচিত প্রথম সাইন্স ফিকশন ‘‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’’। প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘‘নন্দিত নরকে’’। নির্বাচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে-শঙ্খনীল কারাগার, জনম জনম, কৃষ্ণপক্ষ, গৌরীপুর জংশন, ইস্টেশন, বৃষ্টিবিলাস, কবি, ফেরা, আমার আছে জল, এই সব দিনরাত্রি, অয়োময়, বহুব্রীহি, বাদশাহ নামদার, মধ্যাহ্ন ইত্যাদি। হিমু সংক্রান্ত উপন্যাস-হিমা, এবং হিমু, হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম, হিমুর দ্বিতীয় প্রহর, হিমুর রূপালী রাত্রি, আজ হিমুর বিয়ে, হিমু রিমান্ডে, হিমুর একান্ত সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য ইত্যাদি। মিসির আলি সংক্রান্ত উপন্যাস-দেবী, নিশিথিনী, অন্যভুবন, নিষাদ, বৃহন্নলা, ভয়, অনীশ, মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য, মিসির আলি আপনি কোথায়, মিসির আলির চশমা জনপ্রিয় উপন্যাস। শুভ্র সংক্রান্ত উপন্যাসের মধ্যে আছে- দারুচিনি দ্বীপ, রূপালী দ্বীপ, শুভ্র, শুভ্র গেছে বনে। মুক্তিযুদ্ধে ও রাজনৈতিক উপন্যাস- দেয়াল, জোছনা ও জননীর গল্প, শ্যামল ছায়া, ১৯৭১, অনিল বাগচীর একদিন, আগুনের পরশমণি। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী গুলো- ওরা তিনজন, দ্বীতীয় মাবন, ইমা, ওমেগা পয়েন্ট, শূন্য, নি ইত্যাদি।

রংপেনসিল, নিউইয়র্কেও নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ, আমার ছেলেবেলা, বলপেন, কাঠপেন্সিল, ফাউন্টেইন পেন, লীলাবতির মৃত্যু ইত্যাদি আত্মজীবনী প্রন্থগুলো জনপ্রিয় হয়। ‘নবীজি’ নামে তিনি একটি জীবনীও লিখতে শুরু করেছিলেন যা শেষ করে যেতে পারেননি।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাশক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই রসায়ন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদেন ও দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন। লেখালেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় পরবর্তীতে তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে লেখালেখি, নাটক নির্মান, চলচ্চিত্র নির্মানে মনোনিবেশ করেন।

তাঁর নির্মিত ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে ‘বহুব্রীহি, কোথাও কেউ নেই, এইসব দিনরাত্রি, অয়োময়, সবুজ সাথী, আজ রবিবার, নিমফুল, উড়ে যায় বকপঙ্খী, এই মেঘ এই রৌদ্র অন্যতম। বহু এক পর্বের নাটকের মধ্যে অচিন বৃক্ষ, খাদক, একদিন হঠাৎ, অন্য ভুবন, খেলা উল্লেখযোগ্য। চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘আগুনের পরশমনি, চন্দ্রকথা, শ্যামর ছায়া, দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, আমার আছে জল, ঘেটু পুত্র কমলা’’ ইত্যাদি নির্মান করেন। নাটক ও চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে তিনি বহু গীতও রচনা করে এবং তা জনপ্রিয়ও হয়।

তিনি তাঁর অসংখ্য বহুমাত্রিক সৃষ্টিকর্মের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১), শিশু একাডেমী পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসুদন পদক (১৯৮৭), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮), হুমায়ুন কাদিও সৃ¥ৃতি পুরস্কার (১৯৯০), জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক, একুশে পদক (১৯৯৪) ইত্যাদি। এছাড়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন কয়েক কেটাগরিতে- শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার পুরস্কার(১৯৯২, শঙ্খনীল কারাগার), শ্রেষ্ঠ প্রযোজক, কাহিনীকার, সংলাপ রচয়িতা পুরস্কার(১৯৯৪, আগুনের পরশমণি), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার(২০০৭, দারুচিনি দ্বীপ), শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার(২০১২, ঘেটু পুত্র কমলা)।

হুমায়ূন আহমেদ’র প্রথম স্ত্রী প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ’র নাতনী গুলতেকিন আহমেদ। তাঁদের সংসারে তিন কন্যা নোভা আহমেদ, বিপাশা আহমেদ, শিলা আহমেদ ও এক পুত্র নূহাশ আহমেদ। গুলতেকিনের সাথে বিবাহবিচ্ছেদের তাঁর নাটকের অভিনেত্রী মেহের আফরুজ শাওন এর সাথে সংসার পাতেন এবং এখানে তিন সন্তান লাভ করেন। প্রথম কন্যা সন্তান লীলাপতি ভূমিষ্ঠপর মারা যায়। দ্বিতীয় সন্তান পুত্র নিষাদ ও তৃতীয় সন্তান পুত্র নিনাদ। জীবনের শেষ ভাগে তিনি ঢাকার অভিজাত এলাকা ধানমন্ডির ৩/এ রোডে ‘দক্ষিণ হাওয়া ’ ভবনের একটি ফ্লাটে বসবাস করতেন। গাজীপুরে তাঁর বানাগ বাড়ি ‘নূহাশ পল্লিতেও তিনি থাকতে ভালোবাসতেন। এবং এখানেই তাঁর অনেক নাটক ও চলচ্চিত্রের স্যুটিং হতো। অতুলনীয় জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও হুমায়ূন আহমেদ অত্যন্ত অন্তরায় জীবন-যাপক এবং লেখালেখি ও চিত্র নির্মান কাচে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন।

২০১১ইং এর শেষের দিকে তাঁর শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। কয়েক দফায় অস্ত্রপচার ও ১২ দফায় কেমোথেরাপি দেয়ার পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই তা শরীরে ছড়িয়ে পরে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কৃত্রিম ভাবে লাইফ সাপোর্টে রাখার পর ১৯শে জুলাই ২০১২ইং নিউইয়োর্কের বেলভ্যু হসপিটালে এই নন্দিত লেখক মৃত্যুবরণ করেন। ২৪শে জুলাই ২০১২ইং গাজীপুরের হোতাপাড়ায় নিজহাতে গড়া নূহাশপল্লীতেই সমাহিত করা হয় বাংলা সাহিত্যের খেয়ালিপুত্র- হুমায়ূন আহমেদকে।