English Version
আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০১৬ ০০:২০

গোয়েন্দা জালে আরেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোয়েন্দা জালে আরেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক

সন্দেহভাজন কয়েকজন জঙ্গিকে ইংরেজি ভাষা শেখাতে অর্থ জোগানোর অভিযোগে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে নজরদারিতে এনেছে গোয়েন্দারা। তিনি গাজীপুরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) অধ্যাপক। বেসরকারি ব্যাংকে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট নম্বর থেকে এক শীর্ষ জঙ্গি নেতার অ্যাকাউন্টে এ বাবদ টাকা পাঠানো হয়। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর ওই শিক্ষকের বিষয়ে খোঁজখবর শুরু করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। জঙ্গি বিষয়ে তদন্তকারী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইইউটির ওই শিক্ষকের বাসা রাজধানীর তেজগাঁওয়ে। তার অ্যাকাউন্ট (ব্র্যাক ব্যাংক হিসাব নম্বর ......১৪৫০০০০১) থেকে শীর্ষ এক জঙ্গি নেতার অ্যাকাউন্টে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের চিত্র উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ওই টাকা দিয়ে কয়েকজন সন্দেহভাজন জঙ্গিকে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার কোর্সে ভর্তি করার কথা ছিল। ওই শিক্ষকের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। দ্রুত তার বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। তিনি আদৌ জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত কিনা সেটিও স্পষ্ট হবে অচিরেই। জড়িত থাকলে কীভাবে তাদের কার্যক্রমে যুক্ত হলেন তিনি তাও বের হয়ে আসবে।

বাংলাদেশে দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। একটি চট্টগ্রামে, অন্যটি ঢাকার গাজীপুরে। গাজীপুরের এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)। গাজীপুরের আইইউটি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন। রয়েছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি শিক্ষকও। এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসেছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সন্দেহজনক আর কোনো কার্যক্রম রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ২০০৯ সালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ একজন পাকিস্তানিসহ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনে জঙ্গি হামলা পরিকল্পনার অভিযোগ পায় পুলিশ। এরপরই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে গোয়েন্দা অনুসন্ধান শুরু করে একাধিক সংস্থা। এর আগে নর্থ সাউথসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, লেনদেন হওয়া ওই টাকা কোথায় কীভাবে খরচ করা হয়েছে সে বিষয়টি নিয়েও অনুসন্ধান চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি হামলার সঙ্গে ওই অর্থের যোগসূত্র রয়েছে কিনা সেটিও খুঁজে দেখা হচ্ছে। শীর্ষ ওই জঙ্গি নেতার অ্যাকাউন্টে আরও বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকেও অর্থ জমা হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্যের সন্ধানে কাজ করছে গোয়েন্দারা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, জঙ্গিবাদের মূল চালিকাশক্তি অর্থ। জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিমাসে চাঁদা দিয়ে থাকে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও অর্থ দিচ্ছে। এদের আইনের আওতায় আনতে পারলে ব্যাপক সংকটে পড়বে জঙ্গিরা। সেই কাজটি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে করা হচ্ছে।

গত শনিবার বিকালে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি গিয়াসউদ্দিন আহসান, তার ফ্ল্যাটের তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুর রহমান ও ভাগনে আলম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই শিক্ষক ও তার সহযোগীরা গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলাকারীদের আশ্রয় ও হামলা করতে সহায়তা করেন বলে অভিযোগ করেছে পুলিশ।