English Version
আপডেট : ৩০ জুন, ২০১৬ ১৭:২৮

সংসদে ৩ .৪০ লাখ কোটি টাকার বাজেট পাস

অনলাইন ডেস্ক
সংসদে ৩ .৪০ লাখ কোটি টাকার বাজেট পাস

প্রবৃদ্ধি উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সংসদে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৬ গৃহীত হওয়ার মধ্য দিয়ে এ বাজেট পাস করা হয়। গত ২ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই বাজেট পেশ করেন।

বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীগণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মোট ৫৫টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করেন। এই মঞ্জুরি দাবিগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়।

প্রধান বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যগণ মঞ্জুরি দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে মোট ৪২০টি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে ৭টি দাবিতে আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সদস্যরা আলোচনা করেন। পরে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়। এর পর সংসদ সদস্যগণ টেবিল চাপড়িয়ে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৬ পাসের মাধ্যমে ২০১৬-’১৭ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেন।

গত ৬ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও অন্যান্য মন্ত্রীসহ সরকারি ও বিরোধীদলের ২৪৬ জন সদস্য ২০ কার্যদিবসে মোট ৬০ ঘণ্টা ৫০ মিনিট মূল বাজেট ও সম্পুরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে সরকারি দলের ১৯৩জন এবং বিরোধী দলের ৫৩ জন রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর ২ কার্যদিবসে ৯ জন সদস্য ১ ঘন্টা ৩৬ মিনিট এবং মূল বাজেটের ওপর ১৮ কার্যদিবসে ২৩৭ জন সরকার ও বিরোধীদলের সদস্য মোট ৫৯ ঘন্টা ১৪ মিনিট আলোচনা করেন। বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১২.৪ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১০.৪ শতাংশ। এছাড়া, এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ০.৪ শতাংশ। কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১.৬ শতাংশ। বাজেটে অনুন্নয়নসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১.৪ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ১ লাখ ১০ হাজার ৭শ’কোটি টাকা যা জিডিপির ৫.৬ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ খাতে ইসিএ ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ১২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। এর ফলে এডিপির মোট আকার হলো ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬.৩ শতাংশ। বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতি ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ৩৬ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১.৯ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৩.১ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ শতাংশ এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ২২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫.৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেটের উন্নয়নের লক্ষ্য ও কৌশল হচ্ছে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন। আর রূপকল্পের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কৌশল হচ্ছে উপযুক্ত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উন্নয়ন, গণদ্রব্য ও সেবার যোগান বৃদ্ধি, বিশ্বাবাজারের সাথে ক্রমান্বয়ে একীভূত হওয়া, উৎপাদন বিশেষায়ন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা। বাজেটে সামাজিক অবকাঠামোগত খাতে মোট বরাদ্দের ২৩.৩ শতাংশ, যার মধ্যে মানব সম্পদ খাত- শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতে ২৫.২ শতাংশ, ভৌত অবকাঠামো খাতে ২৯.৭ শতাংশ- যার মধ্যে রয়েছে সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৩.৬ শতাংশ, যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ১০.২ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে ৪.৪ শতাংশ। এছাড়া সাধারণ সেবা খাতে ২৪.৫ শতাংশ, সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্টায়ত্ত, বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় বাবদ ২.২ শতাংশ। এছাড়া সুদ পরিশোধ বাবদ ১১.৭ শতাংশ নিট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয় খাতে অবশিষ্ট ৩.৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে, পদ্মা সেতু তথা যোগাযোগ অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান- প্রযুক্তি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।