English Version
আপডেট : ২৭ জুন, ২০১৬ ১৭:২৬

তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে লন্ডভন্ড নিকট এলাকাগুলি

সুমন
তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে লন্ডভন্ড নিকট এলাকাগুলি

ভারী বর্ষন ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি ফের বৃদ্ধি বন্যা দেখা দিয়েছে। শনিবার (২৫ জুন) সকাল ৬টা থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ বিপদসীমা (৫২.৪০ মিটার) ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সকাল ৯ টায় তা আরও ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দুপুর ১২ টায় আবার কমে ১৫  সেন্টিমিটার উপড় দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।

প্রবল বন্যার কারনে টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ী গ্রামটি হাটু পানিতে তলিয়ে গেছে। তিস্তার বন্যা ও প্রবল ভাঙ্গনে গ্রামটি লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে।  চরখড়িবাড়ী বিজিবি ক্যাম্পে হাটু পানিতে তলিয়ে গেছে।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়িতে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত একহাজার মিটার দীর্ঘ বালির বাঁধের ৪শ মিটার এরমধ্যে ধ্বসে গেছে। ২৪ ঘন্টায় তিস্তা অববাহিকার ডালিয়ায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১২৭ মিলিমিটার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

এদিকে তিস্তার বন্যায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি, জলঢাকা উপজেলার, গোলমুন্ড, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী , তিস্তা নদী বেস্টিত চর ও চর গ্রামগুলোর এলাকার ১৫টি চর ও গ্রামের ১০ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছে।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়িতে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত একহাজার মিটার দীর্ঘ বালির বাঁধের ৪শত মিটার ধ্বসে গেছে। বাঁধটি রক্ষার জন্য এলাকার শতশত মানুষজন বালিরবস্তা ও গাছ বাঁশের গুড়ি ও খুটি ফেলে রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ছাতুনামা ও ফরেষ্টের চরের ৭শ পরিবার বসতভিটায় বন্যায় পানি প্রবেশ করেছে। এসব পরিবারের অধিকাংশ বাড়ী হাটু পানিতে তলিয়ে বয়েছে।

খালিশা চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন পশ্চিম বাইশ পুকুর, পুর্ব বাইশ পুকুর, সতিঘাট ও ছোটখাতা গ্রামের ৮শ পরিবার বন্যার কবলে পড়েছে।

পুর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান বলেন, ঝাড়সিংশ্বের ও ছাতনাই গ্রামের সহরাধিক পরিবারের বসতভিটায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

খগাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন বলেন, কিসামত ছাতনাই ও দোহলপাড়া গ্রামের ৫শতাধিক পরিবার বন্যার কবলে পড়েছে। এসব পরিবারের শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

শুক্রবার (২৪ জুন) চরখাড়িবাড়ির ১৭টি পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। শতশত পরিবার ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছে।

ওইসব এলাকার  মোতালেব হোসেন, মোমেনা বেগম, মফিজুল ইসলাম, আজিজুল ইসলাম, আব্দার রহমান ও আবুল কাশেম জানান গত বছর থেকে তিস্তা নদী গতিপথ শুরুর আলামত ফুটে উঠেছিল।

ফলে চরখড়িবাড়ির সাথে ভারত সীমান্ত বরাবর তারা তিস্তা নদীর গতিপথকে ঠেকাতে সেচ্ছাশ্রমে এক হাজার মিটার দীর্ঘ বালির বাঁধ নির্মান করে। কিন্তু তিস্তা যেন রাক্ষুসী হয়ে উঠছে। তিস্তার মুল গতিপথ ভারতের মেখলিগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশের জিরো পয়েন্ট কালিগঞ্জ দিয়ে। কিন্তু ওই পথ পরিবর্তন করতে শুরু করে তিস্তা।

বন্যায় চুলো ও টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ার কারনে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে রয়েছে বন্যা কবলিত মানুষগুলো। কোথাও হাটু ও কোথাও কোমড় পানির নিচে চলে গেছে রাস্তা-ঘাট, স্কুল ও বাড়ি-ঘর। পানিবন্দী মানুষজন তাদের ঘর-বাড়ি ভেঙে গবাদী পশু নিয়ে উচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে বাধ্য হয়ে বাঁধের উপর ঘর নির্মান করেছে। রোজার মাসে বানের পানির এই দুর্ভোগ এলাকাবাসীকে চরম হেনস্তা করে রেখেছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানায়, উজানে ঢলে ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে তিস্তার পানি সকাল ৬টা ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ও  সকাল ৯ টায় তা বৃদ্ধি পেয়ে বিপরদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর প্রবাহিত হচ্ছিল। এবং দুপুর ১২ টায় তা কমে ১৫ সেন্টিমিটার উপড় দিয়ে প্রাবাহিত হচ্ছে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ২ হাজার ৫শ পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে ত্রান বিতরন করেন জেলা প্রশাসক জাকীর হোসেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নায়েমা তাবাচ্ছুম শাহ্, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক সহিদুল ইসলাম ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা