বিমানমন্ত্রীর কাছে সুস্পষ্ট ব্যাখা চান সাংসদ রুস্তম

সৌদি বাদশাহ সালমানের আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের সফর শেষে মঙ্গলবার দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। অার সেই দিনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের ক্লিয়ারেন্স না পেয়ে বাড়তি ৩৭ মিনিট আকাশে চক্কর দেয়। এ ঘটনায় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে সংসদে সুস্পষ্ট ব্যাখা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সকালে জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে তিনি এই দাবি করেন। তবে এসময় অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন না বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ।
রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিকিউরিটি ফোর্স থাকে। তাদের এটা আগে দেখা উচিত ছিল। সিকিউরিটি ফোর্স থাকে তারা কি করে? বিমান কর্তৃপক্ষ কি করেছে? বিমানমন্ত্রী এখানে আছেন কি না, আমি জানি না। তাকে এ ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে। এ ধরনের ঘটনা ঘটার পর কি ধরনের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল? এটা তাকে বলতে হবে। সেখানে তো একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। প্রধানমন্ত্রী ওমরাহ করে এসেছেন। তার উপর আল্লাহর রহমত আছে বলেই হয়তো কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) বুঝতে পারল কিন্তু কন্ট্রোল টাওয়ার কি করছে?
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে এ ধরনের অবস্থা কেন? বিদেশের কোন দেশে এই ধরনের একটি ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা তদন্ত হয়ে রিপোর্ট হয়ে অ্যাকশন হত। কিন্তু আমাদের দেশে আজ তিন দিন হয়ে গেল, তার ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। আমরা জানতে চাই।
কারা সেখানে মেটাল রেখেছিল কি ধরনের বস্তু রেখেছিল এবং তার জন্য কারা দায়ী। দায়ীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটবে না, সে বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর কাছে জানতে চাই।
এরপর অধিবেশনের সভাপতি ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া ফরাজীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘ধন্যবাদ, মাননীয় সদস্য আপনি ঠিক বিষয়টি অবতারণা করেছেন। তবে আপনি এও দেখেছেন এই বিষয়টি নিয়ে দুটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। এবং একটি তদন্ত কমিটি একজন ব্যক্তিকে ক্লোজড করেছে। সুতরাং অ্যাকশন হয়নি এ কথা আপনি বলতে পারেন না।
এর আগে ধাতব টুকরা পড়ে থাকতে দেখে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এ কারণে গত মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটিকে ঢাকার আকাশে উড়তে হয়েছে বাড়তি ৩৭ মিনিট। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যরা রানওয়ে পরিষ্কার করার পর প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিমানটি অবতরণ করে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ বিমান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বুধবার পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি করেছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যট্ন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন বুধবার রাতে বলেন, “এই ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই সময়ই এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের অপারেটর কামরুলকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্লোজ করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সৌদি আরব সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমানটি অবতরণের আধা ঘণ্টা আগে নিয়মানুযায়ী এসএসএফের সদস্যরা রানওয়ে পরিদর্শন করেন। এসময় তারা রানওয়েতে কিছু ধাতব টুকরা পড়ে থাকতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে জানান এবং রানওয়ে পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেন। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি ঢাকার আকাশে প্রবেশ করে।
সেট পরিচালনা করছিলেন বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা শাখার পরিচালক ক্যাপ্টেন ফরহাত হাসান জামিল ও ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক হোসেন। সন্ধ্যা ৭.১৩ টায় অবতরণের জন্য কন্ট্রোল রুমের অনুমতি চান ক্যাপ্টেন।
কিন্তু কন্ট্রোল রুম থেকে একেকবার একেক দিকে যেতে বলা হয়। এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর বারবার বৈমানিকেরা প্রকৃত কারণ জানতে চান। অনেক পীড়াপীড়ির পর কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয় যে রানওয়ে সাময়িক বন্ধ আছে। রানওয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে। পরে ৭.৫০ টায় দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করে।
বিমানবন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইট আসার পৌনে দুই ঘণ্টা আগে সৌদি আরবের দাম্মামগামী বিমানের একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন করছিল। রানওয়েতে চলা অবস্থায় সেটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে এবং উড্ডয়ন বাতিল করা হয়। এ সময় বিমানটির ইঞ্জিনের বিভিন্ন ধাতব টুকরা ভেঙে রানওয়েতে গিয়ে পড়ে।
বেবিচকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, নিয়ম হচ্ছে এ ধরনের কোনো উড্ডয়ন বাতিল হলে রানওয়ে পরিদর্শন করা। কারণ, উচ্চগতিতে থাকা বিমান থামাতে গেলে অনেক সময় চাকা বা অন্য কোনো উপাদান ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু মঙ্গলবার রানওয়ে পরিদর্শনের এই নিয়ম মানা হয়নি। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানের নতুন কেনা বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের ইঞ্জিন এভাবে বিকল হওয়া বা ইঞ্জিনের ভেতর থেকে ধাতব টুকরা ছিটকে পড়াটাও অস্বাভাবিক বলে মনে করেন বিমানের কর্মকর্তারা।
এ ঘটনায় বেবিচকের ফ্লাইট সেইফটি বিভাগের পরিচালক জিয়াউল কবিরকে প্রধান করে তিন সদস্যের অপর তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি বিমানবন্দরের রানওয়েতে কোনো সমস্যা ছিল কি না বা নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এমন কিছুর অস্তিত্ব ছিল কি না তা জানতে করা হয়েছে। খবর- সময়ের কন্ঠস্বর