দুপুরে বড় ধরনের আঘাত করতে পারে রোয়ানু

দক্ষিণাঞ্চলের পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে মাত্র ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’। তাই ঘূর্ণিঝড়টি দুপুরের মধ্যেই উপকূলে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঘূর্ণিঝড় উপকূলের নিকটবর্তী এলাকায় অবস্থান করায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এর প্রভাবে উপকূলের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড বাতাস শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কুয়াকাটাসহ উপকূলে ভারী বৃষ্টি ঝরছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। রাজধানীতেও শুক্রবার দিনগত মধ্যরাত থেকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
শনিবার (২১ মে) সকাল সোয়া সাড়ে ১০টায় আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অফিসে সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোছা. আয়েশা খাতুন ঘূর্ণিঝড়ের সবশেষ তথ্য জানান।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ডপলার রাডার পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল ঘেঁষে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশ উপকূল এলাকায় অবস্থান করছে।
চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড়‘রোয়ানু’ প্রভাবে ইতোমধ্যেই সবশেষ খবর মতে, ঘর চাপা পড়ে ভোলায় ২, পাহাড় ধসে সীতাকুণ্ডে ২ ও পটুয়াখারীতে ১ জন মার গেছে।
শুক্রবার ভোররাতে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ২৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এর আগে মধ্যরাতে ঘণ্টায় ২০-২৫ কিলোমিটার গতিবেগে উপকূলের দিকে আসছিলো মৌসুমের প্রথম ঘূর্ণিঝড়টি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড বাতাস শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কুয়াকাটাসহ উপকূলে ভারী বৃষ্টি ঝরছে। রাজধানীতেও শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল।
উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেত চলছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ বর্তমানে পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সতর্ক সংকেত বাড়ানো হয়েছে।
পাশাপাশি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সারা দেশে সব ধরনের লঞ্চ ও ট্রলার চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
তবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত ও প্রচণ্ড স্রোতের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকায় শুক্রবার (২০ মে) রাত ১১টা থেকে শনিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত বরিশাল-পটুয়াখালী রুটে (লেবুখালী) ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পরে একবার গাড়ি পারাপার করা হলেও পরে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে ফের ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শনিবার সকাল সোয়া ১০টায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটের পাটুরিয়া ঘাটে দায়িত্বরত নৌ পুলিশের আইসি শামসুল আলম জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটে লঞ্চ ও ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে এই রুটে এখনো ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে ফেরির গতি কম থাকায় পারাপারে সময় বেশি লাগছে। এতে ঘাটে শতাধিক বাস, ট্রাক ও প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন গাড়ি নদী পার হওয়ার অপেক্ষায় আছে।
শুক্রবার দুপুরের পর থেকে মাওয়া রুটে ট্রলার ও লঞ্চসহ সব ধরনের ছোট নৌ যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বিআইডব্লিউটিএ। এর পরপরই সারা দেশে অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
মাওয়ায় দায়িত্বরত বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক চন্দ্র শেখর জানান, শনিবার সকাল ৭টা থেকে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি রুটে সব ধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে মাওয়া ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে দেড় শতাধিক যানবাহন।
প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে দেশের উপকূল ও দক্ষিণাঞ্চলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার রিয়াজুল কবির বলেন, দুযোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে আজ সকালে বিমান ওঠানামা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এখান থেকে ছাড়ার সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে বৈরী আবহাওয়া ও ঘূর্ণি বাতাসের পাশাপাশি ভারী বর্ষণে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে এসব এলাকা কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এর ফলে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে।
শনিবার (২১ মে) ভোরে প্রবল জোয়ারের পানিতে উপজেলা নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। এতে হাতিয়ার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
প্লাবিত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে সোনাদিয়া ইউনিয়নের মাইজচরা গ্রাম, পশ্চিম সোনাদিয়া গ্রাম, পশ্চিম মাইজচরা গ্রাম, চরঈশ্বর ইউনিয়নের তালুকদার গ্রাম, কালুহাজির গ্রাম, পন্ডিত গ্রাম, আফাজিয়া, সুখচর ইউনিয়নের চর আমানউল্লা গ্রাম, রামচরন বাজার, কামাল বাজার, চেয়ারম্যান বাজার, বৌ-বাজার, দাসপাড়া, কাহার গ্রাম, দরগা গ্রাম, বাদশা মিয়াগো গ্রাম, কাদির সর্দার গ্রাম ও মালিশাগো গ্রাম, তমরদ্দি ইউনিয়নের আঠারবেকী, জোবায়েরা, বেজুগালিয়া, জোড়খালী, কোরালিয়া ও মদনখালী।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসান মো. মাঈন উদ্দিন জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এখনো ওই এলাকায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুত প্লাবিত এলাকার মানুষকে সহযোগিতা করা হবে।