দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ সেলিম ওসমানের

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান দেশত্যাগের বিনিময়ে ‘আর্থিক প্রলোভন দেখিয়েছিলেন’ বলে অভিযোগ করেছেন নারায়ণগঞ্জের সেই শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, নির্যাতনের ঘটনার পরেই সেলিম ওসমান এক প্রতিনিধির মারফত ‘টাকা পাঠিয়ে’ তাকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ‘চাপ প্রয়োগ’ করেছিলেন।
শ্যামলকান্তি ভক্ত বলেন, ‘সেই প্রতিনিধি বারবার কল করে বলেছে, যত সুযোগ-সুবিধা চান আপনাকে দেওয়া হবে। চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠানো হবে।’
অপমান ও নির্যাতনের ঘটনার পর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যমকে জানান, স্কুল কমিটি বিলুপ্ত করে দিয়ে শিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্তকে স্বপদে পুনর্বহাল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, মন্ত্রী-উপমন্ত্রী-এমপি, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনসহ সবাইকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে শুধু সেলিম ওসমান ছাড়া।’
শ্যামলকান্তি ভক্ত জানালেন, স্বপদে বহালের নির্দেশ এলেও তিনি এখন সেলিম ওসমানের আতঙ্কে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার ওপর এখন হুমকি আসতে পারে। থানা প্রশাসন সবই এমপি সেলিম ওসমানের হাতে। সেলিম ওসমান বরখাস্ত হলেই আমি নিরাপদে থাকব। আমি কামনা করছি, তিনি বরখাস্ত হবেন।’
‘আল্লাহর কটাক্ষকারীর সাজা হয়েছে, কান ধরেছে স্বেচ্ছায়’- এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার কথা বলিনি। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। যদি তার (এমপি সেলিম ওসমান) কাছে কোনো প্রমাণ থেকে থাকে তাহলে আমাদের দেখাক। আমি জীবদ্দশায় কখনো ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করিনি।’
শিক্ষক শ্যামলের অভিযোগ, শুক্রবার বিকেলে ঘটনার দিন স্কুলে এসে কোনো কথা না শুনেই তাকে ‘চারটি থাপ্পড়’ মারেন।
তিনি বলেন, ‘সেলিম ওসমান আমাকে বাইরে এনে বলেন, শালা কান ধর। ১০ বার কান ধরে উঠবস করবি। আমি কয়েকবার কান ধরে উঠবস করার পরেই পড়ে যাই। পরে আমাকে হাত ধরে উঠানোর পর এমপি বলে, এই শালা মাপ চা। আমি মাপ চাইলে আমাকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।’
সেলিম ওসমান থাপ্পড় মেরেছেন- এ কথা কেন আগে বলেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিদনি বলেন, ‘সেলিম ওসমান পলিটিক্যাল লিডার। তখন আমি ভয়ে বলিনি।’
তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর থেকেই তিনি তাকে ‘বিভিন্ন প্রস্তাব’ দিয়েছেন।
এদিকে শিক্ষককে কানে ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় মন্ত্রী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সেলিম ওসমানের বিচার দাবি করছেন। তবে সেলিম ওসমান শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমি মরে গেলেও ক্ষমা চাইবো না। আমি কার কাছে ক্ষমা চাইব? আল্লাহর কটাক্ষকারীর সাজা হয়েছে।’
বন্দর থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হক বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় উপস্থিত পুলিশদের তাৎক্ষণিক কিছুই করার ছিল না।’
এদিকে শ্যামলকান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনা তদন্তে করতে পুলিশকে অনুমতি দিয়েছে আদালত। এর আগে বন্দর থানা পুলিশ কান ধরে উঠবসের ঘটনাকে ‘মানহানিকর অপরাধ’ বিবেচনায় তদন্তের আবেদন করেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোখলেছুর রহমান।
শিক্ষক শ্যামলকান্তি শুরু থেকেই ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগকে ‘মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করছেন। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে তাকে ‘ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে স্কুলের সেই শিক্ষার্থী রিফাতও গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, প্রধান শিক্ষক শ্যামলকান্তি তাকে মারধর করলেও ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেননি। তার পরিবারও ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি স্কুলে।
খবর- দ্যরিপোর্ট২৪.কম