বজ্রপাতে আজও ২২ জনের প্রাণহানি

সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় বজ্রপাতে আজও ২২জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। আজ শুক্রবার বজ্রপাতে আবারোও উল্লেখযোগ্য প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ১১ জেলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১৮ জন। এর মধ্যে রাজবাড়ীতে ৩ জন, জয়পুরহাটে ২ জন, নওগাঁয় ২ জন, চট্টগ্রামে ১ জন, গাইবান্ধায় ১ জন, ঢাকায় ২ জন, সুনামগঞ্জে ২ জন, টাঙ্গাইলে ২ জন, যশোরে ১ জন, চাঁদপুরে ১ জন ও মাগুরায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
চট্টগ্রাম: সাবেক প্রাথমিক গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমীনের চাচাতো ভাই আমজাদ আলী (৩০) সহ ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত অপরজন হলেন, আনোয়ারা উপজেলার বদলুপুরা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন (১৭)।
পুলিশ জানায়, নিহত আমজাদ আলী সকালে তার দৈনন্দিন কাজে বের হলে বজ্রপাতের শিকার হন। পরে আশপাশের লোকজন তাকে মুমূষু অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিত্সক মৃত ঘোষণা করেন।
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় শুক্রবার দুপুরে বজ্রপাতে ২ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলো- খড়ক গ্রামের আব্দুস সালাম মন্ডলের ছেলে স্কুল পড়ুয়া আনিসুর রহমান (১৪) ও পৌর এলাকার বেতুয়া পৌলশিয়া গ্রামের মোকলেসুর রহমানের মেয়ে লিমা আক্তার (১৪)।
শুক্রবার ঝড় হাওয়ার সাথে সাথে বৃষ্টি হওয়ায় নিহতরা নিজ বাড়িতেই ছিলেন। হঠাৎ প্রকট বজ্রপাতের কারণে নিজ বাড়ির থাকার ঘরেই তারা আহত হন। পরে পরিবারের লোকজন দ্রুত তাদের ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পরে সেখানে থাকা কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করে।
নিহত আনিসুর রহমান (১৪) উপজেলার দড়িপাড়া নিকলা উচ্চ বিদ্যালয় ও লিমা আক্তার (১৪) টেপিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।
জয়পুরহাট: সদর উপজেলার সতীঘাটা ও ক্ষেতলাল উপজেলার হাওয়ার বিল (বিলের ঘাট) এলাকায় জমির পাকা ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতের ঘটনায় রফিকুল ইসলাম (৩৫) ও মানিক হোসেন (৩৮) নামে দরিদ্র ২ ক্ষেত মজুরের মৃত্যু হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে অন্য ক্ষেতমজুরদের সাথে পৃথক জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে এ দুটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
নিহত মানিক হোসেন জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার ঘুগইল গ্রামের আহসানুজ্জামানের ছেলে আর রফিকুল ইসলামের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বর উপজেলার ঢেকেরপার। এদিকে, ক্ষেতলাল উপজেলার হাওয়ার বিল(বিলের ঘাট) নামক মাঠের একটি জমিতে বৃষ্টির মধ্যে পাকা ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মানিক (২৮) নামে এক দরিদ্র ক্ষেতমজুরের(কৃষি শ্রমিক) মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
সাভার: ঢাকার সাভার পৌর এলাকার রেডিওকলোনী মহল্লায় মন্টু হোসেন (১৫) নামে এক কিশোর বজ্রপাতে মারা গেছে। সে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার আমতলি গ্রামের মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে।
এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্টু দুপুরে রেডিওকলোনী বালুর মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলছিল। হঠাৎ বজ্রপাতে সে গুরুতর আহত হয়। তাকে স্থানীয় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
ধামরাই (ঢাকা): ঢাকার ধামরাইয়ে নয়াচর গ্রামে বজ্রপাতে মনির হোসেন নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে মাঠে মায়ের সাথে খড় কুঁড়াতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের বাস্তা নয়াচর গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিমের ছেলে মো. মনির হোসেন (১৯) শুক্রবার দুপুরে আকাশে মেঘ দেখে তার মায়ের সঙ্গে মাঠে খড় কুঁড়াতে যায়। এ সময় বজ্রপাতে মনির ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
রাজবাড়ী: গোয়ালন্দ ও কালুখালীতে বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। কালুখালীর রতনদিয়া ইউনিয়নে বজ্রপাতে ২ কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- রতনদিয়ার বগলপুর গ্রামের মো. জাহিদ সেখ ও হরিণবাড়িয়া গ্রামের বিল্লাল শেখ।
এদিকে, গোয়ালন্দ উপজেলায় শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে কাল বৈশাখী ঝড়ের সময় বজ্রপাতে সোবহান সরদার (৪৫) নামের এক ব্যাক্তি মারা গেছেন। তিনি উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ওমেদ বেপারী পাড়ার মৃত ঝুমুর সরদারের ছেলে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নিখিল চন্দ্র রায় জানান, সোবহান সরদার ঝড়-বৃষ্টির সময় বাড়ীর সামনে পাট ক্ষেতে আগাছা তোলার কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাত হলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে গোয়ালন্দ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফতুল্লা: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বজ্রপাতে বান্টি নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ২ শিশু। ফতুল্লা রেলষ্টেশন এলাকায় শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। নিহত বান্টি(৭) কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী সুজানগর গ্রামের মৃত মইনুদ্দিনের ছেলে। আর আহতরা হলো- শাহজাহান (১২) ও শামীম (১০)। তাদের বাড়িও পাশাপাশি।
নিহত বান্টির মা সুজনা বেগম জানান, বিকেল সাড়ে ৩টায় রেলষ্টেশন এলাকায় বাড়ির পাশে বান্টি, শাহজাহান, শামীমসহ কয়েকজন খেলা করছিল। এমন সময় বজ্রপাতে ওই তিন শিশু মাটিতে শুয়ে পড়ে। এদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই বান্টির মৃত্যু হয়। অন্য দুইজনের মধ্যে শাহজাহানকে শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা ও শামীমকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চাঁদপুর: মেঘনা মোহনায় মালবাহী ট্রলারে বজ্রপাতে এক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার বিকাল ৩টায় মেঘনা নদীর মোহনায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত নবীর হোসেন(২৫) লক্ষ্মীপুর জেলার কমল নগর থানার চরফলকন গ্রামের মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে। এসময় আহত হয়েছেন ওসমান গণি (৫০) ও মোঃ রাকিব (২৪) নামে দুই যুবক।
আহত ওসমান চাঁদপুর সদর উপজেলার তারাবুনিয়া এলাকার মনু মিয়ার ছেলে এবং রাকিব লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজেন্ডার বশির মাঝির ছেলে। ওই ট্রলারে থাকা অপর শ্রমিক টিটু মিয়া জানায়, তারা মালবাহী ট্রলার নিয়ে মেঘনার পশ্চিম পাড়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ বজ্রপাতে ৩ শ্রমিক অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে নবীর হোসেনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক বেলাল হোসেন খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আহত ২ জনের এখনো জ্ঞান ফিরেনি। তাদের চিকিৎসা চলছে।
কিশোরগঞ্জ: তাড়াইল উপজেলার ধলা ইউনিয়নের গজিন্দ্রপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে লাল চাঁন ওরফে এমরান মিয়া (২৮) নামে এক গার্মেন্টসকর্মী নিহত হয়েছেন। নিহত লাল চাঁন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফরপুর ইউনিয়নের গগডা আটকান্দিয়া গ্রামের নূর মিয়ার ছেলে।
গার্মেন্টসকর্মী লাল চাঁন গত বৃহস্পতিবার তাড়াইল উপজেলার ধলা ইউনিয়নের গজিন্দ্রপুর গ্রামে শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে যান। শুক্রবার গজিন্দ্রপুর গ্রামের মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে শ্বশুরের ঘর থেকে বের হয়ে উঠোনে যেতেই হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই লাল চাঁন নিহত হয়।
নওগাঁ: নওগাঁর তিন উপজেলায় বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন আত্রাই উপজেলার বিষা উত্তর গ্রামের বজ্রপাতে জয়নাল উদ্দিন (৬৫), পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের দীঘিপাড়া গ্রামের ইব্রাহীম হোসেন (১৪) ও মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের ধনঞ্জইল গ্রামের শচীন মহুরী (৪৮)। আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাদ্দরুরেজ্জা ও মহাদেবপুর থানার ওসি সাবের রেজা তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সিরাজগঞ্জ: উল্পাপাড়ায় বজ্রপাতে আজ ২ জন মারা গেছে। শুক্রবার সকালে উপজেলার বিনায়েকপুর গ্রামে লুত্ফর রহমান ঝন্টু ও দুপুরে রশিদপুর তারুটিয়া গ্রামের স্কুল ছাত্রী লিজা খাতুন বজ্রপাতে মারা যায়। বৃষ্টির সময় এরা দু'জনই বাইরে কাজ করছিল। এ নিয়ে গত দুদিনে এ উপজেলায় বজ্রপাতে মারা গেল ৪ জন।
গাইবান্ধা: সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের খোদ্দমালিবাড়ী পূর্বপাড়া গ্রামে শুক্রবার সকালে বজ্রপাতে সিরাজুল হক (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত সিরাজুল হক সকালে ঘুম থেকে উঠে জমিতে কাজ করতে যাওয়ার সময় বজ্রপাত ঘটলে ঘনাস্থলেই তিনি মারা যান। সিরাজুল হক ওই গ্রামের মৃত জাফর আলীর ছেলে। ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাদল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মাগুরা: সদর উপজেলার কাপাসহাটী বিকালে বজ্রপাতে তুহিন শেখ (২২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত ব্রাদার আবদুল আজিজ। তুহিন ওই গ্রামের হেলাল উদ্দিন শেখের ছেলে।
হেলাল শেখ জানান, বিকেলে কাপাসহাটি গ্রামের নিজ বাড়ির পাশের রাস্তায় তুহিন বজ্রপাতের শিকার হয়। এ সময় তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা সদও হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্য ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জ: দুপুরে বাড়ির পাশে হাওরে কাজ করার সময় জগন্নাথপুরের কলকলি ইউনিয়নে বজ্রপাতে আমির উদ্দিন (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জগন্নাথপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মুরসালিন।