তনু ইস্যু: বিবেক সারাক্ষন ধিক্কার জানায়

বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা কিছু ঘটছে তারপর আর কোনো কিছু লিখতে ইচ্ছা করে না। মনে হয় সবকিছু গুটিয়ে রেখে বসে থাকি। কারণ যে লেখনী বোনের সম্ভ্রম ও জীবনহানি হওয়ার পরও তাকে সুবিচার পাইয়ে দিতে পারে না সে লেখনী দিয়ে আর কী হবে.!
সম্প্রতি বাংলাদেশে বহুল আলোচিত বিষয় হচ্ছে- “কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু ধর্ষণ ও হত্যাকান্ড”। ভেবেছিলাম এ বিষয়ে নিয়ে লেখালেখি করবো না। কিন্তু আমার বিবেক আমাকে সারাক্ষন ধিক্কার জানাচ্ছে এই বলে যে, তনু তোর বোন ছিল। তুই তোর বোনের সম্ভ্রম রক্ষা করতে তো পারিসই নি, তারপরও তার সুবিচার প্রাপ্তির জন্যও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করিসনি। তাই নিজেকে আজ কোনো বোনের ভাই বলে পরিচয় দিতে নিজের কাছেই দ্বিধাগ্রস্থ লাগে।
নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায় ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ হিমেল মোল্যা এক বিবৃতিতে এসব জানান।
বিবৃতিতে আরও জানান, বিবেকের সাথে যুদ্ধ করতে করতে অবশেষে পরাজিত হয়ে লিখতে বসলাম। ধর্ষণ..!! কী সহজ একটি শব্দ। কিন্তু ধর্ষণের পেছনে যে কত ব্যাথা, কত কষ্ট লুকিয়ে থাকতে পারে সেটা কেউ কখনও ভেবে দেখেনা। বর্তমানে বাংলাদেশে ধর্ষণের পরিমাণ আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে। এর জন্য দায়ী কে বা কারা সে বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণই আমার থেকে বেশি ভালো জানে। তাই আর বিশদ আলোচনা করলাম না। একজন ধর্ষক তো একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেই পগার পার। কিন্তু আমরা কী একবারও ভেবে দেখেছি ওই ধর্ষিতা মেয়েটির ভবিষ্যতের কথা। বাংলাদেশ সরকার ধর্ষণের ব্যাপারে কড়া আইনের ব্যবস্থা করলেও ধর্ষণ কী থেমে আছে? নেই...! কেন নেই সেটা আমরা একবারও খতিয়ে দেখি না। কারণ আইন যেমন আছে তেমনি আইনের ফাঁক-ফোকরও রয়েছে। ক্ষমতাসীনদের ছেলেরা ধর্ষণ করলে নেতারা বিবৃতি দেন, আমার ছেলেরা সামান্য ভুল করেছে। আমি তাদের শুধরে নেব। বড়জোর তাদের থেকে কিছু পরিমাণ মুচলেকা নেওয়া হয় বা শাস্তির রায় শোনানো হয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে আপিল করে অনেক ধর্ষককে বেরিয়ে আসতে দেখার মতো নজির বাংলাদেশে অনেক রয়েছে। কিন্তু যে মেয়েটি এই ভুলের শিকার হয়ে ধর্ষিত হয় তার অবস্থানটা সমাজে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটা আমরা কখনও একটু গভীরভাবে চিন্তা করি না। সম্প্রতি আমার কোন একজন ফেসবুক বন্ধু তার ফেসবুকে ওয়ালে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, ধর্ষিতাকে যদি উন্নত চিকিৎসার জন্য সিংগাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে ধর্ষকের উন্নত বিচারের জন্য কেন সৌদি-আরবে নিয়ে যাওয়া হয় না? স্ট্যাটাসটি থেকে এটিই প্রমাণিত হয় যে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার উপর জনগণের আস্থা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে।
তাঁরা বাংলাদেশে সৌদি-আরবের মতো বিচার ব্যবস্থার কায়েম করতে চাইছেন। এছাড়াও একদিন চায়ের দোকানে চা খেতে গিয়ে শুনি একজন মন্তব্য করছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে হারে ধর্ষণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে যদি দৈনিক ধর্ষণ নামে একটি পত্রিকা বের করা হয় তাহলে তাতে সংবাদের অভাব পড়বে না। এটাই কী বাস্তব কথা নয়...? প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যাচ্ছে কোন না কোন ধর্ষণের সংবাদ তাতে থাকছেই।
এ সকল সংবাদ তো যেটা শুধু জনণের সম্মুখে চলে আসে সেটাই প্রকাশিত হয়। কিন্তু নিরবে নিভৃতে যে ধর্ষণগুলি হচ্ছে তার খোঁজ ক’জন রাখে? বাংলাদেশে ইভটিজিং আইনের ব্যবস্থা থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ সর্বক্ষেত্রে পরিলিক্ষিত হয় না। বখাটেদের অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে অনেক বোনকেই আত্মহননের পথ বেছে নিতে দেখা যায়। কিন্তু বেঁচে থাকতে যে সে ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছিল এটা কেউ অনুধাবন করার চেষ্টাই করতো না।
নারী-পুরুষের সমান অধিকার বিধান রয়েছে বাংলাদেশের সংবিধানে। বর্তমানে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষের সমান অধিকার দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু নারীর নিরাপত্তার ব্যাপারে কয়টি আইন চালু আছে বাংলাদেশে সেটা নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্নের শেষ নেই। শুধু সমান অধিকার দিলেই নারীর প্রতি সহিংসতা কমে যায় না, এর জন্য প্রয়োজন নারীর সঠিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। তনুর প্রসঙ্গে আবারও ফিরে আসলাম। স্বাধীন বাংলাদেশের একজন স্বাধীন নাগরিক ছিল আমার বোন সোহাগী জাহান তনু। সেও চেয়েছিল সমাজের আর ৫/১০ টা মেয়ের মতো স্বাধীনভাবে বাঁচতে। কিন্তু মানুষের মুখোশধারী কিছু নরপিশাচের লালসার শিকার হয়ে তাঁকে অকালে চলে যেত হলো সকলকে ছেড়ে। সবথেকে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে সেনানিবাসের মতো সংরক্ষিত এলাকায় যদি এ ধরনের ঘৃণ্যতম কার্যক্রম সংগঠিত হয়, তাহলে সাধারণ জনগণ নিরাপত্তা পাবে কোথায়?
বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনগণের মধ্যে আমি একজন সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া তনু ধর্ষণ ও হত্যাকান্ড আমাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। যার দরুণ কিছুটা কথা লিখলাম। সবার মতো আমারও প্রত্যাশা একটাই “তনু হত্যার বিচার চাই”। কিন্তু সংশয়ে থাকি এই ভেবে যে, “তনু হত্যার বিচার হবে তো....!! বিবৃতিতে জানান হয়েছে।