নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা

‘ভোট কেন্দ্রের বাইরের খুনের দায় নির্বাচন কমিশন নেবে না। যারা ভোট করছেন, নির্বাচিত হচ্ছেন, এ দায় তাদেরকেই নিতে হবে।’ নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজের এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে এনিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, দুই দফা নির্বাচনে ২৪জন মানুষ নিহত হয়েছেন। এর দায় নির্বাচন কমিশন নেবে না তা কি করে হয়। তাহলে নির্বাচনী আচরণ বিধি কার জন্য? ভোট কেন্দ্রের ভেতরেই কি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব? যেখানে সাধারণ মানুষ কেন্দ্রে ভোট দিতে যেতে পারেন না। সেখানে কি নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার নেই? না কী কোনো আঁতাতের নির্বাচন করছি আমরা? শুধুমাত্র জনগণের আইওয়াশ করার জন্যই কী ইউপি নির্বাচন।
বিএনপি নেতারা আরো বলছেন, এই নির্বাচন কমিশনের অধীন কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হতে পারে না বিএনপি আগেও বলেছে এখনও বলছে। তারা সরকার দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে। যেখানে প্রশাসনের কর্মকর্তারাই কেন্দ্র দখল করে ব্যাটবক্স ভর্তি সিল মারছে সেখানে তাদের এসব বক্তব্য আর কি আসে যায়। নির্বাচন কমিশনের এই ধরনের বক্তব্য নির্বাচনী আচরণ বিধিতে আছে কি না তা আর বলার দরকার নাই। তারা যেমন খুশি তেমন আচরণ করছেন। ঠিক যেমন বর্তমান সরকার করছেন।
স্বতন্ত্র একাধিক প্রার্থী বিষয়টিকে একপেশে বক্তব্য বলে মনে করেন। তারা বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আয়োজন করেন। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশন ব্যাপক ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন। তারা নির্বাচনী এলাকার যেকোনো কর্মকর্তাকে পর্যন্ত বদলি করতে পারেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। সেখানে নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্য শিশু সুলভ আচরণ ছাড়া কিছুই নয়।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোর একটি। সেখানে এই নির্বাচনে জনগণের সম্পৃক্ততাহীন করা বা নির্বাচনে কাউকে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে বা নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধাদান দণ্ডনীয় অপরাধ।তবে মামলা মকদ্দমার বিষয়টি বাদ দিলে পুরো নির্বাচনী এলাকাগুলো তো নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার মধ্যেই আছে। অযথা নির্বাচন কমিশন নিজেদের দায়িত্ব অন্যের কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছেন কেন তা বোধগম্য নয়। এটা কি তাদের প্রশাসনিক দুর্বলতার অংশ কী না ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। সেই সাথে তড়িৎ ভাবে এর সমাধান করাও প্রয়োজন।
রোববার দুপুরে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আচরণবিধি ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ বলেছেন, ‘ভোট কেন্দ্রের বাইরের খুনের দায় নির্বাচন কমিশন নেবে না। যারা ভোট করছেন, নির্বাচিত হচ্ছেন, এ দায় তাদেরকেই নিতে হবে। কারণ, দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি করে তারাই খুনোখুনিতে জড়াচ্ছেন। এসব ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, ‘এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হস্তে তা দমনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, রাজনৈতিক দলগুলোই পরবর্তী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিজেদের মধ্যে দাঙা-হাঙ্গামায় জড়াবে না। নির্বাচনী পরিবেশ উত্তপ্ত হয়, এমন কোনো মন্তব্য করবে না। কারণ, তারা কিছু আজগুবি কথাবার্তা বলায় নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হয়।’
সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলযুক্ত ইউনিয়ন পরিষদগুলোর নির্বাচন কবে হবে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সমাপ্তের পরই এসব ইউনিয়ন পরিষদে স্থগিত হওয়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফজলুল করীম, পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলাম, পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর কুতুবুল আলম, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান, আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ও বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।