English Version
আপডেট : ১৯ মার্চ, ২০১৬ ১৩:৫৬

‘রাবিশ-খবিস’ সহ নানা অতিকথনে অর্থমন্ত্রীর প্রতি ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
‘রাবিশ-খবিস’ সহ নানা অতিকথনে অর্থমন্ত্রীর প্রতি ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী ‘বাড়াবাড়ি’ রকমের আচরণ করছেন বলে মন্তব্য করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা অর্থমন্ত্রীর অতিকথনের জন্য সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাদের বক্তব্য সমর্থন করেন। তিনি বলেন, একজন সিনিয়র মন্ত্রী হয়ে এভাবে তার কথা বলা ঠিক হয়নি। চিন্তা-ভাবনা করে কথা বলা উচিত ছিল। বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

শুক্রবার একটি জাতীয় দৈনিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। এতে সরকারের উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদায়ী গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমানের সাক্ষাৎ ও পদত্যাগপত্র প্রদান, এই সাক্ষাৎ ও পদত্যাগপত্র প্রদানের এখতিয়ার, পাচার হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থের বিষয়ে মন্তব্য এবং এ ঘটনার সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ করেন অর্থমন্ত্রী। এমনকি তিনি সমালোচনা করেন প্রয়াত সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর। হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী ‘বেশি কথা বলতেন’ এমন ইঙ্গিত করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এনবিআর চেয়ারম্যানের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি প্রয়াত সাবেক স্পিকারকে কটাক্ষ করেন।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, আবুল মাল আবদুল মুহিতের সংবাদপত্রে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। উপস্থিত অন্য নেতারাও তার সঙ্গে একমত পোষণ করে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেন। সাক্ষাৎকারের বক্তব্য ছাড়াও তার (আবুল মাল আবদুল মুহিত) আলোচিত মন্তব্য ‘রাবিশ-খবিস’ শব্দ ব্যবহার, ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকা অতিকথন এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি হওয়ার পর বিদায়ী গভর্নর ড. আতিউর রহমানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য-বিবৃতি প্রদানকে বাড়াবাড়ি রকমের আচরণ বলে উল্লেখ করেন শাসক দল আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা সিনিয়র এই মন্ত্রীর লাগামহীন বক্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেন। যাতে ভবিষ্যতে কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার/ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বোর্ডের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, মাহবুবউল আলম হানিফ, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়ন বোর্ড তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় ৬৮৫ ইউনিয়নের অধিকাংশ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করে। তবে ৬৭টি ইউনিয়নের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাতে বলেন, আজ বিকালে তৃতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ যুগান্তরকে বলেন, তারা প্রার্থী মনোনয়ন শেষ করে এনেছেন। প্রায় ৬০টির মতো বাকি রয়েছে, শিগগির তা চূড়ান্ত করা হবে।

সূত্র জানিয়েছে, মনোনয়ন বোর্ডের এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠান নিয়েও কথা হয়। সে ক্ষেত্রে এ বছর জুলাই নাকি সেপ্টেম্বর কোন মাসে সম্মেলন করা যায়, সে নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন নেতারা। তবে সেপ্টেম্বর মাসকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। আগামীকাল অনুষ্ঠেয় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার পর তা চূড়ান্ত করার বিষয়ে মত দেন নেতারা।