বাংলাদেশ-ভারত আসছে বিদ্যুৎ যাচ্ছে ইন্টারনেট

ভারত থেকে আসছে বিদ্যুৎ, বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ। আগামী ২৩ মার্চ দুদেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে অবস্থানরত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় সংযুক্ত হবেন।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ত্রিপুরা রাজ্যের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেবে ভারত। বিনিময়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সাবমেরিন ক্যাবল থেকে কেনা ব্যবহারের অতিরিক্ত ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করবে। তবে দুটি বিষয়েরই আদান-প্রদান হবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে।
ভারত বিনা মাসুলে বাংলাদেশের কাছ থেকে ট্রানজিট-সুবিধা নিয়ে ত্রিপুরায় ৭৭৬ মেগাওয়াট মতার একটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে। এ সহযোগিতার বিপরীতে ওই কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ত্রিপুরার রাজ্য সরকার। পরে কেন্দ্রীয় সরকারও অনুমোদন দেয়। ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য কুমিল্লা থেকে ত্রিপুরা অংশে মোট ৫৪ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে উভয় দেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ২৮ কিলোমিটার এবং ভারত অংশে ২৬ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন এ গ্রিড লাইনটি ত্রিপুরার সুরজমনিনগর থেকে বাংলাদেশের কুমিল্লাকে সংযুক্ত করেছে। সরকারের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ত্রিপুরার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর আসার কথা থাকলেও বিদ্যুৎ ক্রয়-চুক্তি ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ না হওয়ায় আসেনি। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়-চুক্তি করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন এর ভারপ্রাপ্ত সচিব মাজহারুল হক এবং ভারতের বিদ্যুৎ ভ্যাপার নিগমের (এনভিভিএন) পক্ষে স্বাক্ষর করেন সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী (সিইও) নন্দ কিশোর শর্মা।
এর আগে, গত জানুয়ারিতে ত্রিপুরার বিদ্যুৎমন্ত্রী বাংলাদেশে সফরকালে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করে দুদেশ চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ আমদানিতে খরচ পড়বে ছয় টাকা ৪৩ পয়সা। ত্রিপুরা তাদের পালাটানা গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পেমেন্ট অর্থাৎ কেবলমাত্র বাংলাদেশ বিদ্যুৎ নিলেই মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হবে না। প্রসঙ্গত এর আগে ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর ভারত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়। ভারত থেকে এখন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।
এদিকে গত বছর দুদেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির প্রেক্ষিতে ভারতে ব্যান্ডউইডথ রপ্তানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের বর্তমানে ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ রয়েছে। এর মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে প্রয়োজন ১৪০ জিবিপিএস। অবশিষ্ট জিবিপিএসের মধ্যে ১০ জিবিপিএস এ চুক্তির মাধ্যমে ভারতে রপ্তানি করা হবে। তবে ভারতের চাহিদার প্রেক্ষিতে সেটা ৫০ জিবিপিএস পর্যন্ত হতে পারে।
এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ বার্ষিক প্রায় ৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা আয় হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উদ্যোগে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড-বিএসসিসিএল ও ভারত সঞ্চার নিগাম লিমিটেড-বিএসএনএল এ চুক্তি বাস্তবায়ন করে।
কক্সবাজার-বি.বাড়িয়ার আখাউড়া হয়ে ভারতের আগরতলায় সাবমেরিন কেবলটি গিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশটির পূর্ব দিকের সাতটি রাজ্য বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা পাবে।